রাহুল রায়: বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার লক্ষ্যে এবং রাজ্যের পর্যটনের প্রচারের উদ্দেশ্যেই অনুদান দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আসন্ন দুর্গা উৎসবে (Durga Puja 2022) পুজোকমিটিগুলিকে অনুদান প্রসঙ্গে আদালতে এমনই দাবি করল রাজ্য। পাশাপাশি, বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত মামলায় রাজ্যের তরফে আরও জানানো হয়, ইউনেস্কোর তরফ থেকে কলকাতার দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ তকমা দেওয়া হয়েছে। শুধু কলকাতাই নয়, গোটা বাংলার পুজোকেই তুলে ধরা হবে। যে স্বীকৃতি কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকও দিয়েছে। ফলে অনুদান নিয়ে মামলাকারীদের তরফে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে তা সঠিক নয়, বলে দাবি করেন এজি।
সম্প্রতি রাজ্যের ৪৩ হাজার দুর্গাপুজো কমিটিকে ৬০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে এবং তারই বিরোধিতায় চারটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় হাই কোর্টে। এদিন মামলার শুনানি শেষ করে রায়দান স্থগিত রেখেছে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ। এদিন শুনানিতে মামলাকারীদের তরফে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, নির্দিষ্ট একটি সম্প্রদায়ের জন্য রাজ্যের মানুষের করের টাকা এই ভাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী খরচ করতে পারেন না। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং সংবিধান বিরোধী। এর জন্য রাজ্যপালের অনুমতি লাগে। তার প্রেক্ষিতে রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন ও জনসাধারণের সংযোগ বৃদ্ধির কাজ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রচার ও প্রসার, এবং পর্যটনের প্রসার এই পুরো বিষয়টিই করা হয় জনস্বার্থে। রাজ্যের ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ ও তার প্রচার করাই রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্য। এটাকে জনস্বার্থ ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে!
[আরও পড়ুন: ‘তুমি তোমার জায়গাটা নিয়ে থাকো’, নেতাজি ইন্ডোরের অনুষ্ঠান থেকে মহুয়াকে ‘ধমক’ মমতার]
মামলার গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে আদালতে এজি-র দাবি, জমি অধিগ্রহণ ক্ষেত্রে রাজ্যের একটি নির্দিষ্ট নীতি রয়েছে। দুর্গাপুজো শুধু এ রাজ্যের জন্য নয়, আজ সারা দেশের মানুষের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ বলে রাজ্য সরকার মনে করছে। তাই এই অনুদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও দুর্গাপুজো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তাও বহন করে। যে কারণে লক্ষ নয়, কোটি কোটি মানুষ আজ শারদীয়া দুর্গোৎসবে মেতে ওঠেন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকিরা আসেন। ঢাক বাজানোর মহড়া হয়। তারপর উদ্যোক্তারা তাঁদের পছন্দ করে নিয়ে যান। দেখার মতো দৃশ্য এরাজ্যে। কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা লন্ডন-সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। কুমোরটুলিকে শিল্পের প্রদর্শশালা বলা যায়। তাই দুর্গাপুজো ইউনেসকোর স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়াও প্যান্ডেলের শিল্পকলা, হস্তশিল্প উৎসবের মাধুর্যে অন্য মাত্রা যোগ করে। বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়। এরপরও মামলাকারীরা অনুদান নিয়ে কীভাবে প্রশ্ন তুলতে পারে।