ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: প্রশ্নের মুখে বেসরকারি হাসপাতালের টিকাকরণ! প্রশ্নের মুখে বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোম থেকে প্রথম ডোজ নেওয়া মানুষদের ভবিষ্যৎ। কারণ, টিকা উৎপাদনকারী দুই সংস্থা সেরাম ও ভারত বায়োটেক সোমবার রাত পর্যন্ত বেসরকারি ক্ষেত্রকে কোনও কথা দিতে পারেনি। বরং বেসরকারি ক্ষেত্রের টিকা উৎপাদনে পাঁচ-ছ’মাস দেরি হতে পারে বলে ইঙ্গিত করেছে।
১ মে থেকে দেশে তৃতীয় পর্বের টিকাকরণ শুরু হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালকে এই পর্বের জন্য সেরাম ও বায়োটেক থেকে সরাসরি তাদের নির্ধারিত দামে টিকা (corona vaccine) কিনতে হবে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ ২৩ এপ্রিল রাজ্যগুলিকে চিঠি দিয়ে (ডিও নং ১৯২০৭৬৪/ ২০২০ আইএমএম) জানিয়েছেন, ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সমস্ত বেসরকারি হাসপাতালের কাছ থেকে অব্যবহৃত টিকা ফেরত নিয়ে নিতে হবে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিবের নির্দেশ নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সোমবার এমনটাই জানিয়েছেন রাজ্য স্বাস্থ্যকর্তারা। ফলে ১ মে থেকে বেসরকারি হাসপাতালে করোনা ভ্যাকসিন মিলবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে যাঁরা বেসরকারি হাসপাতাল থেকে করোনার প্রথম ডোজ পেয়েছেন তাঁরা দ্বিতীয় ডোজের টিকা কোথা থেকে নেবেন?
[আরও পড়ুন : সরকারি হাসপাতালে মেলেনি বেড, বিনা চিকিৎসায় বাড়িতেই মৃত্যু করোনা রোগীর!]
এদিনের বৈঠক প্রসঙ্গে রাজ্যের প্রধান স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম জানান, “কেন্দ্র আমাদের যে অ্যাডভাইসরি পাঠিয়েছে আমরা তা বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে জানিয়ে দিয়েছি।” বেসরকারি হাসপাতালগুলির প্রশ্ন, যাঁরা তাদের থেকে প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাঁরা তো এবার আমাদের হাসপাতালে ভিড় করবেন ভ্যাকসিন পেতে। তখন আমরা কী করব? জবাবে প্রধান সচিব জানান, “বিষয়টি নিয়ে আমরাও চিন্তায়। একটা উপায় বের করতে হবে।” তাঁর কথায়, আরও সরকারি ভ্যাকসিন কেন্দ্র বাড়াতে হবে।
এমন একটা ঘটনা যে হতে চলেছে, তা আগেই আন্দাজ করেছিল বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বেসরকারি হাসপাতাল সংগঠনের তরফে রূপক বড়ুয়া বলেন, “সরকার বলছে স্টকে থাকা সব করোনা ভ্যাকসিন ফেরত দিতে হবে। তাহলে যাঁরা প্রথম ডোজ আমাদের থেকে কিনে নিয়েছেন, তাঁরা দ্বিতীয় ডোজ কীভাবে নেবেন? আমরাও এই প্রশ্ন তুলেছিলাম। বিশেষ করে সাপ্লাই চেন নিয়ে। কিন্তু স্পষ্ট করে কিছু জানতে পারিনি।” পিয়ারলেস হাসপাতালের প্রধান মেডিক্যাল অফিসার ডা. সিঞ্চন ভট্টাচার্যর কথায়, “দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে যাতে কোনও সংশয় না হয় তার জন্য সরকার যাতে বিজ্ঞপ্তি জারি করে এদিন সেই আবেদন করা হয়েছে।” এদিকে কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের তরফে ভারত বায়োটেক ও সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দুই সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ৫-৬ মাসের আগে বেসরকারি হাসপাতালে ভ্যাকসিন জোগান স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়। সিঞ্চনবাবুর কথায়, “প্রথম ডোজ নেওয়ার পর আমরাই বলেছিলাম ছ’ সপ্তাহ পরে বুকিং করে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। এখন যদি দুই উৎপাদক সংস্থা জোগান স্বাভাবিক করতে না পারে তবে কিছুটা সমস্যা দেখা দেবে।”
[আরও পড়ুন : অনলাইন ক্লাসে পড়ুয়াদের অশালীন গালিগালাজ খড়গপুর IIT’র অধ্যাপিকার! ভাইরাল ভিডিও]
এদিকে এদিনের বৈঠকের পরেই স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে ১ মে থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাজ্যজুড়ে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। এইভাবে অবস্থা সামাল দেওয়ার মধ্যেই অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হবে। তারপর ফের প্রথম ডোজে গুরুত্ব দেওয়া হবে।