shono
Advertisement

গুগল ডুডলে আজ শ্রদ্ধা মহাশ্বেতা দেবীকে

কিংবদন্তির জন্মদিনে প্রণাম গুগলের, আমাদেরও৷ The post গুগল ডুডলে আজ শ্রদ্ধা মহাশ্বেতা দেবীকে appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 08:03 AM Jan 14, 2018Updated: 02:33 AM Jan 14, 2018

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মহাশ্বেতা দেবী এক স্ফুলিঙ্গের নাম৷ তিনি বাংলার সার্থক অগ্নিকন্যা৷ সোভিয়েতের পতনেই যেমন মার্ক্সসিজম মিথ্যা হয়ে যায় না, তেমনই শ্রেণি অস্বীকার করলেই ইতিহাস থেকে শ্রেণি মুছে যেতে পারে না- এই ছিল তাঁর বিশ্বাসের ভরকেন্দ্র৷ সাহিত্যিক হিসেবে সামাজিক দায়িত্ব অস্বীকারের অপরাধ ক্ষমাহীন-এই ছিল তাঁর সাহিত্যকর্মের ভিত্তিভূমি৷ তাঁর লেখনি তাই ঘুরিয়ে দিতে পেরেছিল ইতিহাসের প্রতি আমাদের দৃষ্টির অভিমুখ৷ ইতিহাসের চলতি বয়ানের বাইরেও যে প্রসারিত সীমা, যা ব্রাত্য অথচ সত্য, তাকেই দিয়েছিলেন সাংস্কৃতিক কৌলিন্য৷ আজ জন্মদিনে ডুডলে তাঁকেই শ্রদ্ধা জানাল গুগল৷

Advertisement

সমাজের বহতা তথাকথিত মূলস্রোতের সংজ্ঞাটিকেই বদলে দিতে পেরেছিলেন তিনি৷ তাঁর সাহিত্য মানুষের হাত ধরে মানুষকেই নিয়ে যেতে পেরেছিল এমন এক বৃহত্তর ভূমিতে, যেখানে বিভাজনের প্রাচীন রাজনীতি লজ্জা দিয়েছে সভ্যতাকেই৷ আর তিনি যতখানি হয়ে উঠেছেন এ শহরের মহাশ্বেতা দেবী, ততখানিই হয়ে উঠতে পেরেছিলেন দলিত-শবরের মা৷  সামাজিক সুস্থিতি প্রয়াসী ইতিহাস বরাবর বিজিতদের মুখপত্র হয়ে থেকেছে৷ তা কি সর্বদাই সত্যবদ্ধ? সময়ের মসৃণ স্থাপত্যে এ প্রশ্নের প্রশ্রয় নেই৷ তাহলেই তথাকথিত ভারসাম্যটা টলে যায়৷ কিন্তু সময়ের নিয়তিই এমন যে, কেউ না কেউ চোট্টি মুন্ডার হাতে ঠিক তির তুলে দেন৷ কেউ না কেউ ‘ন্যাংটো’ দ্রৌপদী মেঝেনের মুখে কথা তুলে দেন, আর থমকে যায় রাষ্ট্রের প্রতিভূরা৷ মনে হয়, এ যেন সময়েরই এক অন্তর্ঘাত৷ প্রাগার্যদের অধিকার বঞ্চিত করে যে আর্য সভ্যতার ইতিহাস ফলে ফুলে কুসুমিত হয়ে উঠবে, সেই সভ্যতারই কেউ আবার প্রশ্ন তুলবেন অরণ্যের অধিকারের৷ আর বাংলা সাহিত্যের পরিমণ্ডল দেখবে, মহাশ্বেতা দেবীর কলমে উঠে আসছে এমন এক স্বর, যা অন্তত বাংলা সাহিত্যে আগে কোথাও তেমন ছিল না৷ পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে যা সাব অল্টার্ন স্টাডিজ বলে গণ্য হবে, তার অনেক আগেই তাঁর লেখনি হয়ে উঠেছে এ বিষয়ের বর্তিকা৷

সরস্বতী পুজোর আগেই ফুলের বাজার অগ্নিমূল্য, চিন্তায় খুচরো ব্যবসায়ী ]

আসলে কাকা ঋত্বিক যেমন বিশ্বাস করতেন, সিনেমা ভাল খারাপ নয়, তা আসলে হয় কমিটেড, নতুবা কমিটেড নয়৷ সেই কমিটমেন্ট মানুষের প্রতি, সভ্যতা, সমাজ ও সময়ের প্রতি৷ এ তো আসলে সামগ্রিক শিল্পের প্রতিই এক সমাজসচেতন শিল্পীর দৃষ্টিভঙ্গী৷ শিল্পের এই দায়বদ্ধতাই শোণিতস্রোত হয়ে দেখা দিয়েছিল মহাশ্বেতার সাহিত্য জীবনে৷ তিনি নিজেই স্বীকার করতেন মহাশ্বেতা দেবী হয়ে ওঠার পথে তাঁকে গড়ে তোলার কারিগর ছিলেন বিজন ভট্টাচার্যই৷ বাংলা সংস্কৃতিকে যিনি দিয়েছিলেন নবান্নের ঘ্রাণ, তাঁর হাতেগড়া মহাশ্বেতা যে সামাজিক দায়বদ্ধতার অঙ্গীকারকেই তাঁর জীবনের অলংকার করে তুলবেন তা বলাই বাহুল্য৷ আর তাই তিনি নিজেও বলেন, ‘দায়িত্ব অস্বীকারের অপরাধ সমাজ কখনওই ক্ষমা করে না’৷ এ দায়িত্ব মানুষের সভ্যতার ইতিহাসের প্রতি৷ সে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে, কখনও ব্যক্তিগত পরিচয়ের ক্ষেত্রে কিছু কিছু দায়িত্বপালনে খামতি থেকে গিয়েছে৷ তা নিয়ে আক্ষেপও করেছেন৷ কিন্তু শেষমেশ সমাজ ও সাহিত্যের ইতিহাসে স্বীকার্য থেকে যাবে তাঁর এই বৃহত্তর দায়িত্বপালনের ভূমিকাটিই৷

ব্যাঙ্ককর্মীদের বিয়ে করা যাবে না, আজব ফতোয়ার বিরোধিতায় কর্মীসংগঠন ]

এমনই এক প্রসারিত জায়গাতেই নিজেকে স্থাপন করেছিলেন তিনি৷ শহরের সাহিত্যবাসর যাঁকে অভিনন্দিত করতে পারে, আবার দলিত শ্রেণি যাঁর সামনে শালপাতায় অনায়াসে তুলে দিতে পারে ইঁদুরের মাংস৷ এরকম বৈচিত্রকে একমুখী সমাজের ছক অ্যাকোমোডেট করতে পারে না৷ কেননা সেই ছক ভেঙে সমাজের সীমানা অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি নিজেই৷ তাঁর বাসভূমে শবর শ্রেণির যুবকের উপস্থিতি, দলিতদের সঙ্গে তাঁর সহাবস্থান আজ তাই শহুরে নাগরিককে শিহরিত করতে পারে, কিন্তু যে উত্তরাধিকার মহাশ্বেতা বহন করে চলেছিলেন তাতে এটাই ছিল স্বাভাবিক৷ তাঁর সাহিত্যের উত্তরাধিকার হয়ত বাংলার বহুপ্রজ সাহিত্যিকরা ক্ষীণধারায় হলেও বহন করে নিয়ে যেতে সক্ষম হবেন, কিন্তু শ্রেণিভাঙা এই শ্রেণিগঠনের কাজটি বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে আর কেউ করতে পারবেন কি না, সে সন্দেহ থেকেই যায়৷

এবার দ্বিতীয় হুগলি সেতু পার হতে গুণতে হবে দ্বিগুণ টাকা! ]

কবিতার মতো স্লোগান আর স্লোগানের মতো কবিতার সীমানা একদা মিশিয়ে দিয়েছিলেন এক কবি৷ আসলে তো তিনি মনে করিয়ে দিতে চাইছিলেন শিল্পের এই দায়বদ্ধতার কথা৷ যে কমিটমেন্ট নিয়ে মহাশ্বেতার কলম তুলে নেওয়া, তা মাথায় রাখলে তিনি আদতে সমাজকর্মীই৷ তাঁর ফর্ম সাহিত্য৷ আর তাই অনুজ গায়ককে তিনি গানে উৎসাহ দেন, কেননা গানের মাধ্যমেই কাজ হবে সমাজের৷ প্রান্তিকের কণ্ঠস্বর তুলে ধরা যখন আলাদা রীতি হয়ে ওঠেনি, তখন থেকেই এই সমাজকর্মী জানতেন তাঁর কী করণীয়৷ আজীবন সেই সামাজিক দায়িত্বই পালন করে গেছেন৷ ২০১৬-য় ফুরিয়েছে তাঁর পার্থিব জীবন৷ কিন্তু সাহিত্যের উত্তরণে আজও তিনি ভাস্বর৷ সেই মহিয়সীকেই আজ শ্রদ্ধা গুগলের৷

 

The post গুগল ডুডলে আজ শ্রদ্ধা মহাশ্বেতা দেবীকে appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement