সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রেড মিট ম্যানুয়াল (Red meat Manual) থেকে বাদ পড়ল ‘হালাল’ শব্দটি। হালাল নাকি অন্য কোনও পদ্ধতিতে মাংস কাটা হয়েছে, তা এবার থেকে রপ্তানি করার সময় আর জানা যাবে না। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-সহ একাধিক ডানপন্থী সংগঠনের অভিযোগ ছিল, রেড মিট ম্যানুয়ালে থাকা ‘হালাল’ শব্দটি মুসলিম মাংস ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত সুবিধা করে দিচ্ছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই কেন্দ্র এই পদক্ষেপ করেছে বলে খবর।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কী এই রেড মিট ম্যানুয়াল? এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড প্রসেসড ফুড প্রডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা APEDA এর তৈরি একটি শংসাপত্র। যেখানে রপ্তানি করা হবে এমন মাংসের গুনমান নথিভুক্ত থাকে।
[আরও পড়ুন : অবশেষে গ্রেপ্তার গাজিয়াবাদের শ্মশান দুর্ঘটনার মূল অভিযুক্ত, কড়া শাস্তির হুঁশিয়ারি যোগীর]
মাংস রপ্তানি করার জন্য কোন পদ্ধতিতে পশুকে হত্যা করা হয়েছে, এতদিন তা ওই ম্যানুয়ালে লেখা থাকত। ম্যানুয়ালের পুরনো সংস্করণে লেখা হত, ইসলামীয় দেশগুলির চাহিদা অনুযায়ী জন্তুদের হালাল পদ্ধতিতে জবাই করা হয়েছে। ম্যানুয়ালের নতুন সংস্করণে লেখা হচ্ছে, আমদানিকারী দেশ বা আমদানিকারীর চাহিদা মেনে জন্তুদের হত্যা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ইসলামীয় দেশগুলি শুধুমাত্র হালাল করা মাংসই আমদানি করে। তাঁদের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই এই শব্দটি রেড মিট ম্যানুয়ালে রাখা হয়েছিল।
কিন্তু এই শব্দ ব্যবহার নিয়ে বেজায় আপত্তি ছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-সহ একাধিক ডানপন্থী সংগঠনের। তাঁদের অভিযোগ, এই শব্দ ব্যবহারের ফলে অতিরিক্ত সুবিধা পেয়ে যাচ্ছেন মুসলিম ব্যবসায়ীরা। সংগঠগুলির যুক্তি, ভারত ইসলামিক দেশ ছাড়াও চিন, শ্রীলঙ্কার মতো দেশে মাংস রপ্তানি করে। যেখানে ‘হালাল’ সার্টিফিকেটের প্রয়োজন পড়ে না। উলটে শ্রীলঙ্কায় হালাল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংগঠনগুলির দাবি, এই পদক্ষেপের ফলে মাংস রপ্তানিতে সুবিধা পাবেন দেশের সমস্ত মাংস ব্যবসায়ীরা।
[আরও পড়ুন : অতিমারীর মধ্যেই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বার্ড ফ্লু! রাজস্থানের পর আরও ৩ রাজ্যে জারি সতর্কতা]
হালাল ও সাধারণ পদ্ধতি মাংস কাটার মধ্যে পার্থক্য কী? হালাল শব্দের অর্থ অনুমোদিত। হালাল ফুড মানে শরিয়া আইন সম্মত খাবার। শরিয়া আইন বলছে, জবাইয়ের সময় জন্তুকে জীবন্ত হতে হবে, শরীর থেকে সব রক্ত বেরিয়ে যেতে হবে। উলটোদিকে ঝটকায় এক কোপে জন্তুর মাথা ধড় থেকে আলাদা করা হয়।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, APEDA-এর পদক্ষেপের জন্য সমস্ত কৃতিত্ব নিয়েছে হালাল নিয়ন্ত্রণ মঞ্চ। তাঁদের দাবি, ম্যানুয়াল থেকে এই শব্দ বাদ দেওয়ার জন্য বারবার সরকারের তদ্বির করেছেন করেছে তারা। এ নিয়ে এই সংগঠনের মুখপাত্র হরিন্দর এস সিক্কা জানান, “কংগ্রেস আমলে এই নিয়ম কার্যকর করা হয়, যেখানে বলা হয়েছিল সকল মাংস রপ্তানিকারককে APEDA-তে নাম নথিভুক্ত করতে হবে। এবং শুধুমাত্র হালাল করা মাংসই কেনা যাবে। ফলে হিন্দু, শিখ-সহ একাধিক ধর্মের মানুষ মাংস রপ্তানির ব্যবসা থেকে সরে দাঁড়িয়েছিল।”
যদিও মাংস রপ্তানিকারকদের দাবি, রেড মিট ম্যানুয়াল থেকে এই শব্দ সরিয়ে দেওয়ার প্রভাব রপ্তানিতে পড়বে না। কারণ, যে দেশ মাংস কেনে তাঁদের নিজস্ব শংসাপত্র দেওয়ার রীতি রয়েছে। তাই APEDA-র ম্যানুয়ালে হালাল উল্লেখ করা হল কি না, তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই মাংস রপ্তানিকারকদের।