নব্যেন্দু হাজরা: মাংস ২৪০, আদা-রসুন দুই-ই ৩০০ টাকা কেজি। পরিস্থিতি যা তাতে, দামের ঠ্যালায় মাংস খাওয়া ছাড়তে বসেছে নিম্ন-মধ্যবিত্ত। যে ঘরে মাংস ঢুকছে, সেখানেও অনেকেই আদা-পিঁয়াজ-রসুন ছাড়াই রান্না করছেন। তবে শুধু তো আর মাংস নয়, মাছ-ডিম-সহ অন্যান্য রান্নাতেও ভিনরাজ্যের এই দুই আনাজের ব্যবহার করা হয়। এবার সেখানেও আদা-রসুন কম খাচ্ছেন ‘আম গেরস্থ’।
বাজারভেদে আদা বিকোচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। গত কয়েক মাস ধরেই এই দাম চলছে। আর দামের গুঁতোয় আদার বদলে রান্নায় রসুনের ব্যবহার বেড়েছিল হেঁশেলে। চাহিদা বাড়ায় তাই স্বাভাবিকভাবেই রসুনের দামও চড়েছে। এবং কোনও কোনও বাজারে তাও ট্রিপল সেঞ্চুরি পার করেছে।
ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, মণিপুরে অশান্তির আঁচ এখনও চলছে খোলা বাজারে। এই রাজ্যে আসা আদার একটা বড় অংশ আসে উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে। কিন্তু বিগত বেশ কয়েকমাস ধরে মণিপুরে চলতে থাকা অশান্তির জেরে উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে পণ্য পরিবহণ ব্যাহত হয়েছে৷ ফলে কমেছে আদার জোগান। আবার দক্ষিণ ভারতের চেন্নাই থেকে যে আদা আসে, তার ফলনও এ বছর কম হয়েছে। এই জোড়া কারণেই আদার দাম পাইকারি বাজারে প্রায় দুশো টাকা ছাড়িয়েছে। খুচরো বাজারে সেই আদাই কেজি প্রতি ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: ‘সাবধান! শহরে নতুন ভ্যাম্পায়ার’, রাজ্যপালের হুঁশিয়ারির পালটা কটাক্ষ শিক্ষামন্ত্রীর]
মূলত আসাম, মিজোরাম, মনিপুর এবং মেঘালয় থেকে চাহিদার ৬০ শতাংশ আদা এ রাজ্যে আসে। আর বাকি ৪০ শতাংশ আসে দক্ষিণ ভারত থেকে। আর কিছু হয় এই রাজ্যে। অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত আদা হয় উত্তরবঙ্গে। কিন্তু অনাবৃষ্টির কারণে এবছর দক্ষিণ ভারতের আদাও আসছে অনেক কম। সেই আদা বড় হয়নি। এক ব্যবসায়ীর কথায়, এক পাঞ্জা আদায় আগে ৫০০ গ্রাম থাকতো। এখন তা কমে ৩৫০ গ্রাম হয়েছে। মানে এক কেজি আদায় কমে গিয়েছে ৩০০ গ্রাম। স্বাভাবিক নিয়মেই তাই দাম তো বাড়বেই।
পাইকারী বাজারেই আদা বিকোচ্ছে ২৩০-২৫০টাকা প্রতি কেজি হিসাবে। বাজারভেদে তার দামই উঠছে তিনশো টাকায়। এদিকে গত কয়েক মাস ধরে আদা ছেড়ে লোকের রসুন কেনা বেড়েছে। স্বাভাবিক নিয়মেই রসুনের জোগানেও টান পড়েছে। তাছাড়া মহারাষ্ট্রে অতিবৃষ্টিতে রসুনের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। পিঁয়াজ নিয়ে কালোবাজারি শুরু হয়েছে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
তাঁদের বক্তব্য, পাইকারী কোলে মার্কেটে ভালো পিঁয়াজ ২৫-৩০ টাকা প্রতি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অথচ খুচরো বাজারে তার দামই দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। নাসিক থেকে পিঁয়াজও পর্যাপ্তই আসছে। ফলে দাম বাড়ার কথা নয়। আদা-পিঁয়াজ-রসুন ছাড়া বাঙালির বেশিরভাগ রান্নাই স্বাদহীন। কিন্তু হলে হবে কী! আদা কিনতে গিয়েই নাকের জলে, চোখের জলে আম-আদমি। ওয়েস্টবেঙ্গল ভেন্ডার অ্যাশোসিয়েশনের সভাপতি কমল দে বলেন, “মনিপুরের অশান্তির আঁচ পড়েছে আদার দামের উপর। ওখান থেকে ট্রাক আসছে না। তাছাড়া বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে দক্ষিণ ভারতের থেকেও আদা এসেছে কম। দাম বেড়েছে রসুনেরও। তবে পিঁয়াজের দাম বাড়ার কোনও কারণ নেই।”