নির্মল ধর: আধুনিক প্রযুক্তি মানুষের হাতের মুঠোয় এখন এনে দিয়েছে দূরের জগৎ, স্বপ্নের জগৎ, কল্পনার জগৎ, ভবিষ্যতের জগৎ। স্মার্টফোন আর ট্যাব এখন শিশু ও কিশোরদের হাতের খেলনা। দিগন্ত সবুজ মাঠ, খোলা আকাশ, সবুজ জঙ্গল, নীল সমুদ্র ভুলে তারা এখন প্রযুক্তিকে মুঠোয় ধরে কাছের লোককে দূরে করে দিচ্ছে।
মোবাইল গেমের মধ্যে লুকনো নানা ধরনের যান্ত্রিক খেলা এখন ছোটদের মস্তিষ্কের কোষে কোষে এক যান্ত্রব খেলার জন্ম দিয়ে চলেছে। খবরের কাগজ খুললেই কিশোর ছাত্র বন্দুক দিয়ে ক্লাসে ঢুকে তাঁর বন্ধুদের এবং শিক্ষককে অবলীলায় খুন করছে বা নিজের বাবা-মা, ঠাম্মাকে। এসব বাস্তব ঘটনাকে ভিত্তি করেই পদ্মানভ দাশগুপ্তর চিত্রনাট্যে তৈরি ছবি ‘হাবজি গাবজি’ (Habji Gabji Review)। পরিচালক রাজ চক্রবর্তী (Raj Chakraborty) এক ধরনের ব্যঙ্গের সুরও জড়িয়ে দিয়েছেন পরিচালন শৈলীতে। নামটি সত্যি, খুব যথাযথ। মোবাইল গেমকেই মূলত বলা হয়েছে ‘হাবজি গাবজি’ যা কিনা জনপ্রিয় মোবাইল গেম পাবজির মতো শুনতে লাগবে। অলীক জগতে সেই ‘হাবজি গাবজি’ খেলার পরিণতি যে বাস্তবে কত মর্মান্তিক হয়, তারই এক উদাহরণ উপস্থিত করেছেন রাজ চক্রবর্তী। কাহিনি নির্বাচন অবশ্যই সময়োপযোগী।
[আরও পড়ুন: ভারচুয়াল জগতের ভয়ংকর রূপ দেখাল ‘এস্কেপ লাইভ’ ওয়েব সিরিজ, পড়ুন রিভিউ]
আদি (পরমব্রত) ও অহনা (শুভশ্রী), এদের একমাত্র ছেলে টিপু (সামন্তকদ্যুতি মিত্র)। মা-বাবার কিঞ্চিত প্রশয়েই টিপু কমপিউটার গেমসের এক পাক্কা নেশারু। পড়াশুনোয় তো মনই নেই। সে ভয়ঙ্কর অবাধ্য, জেদি, অত্যন্ত রাগী এক পরিণত যুবক যেন। ডাক্তারের পরামর্শে পাহাড়ের এক প্রত্যন্ত গ্রামে যেখানে ইন্টারনেট নেই, মোবাইল কাজ করে না। ছুটি কাটাতে যায় মা-বাবার সঙ্গে। আশা, এতে যদি টিপুর পরিবর্তন আসে। কিন্তু ঘটে যায় উলটোটাই। টিপুর স্বপ্ন ও ভাবনার খেলার জগত, বাস্তবের সঙ্গে মিলে মিশে যায়। দু-দুজনকে খুনের মামলায় জড়িয়ে মা, বাবা, অহনা আর আদি। কিন্তু সত্যিটা কি? কে খুন করল হোটেলের দুই কমর্চারীকে! এটা নিয়ে ছবির শেষপর্ব কিঞ্চিত থ্রিলার মাখানো। সাধারণ দর্শকের কাছেও, রহস্যময় থাকবে এই খুনের ব্যাপারটা। পরিচালক রাজ চক্রবর্তী সেই রহস্যটাই জিইয়ে রাখতেই চেয়েছেন। ব্যবসায়ীক ফমূর্লার পথ ছেড়ে এই মুহূর্তে খুবই প্রয়োজনীও ছবি ‘হাবজি-গাবজি’। অভিনয়ে শুভশ্রী-পরমব্রত তো ভালই। সেরা টিপুর চরিত্রে সামন্তকদ্যুতি মিত্র। গান নয়, ইন্দ্রদীপের আবহ, সিচ্যুয়েশনকে তৈরি করে।