অর্ণব আইচ: মা এবং দিদির সঙ্গে অশালীন ব্যবহার করছিল মদ্যপ অয়ন মণ্ডল। তা দেখে রাগে ফেটে পড়ে প্রেমিকার ভাই। আর তার জেরেই মারধরে খুন হন হরিদেবপুরের যুবক। প্রাথমিক তদন্তে এমনটাই মনে করছে পুলিশ। তবে ঠিক কী কারণে প্রেমিকা এবং তার মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিল অয়ন, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। এই ঘটনায় অয়নের প্রেমিকা, বাবা, মা, ভাই, ভাইয়ের বন্ধু, গাড়িচালক-সহ মোট সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, পূর্ব পুটিয়ারির দীনেশ পল্লির বাসিন্দা বছর একুশের অয়ন মণ্ডল গত ৫ অক্টোবর, দশমীতে বাড়ি থেকে বেরোন। ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত সাড়ে দশটা। বাড়িতে জানান উদয়াচলের রামকান্তপুরে প্রেমিকার বাড়িতে যাচ্ছেন। রাতে আর বাড়ি ফেরেননি অয়ন। শেষবার রাত ৩টে নাগাদ টাবলু নামে এক বন্ধুর সঙ্গে কথা হয়। খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবেন বলেই ফোনে জানান। তবে বাড়ি আর ফেরেননি অয়ন। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবরের পর অবশেষে একাদশীর বিকেলে পুলিশের দ্বারস্থ হন অয়নের বাবা অমর মণ্ডল। নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পুলিশের দাবি, তৎক্ষণাৎ যুবকের খোঁজখবর শুরু হয়। তল্লাশি অভিযান চলাকালীন পুলিশ খোঁজ পায় মগরাহাটের পুলিশ ক্যাম্পের পাশ থেকে এক অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের দেহ উদ্ধার হয়েছে। সেই ছবি দেখানো হয় অয়নের পরিবারের লোকজনকে। ছবি দেখে সন্তানকে শনাক্ত করেন অয়নের বাবা ও মা।
[আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রে বাস-ট্রাক ভয়াবহ সংঘর্ষ, জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মৃত অন্তত ১১]
এরপরই অয়নের প্রেমিকার পরিবারের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ অয়নের প্রেমিকা, তার বাবা দীপক জানা, মা রুমা জানা, ভাইকে আটক করে জেরা শুরু করে। জেরায় কার্যত ভেঙে পড়েন অয়নের প্রেমিকার পরিবারের লোকজন। জানায়, মদ্যপ অবস্থায় দশমীর রাতে প্রেমিকার বাড়িতে যান অয়ন। সেই সময় অবশ্য প্রেমিকা বাড়িতে ছিল না। তাতে বিরক্ত হন ওই যুবক। প্রেমিকা ফিরে আসার পর তার সঙ্গে দুর্ব্যবহা করেন অয়ন। প্রেমিকার মা ওই গন্ডগোলের মাঝে জড়িয়ে পড়েন। ইতিমধ্যে প্রেমিকার ভাই বাড়িতে ঢোকে। মা এবং দিদির সঙ্গে অয়নকে দুর্ব্যবহার করতে দেখে মাথার ঠিক রাখতে পারেনি কিশোরীর ভাই। ভারী বস্তু দিয়ে অয়নের মাথায় আঘাত করে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় যুবকের। ঘটনা জানাজানি যাতে না হয় তাই দেহ লোপাটের পরিকল্পনা করে অয়নের প্রেমিকার পরিবারের লোকজন। প্রেমিকার ভাইয়ের বন্ধু রাহুল রায় এবং দীপজ্যোতি সাউ নামে দুই বন্ধুকে ফোন করে। তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে একটি পণ্যবাহী গাড়ির বন্দোবস্ত করে। ওই গাড়িতে করে মগরাহাটে নিয়ে যাওয়া হয় দেহ। সেখানেই দেহ ফেলে রেখে পালিয়ে যায় সকলে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে হরিদেবপুর। তদন্তে নেমে পুলিশ অয়নের প্রেমিকা, প্রেমিকার বাবা দীপক জানা, মা রুমা জানা, নাবালক ভাই, ভাইয়ের বন্ধু রাহুল রায় ও গাড়িচালক সুজিত রায়কে গ্রেপ্তার করে। খুনের ঘটনার পর দীপজ্যোতি সাউ ভিনরাজ্যে পালিয়ে যায়। ওড়িশার জাজপুরের কাকার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাকে।