অভিরূপ দাস: মোবাইল যেন বাজারের ব্যাগ। তাতে সব এঁটে যায়। দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ হর্ষ। ভালো মুহূর্তরাও। মোবাইলে পয়লা বৈশাখে প্রিয় লেখককে বাড়িতেও নিয়ে আসা যায়! নববর্ষে কলেজস্ট্রিট বইপাড়ায় গুচ্ছের নতুন বই প্রকাশ। পাটভাঙা পাতায় মন কেমন করা গন্ধ। দুই মলাটের বাইরে পাঠক-লেখকের মুখোমুখি হওয়ার দিন। এই সেদিনও অটোগ্রাফের আবদার করতেন পাঠকরা। এখন আর বইয়ের ওপর সই নয়। বই সংগ্রহ করে পাঠকের ইচ্ছে, ‘‘একটা সেলফি তুলব প্লিজ।’’ বায়না মেটান লেখক।
রবিবার ঘড়ির কাঁটায় বিকেল চারটে। পিলপিল করে একঝাঁক পাঠক ঢুকে পড়েন দেজ পাবলিশিংয়ের অফিসে। আবহাওয়ার খবর বলছে, তাপমাত্রা ৩৭ ছুঁইছুঁই! এই গরমে পাঠক আসছে? দেজ প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার সুধাংশু শেখর দে জানিয়েছেন, বই কিনলে বিশেষ ছাড় মেলে। পয়লা বৈশাখে তাই পাঠকদের ভিড় লেগেই থাকে। লেখকরাও যে আসেন। একসময় আসতেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, দিব্যেন্দু পালিতরা। এখন সে জায়গায় কিন্নর রায়, চন্দ্রিল ভট্টাচার্য্য, নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ি, যশোধরা রায়চৌধুরী।
[আরও পড়ুন: ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধে শেয়ার বাজারে বিরাট ধস, ৮ লক্ষ কোটি লোকসানের মুখে লগ্নিকারীরা!]
বইপাড়ার পুরনো সেই নিয়ম-আচার বদলায়নি। গল্প-আড্ডা-জমায়েতের চরিত্রগুলো যা বদলে গিয়েছে। স্মৃতি বয়ে নিয়ে চলেছে প্রকাশনা অফিসের ‘জাবদা খাতা’। রীতি অনুযায়ী এ খাতায় শুভেচ্ছা জানিয়ে যান লেখক-সাহিত্যিকরা। ১৪৩১-এ দেজ-এর জন্য নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ীর মনোকামনা ‘‘আরও একশো বছর একসঙ্গে বাঁচব।’’ কিন্নর রায়ের শুভেচ্ছা, ‘‘পঞ্চাশ বছরের সম্পর্ক। ভালো থাকুক থাকুক।’’ তিনদশক আগে এ খাতাতেই লিখে গিয়েছেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।
[আরও পড়ুন: যুবতী শিক্ষিকার যৌন লালসার শিকার নাবালক ছাত্র, গাড়ির ব্যাকসিটেই সঙ্গম!]
বইয়ের টানে দূর মফস্বল থেকেও ১লা বৈশাখে বই-পাড়ায় ভিড় জমান পাঠকরা। কি ধরণের বই প্রকাশ হচ্ছে? পত্রভারতীর কর্ণধার ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বইয়ের চরিত্র কিছু বদলে গিয়েছে। আজ থেকে তিন’দশক আগে পয়লা বৈশাখে যে ধরণের বই প্রকাশ হতো। এখন আর তা হয় না। সেগুলোর বেশিরভাগই হয় বইমেলায়। সেই হিসেবে পয়লা বৈশাখের কলেজ স্ট্রিটে দুঁদে পাঠকদের ভিড়ই বেশি। হুট করে তারা কেনেন না। রীতিমতো জরিপ করে তবেই সংগ্রহ করেন। ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘পয়লা বৈশাখে পাঠক কলেজস্ট্রিটে এলেই যে বই কেনে তেমনটা নয়। অনেক পছন্দ করে তবেই সংগ্রহ করে।’’ শুধু তো সাহিত্যিকদের দল নয়, বদলে গিয়েছে আড্ডার অবয়বও। ডাবের জলের জায়গা নিয়েছে শীতল পানীয়। রসগোল্লায় জায়গায় ড্রাই ফ্রুটস। এরই মধ্যে কেউ কেউ ফিরিয়ে আনতে চান নস্টালজিয়া। দেজের অফিসে এবার আলুকাবলির আয়োজন। ‘‘বাঙালি পাঠক আলুকাবলিকে কি করে ভুলবে? যতোই সে আধুনিক হোক।’’ মুচকি হাসেন অপু। বাংলা নববর্ষে বই কিনলে উপরি পাওনা মিষ্টির বাক্স। তা মুখে পুড়ে হাঁটা লাগান শ্যামবাজারের নবারুন দত্ত। ‘‘আজ যেমন সারা বছর তেমন।’’