সুব্রত বিশ্বাস: ভোটের আবহাওয়ায় উধাও আরপিএফ, জিআরপি। বেশিরভাগ জওয়ানরা গিয়েছেন ভোটের ডিউটিতে। আর সেই সুযোগেই বিভিন্ন রিজার্ভেশন কাউন্টারগুলোতে টিকিট দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গিয়েছে হাজারগুন। অভিযোগ, কাঁচড়াপাড়া স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে দালালচক্রের প্রতিবাদ করতে গেলে এক যাত্রীকে বেধড়ক মার করা হয়। নৈহাটি থানায় অভিযোগের পরও এই দৌরাত্ম্য কমেনি বলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন যাত্রীরা।
ওই নিগৃহীত যাত্রীর অভিযোগ, রাত বারোটার সময় কাউন্টারের বাইরে টিকিটের লিস্টে পাঁচ নম্বরে নিজের নাম লিখে গিয়েছিলেন। এর পর ভোর চারটার সময় এসে দেখেন লিস্ট ছিড়ে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় দালালচক্র একের পর এক টিকিট কাটায় প্রতিবাদ করেন ওই তিনি। এর পরই তাঁর উপর চড়াও হয়ে মারধর করে দালালরা। জানা গিয়েছে, অভিযোগকারী এর পর জিআরপি থানায় গেলে জানানো হয়, ভোটের ডিউটিতে কর্মীরা চলে গিয়েছেন। তাই তাঁকে নৈহাটি গিয়ে অভিযোগ জানাতে হবে। সেই সময় আরপিএফেরও দেখা পাননি তিনি।
তবে এই সমস্যা শুধু কাঁচড়াপাড়ার নয়, প্রায় সব সংরক্ষণ কাউন্টারেরই। এই বিষয়ে পূর্ব রেলের কমার্শিয়াল বিভাগ জানিয়েছে, যাত্রীদের সুবিধায় আগে লিস্ট তৈরি করা হয়। যাত্রীরা নাম লিখে যান। সেই লিস্ট দেখার দায়িত্ব আরপিএফের। ছিঁড়ে ফেললে দায়বদ্ধতা তাদের। যাত্রীদের অভিযোগ, দালাল চক্রের সঙ্গে রেলকর্মীদের সখ্য রয়েছে। ফলে মিলছে এই সুযোগ। শিয়ালদহ আরপিএফের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, টিকিট সংরক্ষণ কাউন্টারে বেআইনি কাজ দেখলে অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে। ভোটের ডিউটিতে কর্মীরা চলে যাওয়ায় আইন শৃঙ্খলায় সমস্যা দেখা দিয়েছে, জিআরপি এই সমস্যা মেনে নিয়ে জানিয়েছে, আইনি পদক্ষেপ অবশ্যই করতে হবে।
দালালচক্রের দৌরাত্ম্য রোখার বিষয়ে পূর্ব রেল জানিয়েছে, দালাল ও বিনা টিকিটের যাত্রীদের ধরতে মাঠে নেমেছে ভিজিল্যান্স ও কমার্শিয়াল বিভাগ। গত শুক্রবার কলকাতা স্টেশন অতর্কিতে হানা দিয়ে ৮১ জন বিনা টিকিটের যাত্রী ও টিকিট দালালকে ধরে ৩৪ হাজার টাকা জরিমানা বাবদ আদায় করা হয়েছে। হাওড়া স্টেশন থেকে সাম্প্রতিক একইভাবে ৪৮৮ জনকে ধরা হয় বিনা টিকিটে ভ্রমণ করার জন্য। সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় দালালকেও। প্রায় ১ লক্ষ ১২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় বিনা টিকিটের যাত্রীদের।
এদিকে যাত্রা সুরক্ষিত করতে সব ট্রেনের সাধারণ কামরাতে যাত্রীদের লাইন দিয়ে ওঠানো হচ্ছে। এই লাইনে কোনওরকম বিঘ্ন যাতে না ঘটে সেজন্য আরপিএফকে লাইন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রাখা হয় বলে জানান হাওড়ার ডিআরএম সঞ্জীব কুমার। তিনি বলেন, গরমে স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখতে উপযুক্ত ব্যবস্থার পাশাপাশি, সব রকমের দালাল দৌরাত্ম্য আটকানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি হাওড়া স্টেশন চত্বরে গাড়ির দালালদের দৌরাত্ম্য নিয়ে সরব হয়েছেন যাত্রীরা। নানা সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে অভিযোগও তুলেছেন তারা। ডিআরএম সঞ্জীব কুমার জানিয়েছেন, স্টেশন ও স্টেশন চত্বের সুরক্ষিত রাখতে সব রকমের প্রচেষ্টা চালানো হবে। আরপিএফকে বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশপাশি ট্রাফিক বিভাগকেও জানানো হবে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার জন্য।