সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সোমবার সকালে প্রয়াত হয়েছেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদব। তুখোড় রাজনীতিবিদ হিসাবে সকলের কাছে পরিচিত তিনি। কিন্তু প্রথম জীবনে রাজনীতির প্রতি সেভাবে টান ছিল না মুলায়মের (Mulayam Singh Yadav)। বরং তাঁর মন ছিল কুস্তির দিকে। নিয়মিত আখড়ায় গিয়ে কুস্তি লড়তেন। কুস্তির প্যাঁচে ধরাশায়ী করতেন প্রতিপক্ষকে।
দরিদ্র পরিবার থেকেই উঠে এসেছিলেন মুলায়ম। পড়াশোনার পাশাপাশি কুস্তিতেও সমান পারদর্শী ছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে রাজনীতির ময়দানে আসার পরেও কুস্তির প্যাঁচ ভুলে যাননি তিনি। বরং বিভিন্ন সময়ে তিনি রাজনীতির ময়দানে যেভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেখানেও তাঁর ধুরন্ধর বুদ্ধির ছাপ পড়েছে। অনেকেই বলে থাকেন, কুস্তির আখড়ার প্যাঁচ পয়জার অন্যভাবে প্রয়োগ করেছিলেন রাজনীতির ময়দানে। জনশ্রুতি বলে, কুস্তির আখড়ায় ‘চরকা দাও’ দিতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন মুলায়ম (Mulayam Singh Yadav Death)। এই প্যাঁচে প্রতিপক্ষকে তুলে, শূন্যে ঘুরিয়ে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। মুলায়মও রাজনীতির ময়দানে এভাবেই প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতেন।
[আরও পড়ুন: কাশ্মীরে রাতভর গুলির লড়াই, অনন্তনাগে নিকেশ ২ জঙ্গি]
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন মুলায়ম। একাধিক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। মনে করা হয়, কুস্তির প্যাঁচ আর রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞান, দুটোকে মিলিয়েই রাজনৈতিক জীবনে সাফল্য পেয়েছেন মুলায়ম। ১৯৯৬ সালে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়েছিলেন মুলায়ম। তারপরেই জাতীয় রাজনীতিতে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন তিনি। রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন সময়ে নেওয়া মুলায়মের সিদ্ধান্তে লাভবান হয়েছে তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার।
অনগ্রসর সম্প্রদায়ের কথা মাথায় রেখেই নিজের রাজনৈতিক কেরিয়ার গড়েছিলেন মুলায়ম। উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে উচ্চবর্ণের দাপটের মোকাবিলা করতে সংখ্যালঘু ও অনগ্রসর শ্রেণির মানুষকেই নিজের ভোটব্যাংক করেছিলেন তিনি। তাঁর হাতে তৈরি সমাজবাদী পার্টিও সেই আদর্শ মেনে চলে। দলের কথা ভেবে ছেলে অখিলেশ যাদবকেও বহিষ্কার করেছিলেন তিনি।
পরবর্তীকালে অবশ্য বাবা-ছেলের মধ্যে সমস্যা মিটে যায়। দলের নেতৃত্ব ফিরে পান অখিলেশ। সমাজবাদী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হয়েও দলের নড়বড়ে অবস্থা জীবদ্দশায় দেখে যেতে হয়েছে মুলায়মকে। শেষ বয়সে এসে দলের পরিস্থিতি তাঁকে যে পীড়া দিয়েছিল, তা বললেও অত্যুক্তি করা হবে না। একসময়ে নিজে কুস্তি লড়েছেন আবার রাজনীতির ময়দানে পা রেখে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার শিক্ষা তিনি পেয়েছিলেন কুস্তির আখড়াতেই। জীবনের দুই ময়দানকে এভাবে এক করে দিতে ক’ জনই বা পেরেছেন!