সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এমন ফাইনাল দেখার অপেক্ষায় ছিল দুই দেশের কবাডিপ্রেমীরা। তবে সেটা আর হল কোথায়! দুই প্রতিপক্ষ ভারত (India) ও ইরান (Iran) সেয়ানে সেয়ানে লড়াই করলেও, জঘন্য রেফারিংয়ের জন্য কলঙ্কিত হল চলতি এশিয়ান গেমসের (Hangzhou Asian Games 2023) মঞ্চ। তাই পুরুষদের কবাডির মেগা ফাইনাল অনেক বছর সবার মনে থাকবে। বিপক্ষের চাপ ও অহেতুক বিতর্কের মধ্যেও শেষ পর্যন্ত লড়াই করল ভারতীয় দল। গতবারের সোনাজয়ী দল ইরানও শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লড়াই করল। খারাপ রেফারিংয়ের জন্য ৪৫ মিনিটের বেশি সময় খেলা বন্ধ থাকার পরে ভারতের ঝুলিতে আসে চার পয়েন্ট। ফলে ৩১-২৯ পয়েন্টে এগিয়ে যায় ভারত। এবং শেষ পর্যন্ত ইরানকে ৩৩-২৯ ব্যবধানে হারিয়ে এশিয়াডের মঞ্চে এই নিয়ে অষ্টমবার সোনা জিতল ভারত।
ফাইনালের এক মিনিট বাকি থাকতে কবাডি ম্যাচে শুরু হয়েছিল চরম নাটক। রেইডে গিয়েছিলেন পবন। ইরানের কোনও খেলোয়াড়কে স্পর্শ করার আগেই তিনি বাইরে চলে যান। পবনের পিছনে তাড়া করে একজন লাইনের বাইরে চলে এসেছিলেন। তাঁকে স্পর্শ করেছিলেন আরও তিন সতীর্থ। ফলে পুরনো নিয়ম অনুযায়ী ভারতের তিন বা চার পয়েন্ট পাওয়ার কথা। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, দু’দলকেই এক পয়েন্ট পাওয়ার কথা। যে হেতু ইরানের এক জন ডিফেন্ডার নিজে থেকেই কোর্টের বাইরে চলে গিয়েছিলেন। রেফারি প্রথমে ভারতকে তিন পয়েন্ট দিয়েছিলেন। ইরানকে এক পয়েন্ট। পরে রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত বদলে দু’দলকেই এক পয়েন্ট করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখনই ভারতের খেলোয়াড়েরা আপত্তি জানান। দুই দলের খেলোয়াড় ও সাপোর্ট স্টাফরাও খারাপ রেফারিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।
কোন কবাডি ম্যাচ এমন চূড়ান্ত ঝামেলার সাক্ষী থেকেছে, মনে পড়ে না। রেফারিদের অপদার্থতার কারণে শুরু হয় চরম ঝামেলা। দুই দলকে ১-১ পয়েন্ট দেওয়া হয়। এর পর চার পয়েন্ট দেওয়া হয় ভারতকে। এক পয়েন্ট দেওয়া হয় ইরানকে। তার পর আবার সিদ্ধান্ত পালটে দুই দলকেই এক পয়েন্ট দেওয়া হল। শুরু হয় চরম ঝামেলা। একটা সময় তো ‘কম্পিটিশন সাসপেন্ডেড’ বলে ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারতের পক্ষে পয়েন্ট চলে আসার জন্য সোনা জিততে আর বেগ পেতে হল না।
[আরও পড়ুন: এশিয়াডে ভারতের সাফল্যের জোয়ার, সাত্ত্বিক-চিরাগের হাত ধরে ব্যাডমিন্টনে এল সোনা]
পুরুষদের কবাডির ফাইনালে প্রথম রেইডে এগিয়ে যায় ইরান। আর প্রথমেই পয়েন্ট ছিনিয়ে নেয় গতবারের সোনাজয়ী দল। শুরুতেই ভুল করে ভারত। ১-০ পয়েন্টে এগিয়ে যায় ইরান। যদিও এর পর রেইডে গিয়ে পয়েন্ট ছিনিয়ে আনে টিম ইন্ডিয়া। ফলে সেই সময় খেলার ফল ছিল ১-১।
ফাইনাল বলে কথা। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছিল। ভারত বা ইরান – কোনও দল কাউকে জায়গা ছাড়ছিল না। কোনও দলই বড় লিড পাচ্ছে না। সর্বাধিক দু’পয়েন্টের লিড পেয়েছিল কোনও দল। সেটা হল ইরান। একটা সময় ৭-৫ পয়েন্টে এগিয়ে ছিল ইরান।
এর পর প্রথমার্ধের মাঝামাঝি সময় লিড অনেকটা বাড়িয়ে ফেলে ইরান। চার পয়েন্টের লিড হয়ে যায়। অবশ্য চাপের মুখে চুপসে না গিয়ে দুরন্ত কামব্যাক করে ভারত। সুনীল কুমার কোর্টে আসার পরে ভারতকে অনেক বেশি জমাট লাগতে শুরু করেছিল। ইরানের রেইডারদের চাপে ফেলে দেয় ভারতীয় ডিফেন্স। ফলে প্রথমার্ধের শেষ দিকে ইরানকে অল আউট করে দেয় ভারত। ১৭-১৩ পয়েন্টে এগিয়ে যায় টিম ইন্ডিয়া।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও ছিল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। প্রথম ছ’টি পয়েন্টের মধ্যে তিনটি পেয়েছিল ভারত। তিন পয়েন্ট এসেছিল ইরানের ঝুলিতে। ফলাফল ছিল ২০-১৭। সেই সময় এগিয়ে ছিল ভারত। প্রথমার্ধের শেষে ফলাফল ছিল ১৭-১৩।
[আরও পড়ুন: বৃষ্টিতে বাতিল ফাইনাল, এশিয়ান গেমস ক্রিকেটে সোনা ভারতের]
পিছিয়ে থাকলেও ইরান লড়াই চালায়। এবং ভারতের উপর চাপ বাড়াতে থাকে। তবে ভারতীয় দলও সোনা জয়ের লক্ষ্যেই নেমেছিল। একটা সময় লিড পেয়ে যায় টিম ইন্ডিয়া। তবুও শেষ পর্যন্ত ভারতকে অল আউট করে স্কোরলাইনকে ২৫-২৫ করে দেয় ইরান।
ভারত এবং ইরান একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল। দু’দলেরই পয়েন্ট ২৮। কে স্নায়ু ধরে রাখতে পারে, তার উপর নির্ভর করছে যে সোনা জিতবে। ঠিক এমন সময় শুরু হয় ঝামেলা। পবনের রেইড নিয়ে শুরু হয় ঝামেলা। ভারতের দাবি ছিল চার পয়েন্ট। এক পয়েন্ট দিতে হবে ইরানকে। আর ইরানের দাবি, কোনও পয়েন্ট পাবে না ভারত। গ্যালারিতে চার পয়েন্টের দাবি ভারতের মহিলা দলের। রেফারিং নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানায় দুই দল। প্রায় ৪৫ মিনিটের বেশি সময় খেলা বন্ধ থাকে। যদিও এর পর ভারতের পক্ষে পয়েন্ট চলে যাওয়ার জন্য সোনা ভারতের পক্ষে অনেক সহজ হয়ে যায়।