সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধে সিঁদুরে মেঘ দেখছে গোটা বিশ্ব। গাজা ভূখণ্ডে ইজরায়েলি ফৌজের লাগাতার অভিযানে সংঘাতের আগুন বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ক্রমে জোরাল হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে শুক্রবার ভারত ও আমেরিকার মধ্যে পঞ্চম দফার ‘টু প্লাস টু’ বৈঠক হয় দিল্লিতে। আলোচনায় উঠে আসে প্যালেস্টাইন সমস্যা ও আরব-ইহুদি দ্বন্দ্বের সুদূর প্রসারী প্রভাবের কথাও।
এদিন রাজধানীতে আমেরিকার বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিনের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনায় অংশ নেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনায় উঠে আসে প্যালেস্টাইন সমস্যা ও আরব-ইহুদি দ্বন্দ্বের সুদূর প্রসারী প্রভাবের কথাও। বিদেশ সচিব বিনয়মোহন কোয়াত্রা জানান, ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাত মেটাতে দ্বি-রাষ্ট্র তত্ত্বেই জোর দিয়েছে দিল্লি। অন্যদিকে, যৌথ বিবৃতিতে ইজরায়েলের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে দুই দেশ। হামাসের হাতে পণবন্দিদের মুক্তির দাবিও জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, গাজা ভূখণ্ডে আন্তর্জাতিক আইন মেনে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া এবং সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপরও জোর দিয়েছে ওয়াশিংটন ও দিল্লি।
[আরও পড়ুন: কার হাতে থাকবে গাজা? ইজরায়েলকে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা ‘বন্ধু’ আমেরিকার]
বিশ্লেষকদের মতে, আরব-ইহুদি সংঘাতে ভারতের জন্য অত্যন্ত জটিল সমীকরণ তৈরি হয়েছে। একদিকে ‘বন্ধু’ ইজরায়েল অন্যদিকে ‘সহযোগী’ ইরান-সহ গোটা মুসলিম বিশ্ব। কাউকেই দূরে ঠেলে দিতে চাইছে না দিল্লি। ফলে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েও দ্বি-রাষ্ট্র তত্ত্বেই জোর দিয়েছে মোদি সরকার। এই পন্থাতেই ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইন সংঘাত স্থায়ীভাবে মেটাতে হবে বলে মনে করে ভারত।
কী এই দ্বি-রাষ্ট্র?
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফেরাতে প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র গড়ার দাবি দীর্ঘদিনের। ইজরায়েলের সঙ্গে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের বিষয়টি নিয়ে আলোচনায়ও হয়েছে অতীতে। এরই মধ্যে উপসাগরীয় কয়েকটি দেশ ইজরায়েলের সঙ্গে কূটনেতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। একই পথ অনুসরণ করতে যাচ্ছে মুসলিম বিশ্বের প্রধান চালিকাশক্তি সৌদি আরব। এক্ষেত্রে বরাবরের মতো মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
বলে রাখা ভালো, ১৯৪৭ সালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভা প্যালেস্তাইনের জন্য বিভাজন পরিকল্পনা গ্রহণ করে যা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে পূর্ণরাষ্ট্রের মর্যাদা পায়নি প্যালেস্টাইন। ২০১৭ সালে হামাস ১৯৬৭ সালের ভৌগলিক সীমানার মধ্যে একটি প্যালেস্তিনীয় রাষ্ট্র গঠনের লড়াই শুরু করে। কিন্তু সেখানে ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। একই ভাবে, পৃথক প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র গড়ায় প্রবল আপত্তি রয়েছে জায়নবাদীদের।
এদিকে, চিনকে নজরে রেখে ভারত-আমেরিকা আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলের সমস্যা। জি-২০ সম্মলনের সময়েই ঠিক হয়ে যায় শীঘ্রই টু প্লাস টু অর্থাৎ দুই দেশের মন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ের দুই প্রতিনিধি বৈঠক করবেন। সেই মতোই ভারতে এসে পৌঁছন মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন। বৈঠকের পর ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, টু প্লাস টু বৈঠক দুই দেশের মাঝে নিশ্চিতভাবেই সম্পর্ককে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ। তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক শান্তি ও সৌহার্দ্য এবং নিরাপত্তা বজায় রাখতে আমরা যৌথভাবেই বদ্ধপরিকর। ভবিষ্যতের দিকে চোখ রেখে কাজ করতে দুই দেশই প্রস্তুত। পারস্পরিক সহযোগিতার সেই কাজের ভিত্তি স্থাপন করে।”
ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেও দুই দেশ যে সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করবে সে কথাও জানান মার্কিন বিদেশসচিব। গত জুনে হোয়াইট হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আলোচনায় বসেছিলেন, তখনও যে তাঁরা দুই দেশের মজবুত সুসম্পর্কের উপর জোর দিয়েছিলেন এদিন সে কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি। ব্লিঙ্কেনের কথাতেই সায় দেন ভারতের বিদেশমন্ত্রীও। জয়শংকরও জানান, ভারত নিরাপত্তার উপরেই সর্বতোভাবে জোর দিতে অত্যন্ত আগ্রহী। তিনি বলেন, “টু প্লাস টু বৈঠকে একই সঙ্গে গুরুত্ব পাচ্ছে নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পদের জোগান এবং শিল্পবাণিজ্য।”
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, গুপ্তচর সূত্রে পাওয়া তথ্য বিনিময় পারস্পরিক সহযোগিতার উপর জোর দিতে হবে। অস্টিনের ভারত সফর যে দুই দেশের সম্পর্ককে সুদৃঢ় করবে তাও জোর দিয়ে বলেন রাজনাথ।