শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: ২০০ বছর আগে অবিভক্ত দিনাজপুরের (Dinajpur) বাহিন জমিদার বাড়িতে শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি বদলেছে। নেই জমিদারি। তবে পুজো আজও হয় পুরনো নিয়মেই। যদিও এখন এই পুজো আমজনতার।
জানা গিয়েছে, মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় জোড়া পায়রার বুকের বিন্দু বিন্দু রক্তের ফোঁটায় নদীঘাটের বেদি স্নান করিয়ে মাঝি পুজোয় বসতেন কুল পুরোহিত। এর পর হিমালয় পাহাড় চুঁইয়ে আসা নাগরের জলে ঘাটের রক্ত ধুঁয়ে সন্ধ্যায় ঠাকুরদালানে হত দেবীবরণ। দেবীপক্ষের দ্বিতীয়দিন ভোরে ঢাক বাজিয়ে পরিবারের মহিলারা নদী থেকে জল ভরে মন্দিরে মঙ্গলঘট প্রতিষ্ঠা করতেন। পুরোহিতের চণ্ডিপাঠের মধ্য দিয়ে বাহিন জমিদার বাড়িতে শুরু হতো পুজো। কথিত আছে, স্বপ্নাদেশেই মাঝি পুজোর পর দুর্গাপুজো শুরুর রীতি শুরু হয়েছিল বাহিন জমিদার বাড়িতে। শুরু করেছিলেন এস্টেটের ঈশ্বরচন্দ্র রায়চৌধুরীর পুত্র হরেন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরী। মহা অষ্টমীতে হতো মহিষ বলি। বিহার থেকে প্রচুর দর্শনার্থী আসতেন পুজো দেখতে। এই কয়েকটা দিন জমিদারবাড়িতে প্রবেশে ছিল না কোনও বাধা নিষেধ। সপ্তমী থেকে নবমী কলকাতার নামী শিল্পীরা নাটক এবং যাত্রা পরিবেশন করতেন। দশমীর ভোর থেকে দুর্গাদালানের পাশে বিস্তৃত মাঠে বসত মেলা। সন্ধ্যায় মেলা শেষ করে দশমীতে মায়ের বিসর্জনের আয়োজন শুরু হত। দেবীর মুখে পান সুপারি ছুঁইয়ে বিদায় জানাতেন জমিদার বাড়ির বধূরা।
[আরও পড়ুন: ছাত্রীর ‘যৌন হেনস্তা’, কাঠগড়ায় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান]
অবিভক্ত দিনাজপুরের রায়গঞ্জ শহর থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে নাগর নদীর পাড়ে বাহিন জমিদারি এস্টেট। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয় হয়েছে জমিদার বাড়ি। বারান্দাওয়ালা ঘরগুলোর পলেস্তারা খসেছে। ফিকে হয়েছে রঙ। পরিবারে সদস্য সুস্মিতা কুণ্ডু বলেন, “পুজো ঘিরে কলকাতা থেকে প্রথিতযশা শিল্পীরা গান বাজনার জলসা বসাতেন। আসর চলত টানা চারদিন। পুজোকে কেন্দ্র করে নাটকের দল তৈরি করা হয়েছিল। আমিও নিজে কয়েকবার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম।” ইতিহাসবিদ বৃন্দাবন ঘোষ বলেন, “সত্তর দশক পর্যন্ত জমিদারের উত্তরসুরীদের তত্ত্বাবধানে দেবী আরোধনার আয়োজন হত। কিন্তু প্রায় চার দশক ধরে এটা বারোয়ারী পুজোয় পরিণত হয়েছে।” প্রসঙ্গত, জমিদারি বিলুপ্ত হওয়ার পর প্রায় চল্লিশ বছর পরিবারের সদস্যরা প্রথা মেনে পুজো করতেন। তবে গত প্রায় ৪০ বছর ধরে গ্রামবাসীরা দুর্গাপুজোর আয়োজন করে আসছেন।