সংবাদ প্রতিদিন-এর জন্য বিশেষ আইপিএল কলম লিখছেন গৌতম গম্ভীর৷ কেকেআর অধিনায়কের এখনও মনে হচ্ছে, নাইটদের মধ্যে একমাত্র তিনিই ওয়ার্নারের সেই বিধবংসী ইনিংসের হ্যাং-ওভার কাটিয়ে উঠতে পারছেন না৷ যদিও রবিবার হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলেই মেয়ে আজিনের জন্মদিনের জন্য দিল্লি ফিরে গিয়েছিলেন গৌতি৷ তবে বাড়ি গেলেও সেখানে তাড়া করেছে ওয়ার্নারের সেঞ্চুরির স্মৃতি। সেই সঙ্গে মেয়ের কাছেও এমন কিছু শুনলেন যা ভাগ না করে থাকতে পারলেন না কেকেআর ক্যাপ্টেন। এর মধ্যে বুধবার ইডেনে পুণের বিরুদ্ধে ম্যাচ। গম্ভীর এখনও মনে করছেন কেকেআর নিজের সেরা খেলাটা খেলতে পারছে না৷ পুণে ম্যাচেই তাই নিজেদের সেরাটা দিতে চাইছে নাইট শিবির।
সোমবার প্রথম ফ্লাইটে দিল্লি রওনা হলাম৷ মগজভর্তি চিন্তা নিয়ে সকালের ফ্লাইটে চড়েছিলাম৷ জিরিয়ে নেওয়ার ইচ্ছে ছিল৷ কিন্তু সিটে গা হেলাতেই চিন্তা-ভাবনাগুলো জড়িয়ে ধরতে শুরু করল৷ আচ্ছা, আমাদের বোলিং ইউনিট তো খারাপ নয়৷ ফিল্ডিং ইউনিটের প্রসঙ্গ উঠলেও আমরা লাস্ট বয় নই৷ তা হলে ওয়ার্নার কী করে এভাবে ছিনিমিনি করল আমাদের নিয়ে? ও আমাদের কাট করল, সুইপ খেলল, স্কুপ মারল, এক কথায় আমাদের নাস্তানাবুদ করে দিল৷ কঠিন থেকে কঠিনতর শটগুলো এত সহজে খেলে গেল৷ কী করে? ভাবতে ভাবতে দিল্লিতে ল্যান্ড করলাম৷ সময় টের পেলাম না৷
[নগদ টাকায় আর দেওয়া যাবে না বিদ্যুতের বিল!]
বাড়ি সবসময় আমার কাছে শান্তির পীঠস্থান৷ ওখানে কখনও কেউ আমাকে স্লেজ করে না৷ অন্তত এতদিন সেটা ভাবতাম৷ কিন্তু সোমবার গেট পেরিয়ে বাড়িতে ঢোকামাত্র ‘টিভি পাপা নাক খুটছে..টিভি পাপা নাক খুটছে’ কথাগুলো স্লেজের মতো শোনাল৷ আমার মেয়ের ব্যাকরণে খুঁত ধরতে যাবেন না৷ প্রথমে আমিও বুঝতে পারছিলাম না, ও কী বলতে চাইছে! এর পর আমার স্ত্রী নাতাশা কেকেআর-সানরাইজার্স ম্যাচের রেকর্ডিং চালিয়ে দিল৷ বুঝলাম, ৩৫ বছরের এই আমি, গৌতম গম্ভীর, যে কি না ভারতীয় দলের একসময়কার অধিনায়ক, দু’টি বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য, দু’বারের আইপিএল খেতাব জয়ী নাইট অধিনায়ক এবং সর্বোপরি মডার্ন স্কুল ও হিন্দু কলেজ পাস-আউট নাক খুঁটতে গিয়ে ক্যামেরায় ধরা পড়েছি৷ লজ্জায় আমার সেই নাককাটা পড়ার মতো অবস্থা হয়েছিল এটা ভেবে যে, নিজের তিন বছরের বাচ্চা মেয়েকে বারবার আমি নাক খোঁটার জন্য বকা দিয়েছি৷ সেই আমি কি না….৷
[খাইয়েছিলেন অমিত শাহকে, এবার তৃণমূলে যোগ মাহালি দম্পতির]
যাক, গৃহে শান্তি ফিরল সন্ধের দিকে৷ আমিও ধীরে ধীরে ওয়ার্নার-পর্ব ভুলতে শুরু করলাম৷ মেয়ের জন্মদিন। বাড়ি ভর্তি লোক। আত্মীয়েরা একের পর এক আসতে শুরু করলেন৷ গিফট ব়্যাপের চকমকি, চকোলেট, পেস্ট্রির ম ম করা গন্ধে ততক্ষণে সবার পার্টি-মুড৷ ইতিমধ্যে আমার শ্যালক একাংস ও স্ত্রী-কে নিয়ে হাজির৷ আজিন ছুটে গেল মামা তার জন্য কী গিফট এনেছে দেখার জন্য৷ দু’পক্ষের মধ্যে শুরুতেই চুমুর লেনদেন হয়ে গেল৷ তারপর গিফট চলে গেল আজিনের হাতে৷ সে ছোট ছোট হাত দিয়ে মোড়ক খুলতে ব্যস্ত৷ আমি ও নাতাশা পাশে দাঁড়িয়ে আন্দাজ করার প্রতিযোগিতা শুরু করলাম৷ কিন্তু জানেন, ওই গিফট ব়্যাপের ভিতর থেকে কী বেরিয়ে এল? একটা ঝকঝকে নিওন অরেঞ্জ রঙা মিনি গ্রে নিকোল ক্রিকেট ব্যাট৷ যার ব্যাক সাইডে ‘কাবুম’ প্লাস্টার করা৷ ঠিক এই ব্র্যান্ডের ব্যাটে খেলে ডেভিড ওয়ার্নার৷ কেউ যেন ধাক্কা মেরে আমাকে আবার বাস্তবের শক্ত মেঝেতে ফেলে দিল৷ ফের একবার মস্তিষ্কের মধ্যে চলে এল ওয়ার্নার।
[ফের বিনা প্ররোচনায় সীমান্তের ওপার থেকে গুলি চালাল পাক সেনা]
কলকাতায় ফিরেছি৷ বুধবার পুণে সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে খেলব আমরা৷ কেকেআর ভাল জায়গায় রয়েছে৷ আমরা দশটার মধ্যে সাতটা ম্যাচ জিতেছি৷ তবে আমি হয়তো প্রথমজন যে এখনও বলব, কেকেআর নিজের সেরা খেলাটা খেলতে পারছে না৷ এখনও একটা ম্যাচেও আমরা ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে নিজেদের প্রতিভার সুবিচার করতে পারিনি৷ পুণে ম্যাচ খেলে উঠে আর এই আক্ষেপটা রাখতে চাই না৷ সোমবার, বেন স্টোকস কামাল করল৷ ওর উপর যে পরিমাণ বিনিয়োগ হয়েছে তার কিছুটা ও ফিরিয়ে দিল বটে৷ বিপক্ষ হলেও বলতে হবে, কোয়ালিটি সেঞ্চুরি৷আমাদের দলে এখন আর কেউ ওয়ার্নারকে নিয়ে কথা বলছে না৷ হয়তো এই অজিকে নিয়ে আমি একটু বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েছি৷ যাই হোক, পুণের বিরুদ্ধে নিজেদের ‘এ’ গেম খেলতে হবে৷ না হলে তিন বছর বয়সি একজনকে এবার ক্লাসে শুনতে হবে, তোমার বাবা মাঠে নাক খোঁটে৷
[আজানে লাউডস্পিকার বাধ্যতামূলক নয়, মত আদালতের]
The post জানেন, নিজের মেয়ের কাছে কী কথা শুনতে হল কেকেআর অধিনায়ককে? appeared first on Sangbad Pratidin.