নন্দিত রায়, নয়াদিল্লি: মূল্যবৃদ্ধির মারে নাজেহাল জনতা। খাদ্যসামগ্রী থেকে শুরু করে জ্বালানির দাম ক্রমে ঊর্ধ্বমুখী হলেও মুখে কুলুপ এঁটেছে সরকার। তবে শেষমেশ বিরোধিদের চাপের মুখে সংসদে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনায় রাজি হয়েছে কেন্দ্র। সোমবার লোকসভায় ও মঙ্গলবার রাজ্যসভার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হবে বলে খবর।
গতবারের বাজেট অধিবেশেন একটানা ২৭ দিন ও চলতি অধিবেশেন একটানা ১০ দিন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার দাবিতে প্রায় সমস্ত বিরোধিরা নোটিস দেওয়ার পরে সরকারপক্ষের তরফ থেকে আলোচনায় রাজি হওয়ার বিষয়টিকে নিজেদের বড় জয় হিসেবেই দেখছে বিরোধি শিবির। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার দাবিকে কেন্দ্র করেই চলতি অধিবেশনে সংসদের দুই কক্ষ থেকে ২৭ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করার পরেও বিরোধিরা যেভাবে অনড় অবস্থান নিয়েছিলম, তাতেই শেষ পর্যন্ত সরকারের টনক নড়েছে বলেই দাবি বিরোধিদের। জানা গিয়েছে, আলোচনার পর জবাবী ভাষণ দেবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ।
[আরও পড়ুন: আঙুল উঠেছিল খোদ প্রধানমন্ত্রীর দিকে! জেনে নিন ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দুর্নীতির কাহিনি]
বিরোধিরা যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারকে রাজি করাতে পেরেছে তাতে তৃণমূল কংগ্রেসর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তৃণমূলের পক্ষ থেকেই মূল্যবৃদ্ধি ইস্যু নিয়ে সমস্ত বিরোধিদলকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। যা সফল হয়েছে। বাকি বিরোধি দলগুলি একজোট হলেও কংগ্রেস প্রথমে বিরোধিদের সম্মিলিত প্রতিবাদস্থল থেকে প্রথমদিকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখলেও পরে সেখানে যোগ দিয়েছে। সংসদের মূল ফটকের সামনে সাসপেন্ড হওয়া বিরোধি সাংসদদের ধরনায় রাজ্যসভার বিরোদি দলনেতা, কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খাড়গে অব্দি ঘন্টা দুয়েক সময় কাটিয়েছেন। সরকারপক্ষ মূল্যবৃদ্ধি আলোচনায় রাজি হলেও বিগত কয়েকদিনে এনিয়ে জলঘোলা হয়েছে বিস্তর।
সূত্রের খবর, মূল্যবৃ্দ্ধি নিয়ে আলোচনার দাবিতে রাজ্যসভার নেতা পীয়ুষ গোয়েলের সঙ্গে বিরোধি নেতাদের ঘরোয়া বৈঠকে পরিস্থিতি এতটাই তপ্ত হয়ে উঠেছিল যে ডিএমকের রাজ্যসভার নেতা ত্রিরুচি শিবা, ‘ইঁট দিয়ে মাথা ভেঙ্গে দেব’, বলে গোয়েলকে হুমকি অব্দি দিয়েছেন বলেই শোনা গিয়েছে। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনায় রাজি হলেও ‘অগ্নিপথ’ নিয়ে সরকার যে কোনওভাবেই সংসদে আলোচনার রাজি নয় সেই বার্তা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আদালাতে রয়েছে তাই আলোচনা হবে না বলেই এপ্রসঙ্গে সরকারের তরফ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার দাবি জানিয়ে রাজ্যসভার ২৩জন ও লোকসভার ৪ জন সাংসদ সাসেপেন্ড হওয়ার ঘটনার বিরোধিরা যে ৫০ ঘন্টার রিলে অবস্থান শুরু করেছিল তা এদিনই শেষ হয়েছে। সাসপেন্ডেড সাংসদরা অবস্থান শেষ করে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তিতে মাল্যদান করে বিজয় চক পর্যন্ত মিছিলও করেছেন। বুধবারের পরে বৃহস্পতিবার সংসদ চত্বরেই রাত কাটিয়েছেন একাধিক সাসপেন্ডেড সাংসদ। সংসদের কর্মীদের তরফ থেকে প্রথমদিন রাত্রিবাসের সময় সহযোগিতা করা হলেও দ্বিতীয়দিন সরকারপক্ষের নির্দেশে তা তারা তা করতে পারেননি বলেই বিরোধি শিবিরের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে। সাংসদদের রাতের জন্য কোনও ফেরি-র ব্যবস্থা রাখা হয়নি। অবস্থানস্থল পরিষ্কারও করা হয়নি রাতে। অবস্থান থেকে মাঝরাতে ডেরেক নিজে গাড়ি চালিয়ে গিয়ে দলের দুই মহিলা সাংসদ সুস্মিতা দেব ও মৌসম নূরকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন আবার সকাল ৬ টায় শান্তা ছেত্রীকে গিয়ে নিয়েও এসেছেন বলেই জানা গিয়েছে।
এদিকে, অবস্থানে বসে থাকা সাসপেন্ড হওয়া সাংসদরে খাওয়া দাওয়া নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী বলেন, “কংগ্রেস নেতারা অবস্থানের নাম করে অহিংসার পূজারী মহাত্মা গান্ধীর মূর্তির নীচে বসে চিকেন খেয়েছে বলে শুনতে পাচ্ছি, জনতার বিষয় নিয়ে আলোচনা তো দূর অস্ত দেশের মহান ব্যক্তিদের অপমান করা কংগ্রেসর অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।” পালটা, কে কি খাবে সেটা কি বিজেপি ঠিক করে দেবে বলে বিরোধি শিবিরের পক্ষ থেকে পাল্টা কটাক্ষ করা হয়েছে।