বোরিয়া মজুমদার: রোহিত শর্মাকে (Rohit Sharma) অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেতৃত্বের ব্যাটন হার্দিক পাণ্ডিয়ার (Hardik Pandya) হাতে তুলে দিয়েছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। সেই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে ভারতীয় ক্রিকেটে ইতিমধ্যে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। ভবিষ্যতেও এই বিষয় নিয়ে যে আলোচনা ও বিতর্ক চলবে, হার্দিককে রোহিতের ছায়ার সঙ্গে লড়তে হবে, তা বলাই বাহুল্য।
রোহিতকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর প্রশ্নে মুম্বই ফ্র্যাঞ্চাইজির ভূমিকা ঠিক না ভুল? উত্তরাধিকারী হিসাবে হার্দিক যোগ্য কি না, তা তর্কসাপেক্ষ। তার উত্তর ভবিষ্যতের গর্ভে। কিন্তু মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের (Mumbai Indians) অধিনায়ক হিসাবে রোহিতের যে সাফল্য, তা তুলনারহিত। আইপিএলে গত এগারো মরশুমে রোহিতের নেতৃত্বে পাঁচবার শিরোপা জয় করেছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। যে অনবদ্য রেকর্ডের সঙ্গে একমাত্র তুলনা চলতে পারে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে মহেন্দ্র সিং ধোনির অবিশ্বাস্য সাফল্য ও অবদানের। ২০১৩ থেকে ২০২৩। আইপিএলে রোহিতরাজের এটাই সময়পর্ব। কঠিন পরিস্থিতিতে দলের নেতৃত্বভার কাঁধে নিয়ে রোহিত শুধু মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেননি, সঙ্গে উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলী পদক্ষেপে নিজেকে সফল অধিনায়ক এবং নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
পরবর্তীতে তাঁর ভারত অধিনায়ক হওয়ার ভিত্তিভূমিও রচনা করেছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ক্যাপ্টেন হিসাবে রোহিতের সাফল্য।
[আরও পড়ুন: আইপিএলে খেলবেন? নিলামের আগেই মুখ খুললেন ঋষভ পন্থ
আইপিএলের কর্কশ পৃথিবীতে সাফল্যই শেষ কথা। সাফল্য-ব্যর্থতার চড়াই উতরাই ভেঙে তাই একটি টিমের অধিনায়ক হিসাবে এগারো বছর কাটানো, সহজ নয়। রোহিত তা করে দেখিয়েছেন। আইপিএলে একবার শিরোপা জয় করাই যথেষ্ট কঠিন। বিরাট কোহলিও পারেননি। রোহিতের সাফল্য তাই আইপিএল দুনিয়ায় মিথ হয়ে থাকবে। দক্ষ নাবিকের মতোই মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হাল সামলেছেন হিটম্যান। এমনকী ক্রমাগত হারের মধ্যেও তাঁকে বরাবর অবিচল দেখিয়েছে। খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে রোহিতের মুম্বই, এমন দৃশ্য আইপিএলে বিরল নয়। তা সম্ভব হয়েছে অভিজ্ঞ মুম্বইকরের কুশলী নেতৃত্বগুণে।
২০১১-র ফেব্রুয়ারিতে রোহিতের সঙ্গে যখন প্রথম দেখা হয়, জিজ্ঞাসা করেছিলাম– বিশ্বকাপে সুযোগ না পাওয়ায় কতটা হতাশ? রোহিতের উত্তর ছিল, “আমি মোটেই ভালো পারফর্ম করতে পারিনি। সুযোগ পেতে গেলে আমায় আরও ভালো খেলতে হবে।” আক্ষেপমিশ্রিত এই কথাগুলোর মধ্য দিয়ে রোহিতকে যথার্থ অনুধাবন করা যায়। প্রতিভা থাকলেই হয় না। তার সঙ্গে দরকার প্রতিভাকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে নিরলস পরিশ্রম। সেই বীজমন্ত্রেই রোহিত নিজেকে প্রতিষ্ঠা দান করেছেন ভারতীয় ক্রিকেটে, প্লেয়ার এবং নেতা হিসাবে। মনে আছে, আইপিএল চলাকালীন একবার রোহিতকে প্রশ্ন করেছিলাম– একজন অধিনায়কের পক্ষে একটা দলকে নেতৃত্ব দেওয়া কতটা কঠিন, যেখানে ভিন্ন দেশের, ভিন্ন মানসিকতার ক্রিকেটাররা থাকে? জবাবে রোহিত বলেছিলেন, “বিচ্ছিন্নভাবে একটা দলকে কখনও নেতৃত্ব দেওয়া যায় না। টিমের প্রতিটি ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলে, তাদের মানসিকতাকে বুঝতে হবে।”
আসলে অধিনায়ক রোহিতকে বুঝতে গেলে, তাঁর মনটাকে বোঝা দরকার। ২০২০-র দুবাইয়ে আইপিএল ফাইনালে গুরুতর চোটের কারণে অনিশ্চিত ছিলেন হিটম্যান। কিন্তু নিজেকে সরিয়ে না নিয়ে প্রবল ঝুঁকি মাথায় ফাইনাল খেলেছিলেন রোহিত। খেলেছিলেন ম্যাচ জেতানো ৫১ বলে ৬৮ রানের ইনিংস। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ঘরে তুলেছিল তাদের পঞ্চম আইপিএল শিরোপা।
এটাই রোহিত। প্রতিভা আর প্রচেষ্টার সংমিশ্রণে তৈরি আদর্শ ক্রিকেট-যোদ্ধা। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়াটা যাঁর মজ্জাগত। আইপিএলের মঞ্চে তাঁর উত্তরাধিকারী কাউকে পাওয়া তাই দুষ্কর নয়, কার্যত অসম্ভব। তা বললে অত্যুক্তি হয় না।