দীপেন্দু পাল: সময় এগোলেও বেশ কিছু সামাজিক বিধিনিষেধ এখনও সাধারণ মানুষের মনে স্থায়ী আসন ছাড়তে পারেনি। যার মধ্যে অন্যতম, স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা। ঋতুকালীন সময়ে মহিলাদের স্বাস্থ্যবিধির কথা খাস শহরেও অনেক শিক্ষিত ব্যক্তি সবসময় মাথায় রাখেন না। দোকান থেকে কেনার সময় চলে লুকোছাপা। এবার এই মানসিকতার বদল আনতেই আন্দোলনে নামছেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশ। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন বসাতে হবে। নইলে পিরিয়ডসের সময়ও তাঁরা স্যানিটারি ন্যাপকিন না পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন বলে জানিয়েছেন ছাত্রীদের একাংশ।
[‘সরকার-বিরোধী নই’, মুচলেকা দিলে তবেই মিলবে হস্টেলে থাকার ছাড়পত্র]
কী দাবি আন্দোলনকারীদের?
ছাত্রীদের একাংশের দাবি, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন নেই। যতদিন না বিশ্ববিদ্যালয়ের সবক’টি ভবনে ভেন্ডিং মেশিন বসবে না, ততদিন তাঁরা স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করবেন না। আন্দোলনকারীদের তরফে তিন দফা দাবি রাখা হয়েছে।
১. প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবক’টি ভবনে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং বসাতে হবে।
২. স্যানিটারি ন্যাপকিন কোনও বিলাসিতা নয়, জরুরি। স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপর ১২ শতাংশ জিএসটির প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ছাত্রীদের একাংশ।
৩. কেন পিরিয়ডসের মতো বিষয় নিয়ে খোলাখুলি কথা বলা যাবে না- এই নিয়েও আন্দোলনে নামছেন ছাত্রীদের একাংশ।
স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে প্রতিবাদ এরাজ্যে অবশ্য এই প্রথম নয়। এর আগে নারী-স্বাধীনতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি, লিঙ্গ-বৈষম্য, শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ঋতুস্রাব নিয়ে অযথা গোপনীয়তার বিরোধিতায় পথে নেমেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল পড়ুয়া। আন্দোলনকারীরা তাঁদের প্রতিবাদের স্লোগান, বক্তব্য লেখেন স্যানিটারি ন্যাপকিনে। সেগুলি সেঁটে দেওয়া হয় ক্যাম্পাস জুড়ে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বার্তা দিতে জার্মান শিল্পী ইলন স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপর লিখে প্রতিবাদ জানান। তাঁর এই অভিনব আন্দোলনকে ভারত থেকেও অনেকে সমর্থন জানান। স্লোগান ওঠে, ‘আমার যৌনাঙ্গ, আমার পছন্দ।’ এ দেশে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও একই ধাঁচে আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের নিরস্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করে।
সেই পথেই কি হাঁটবে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়? এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “বিষয়টি আমি জানি না। ছাত্রীরা আমাকে জানাতে পারত। কী লাগবে ওদের? ভেন্ডিং মেশিন? তাহলে তো রেজিস্ট্রারকেই বলতে পারত ওঁরা। সব বিষয়ে আমাকে জড়াবেন না।” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদের এই পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি জানান অনেকেই। সমাজের সব স্তরের মানুষ এর প্রতিবাদে মুখর হন। শুধু আন্দোলনের পদ্ধতি নয়, প্রতিবাদের জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জাম নিয়ে আপত্তি জানান বিশিষ্টরা। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, আন্দোলনকারীদের ধিক্কার জানানো উচিত। এখন প্রেসিডেন্সিতে এই একই ধাঁচে আন্দোলন নিয়ে কী প্রতিক্রিয়া দেবেন বিশিষ্টজনরা?
[রূপাকে সরিয়ে মহিলা মোর্চার সভানেত্রী হচ্ছেন লকেট!]
এদিন আন্দোলনের প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্সির সোশিওলজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী রিমঝিম সিনহা ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’কে বলেছেন, “গার্লস কমনরুমের সামনে একটিমাত্র স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন রয়েছে। কিন্তু সেটা থেকে যে ন্যাপকিন পাওয়া যায়, সেটি এতই শক্ত যে ব্যবহার করলে অস্বস্তি হয়, কেটে-ছড়ে যায়। আমি নিজে ভুক্তভোগী।” আন্দোলনকারীদের একাংশের অভিযোগ, একটিমাত্র ভেন্ডিং মেশিনটিও গত একবছর ধরে খারাপ। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এই দাবি মানতে চাননি। তিনি বলছেন, “ডিন অফ স্টুডেন্টের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনিও জানিয়েছেন ভেন্ডিং মেশিনে কোনও সমস্যা নেই।”
(তথ্য সহায়তায়: শ্রীষিতা ঘোষ)
The post ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করব না’, অভিনব প্রতিবাদে প্রেসিডেন্সির ছাত্রীরা appeared first on Sangbad Pratidin.