সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: উপলক্ষ ছিল মূল্যবৃদ্ধি, বেকারির প্রতিবাদে জনমত ঘটন করা। কিন্তু দিল্লিতে কংগ্রেসের (Congress) ‘মেহেঙ্গাই পর হল্লা বোল’ র্যালি মূলত রাহুল গান্ধীকে দলের নেতা হিসাবে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার মঞ্চ হয়ে উঠল। অধীর চৌধুরী (Adhir Chowdhury) থেকে শুরু করে অশোক গেহলট পর্যন্ত কংগ্রেসের যেসব তাবড় নেতা দিল্লির ঐতিহাসিক রামলীলা ময়দানের সভায় বলার সুযোগ পেলেন, তাঁদের সবার মুখেই শোনা গেল রাহুল গান্ধীর স্তুতি। মোদি সরকারকে কমবেশি সকলেই আক্রমণ শানালেন, তবে তার থেকেও বেশি করে রাহুল গান্ধীকে (Rahul Gandhi) কংগ্রেস তথা ভারতের ‘রক্ষাকর্তা’ হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা দেখা গেল কংগ্রেস নেতাদের তরফে।
মূল্যবৃদ্ধি এবং বেকারত্বের প্রতিবাদে রবিবার দিল্লিতে মেগা র্যালির আয়োজন করেছিল কংগ্রেস। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষাধিক কংগ্রেসি এদিন দিল্লির জনসভায় উপস্থিত হন। তাঁদের অধিকাংশের হাতেই রাহুল গান্ধীর নামে পোস্টার, মুখে রাহুলের জয়গান। মূল মঞ্চের সামনেই কংগ্রেস সমর্থকদের হাতে দেখা গেল,’আমরা রাহুলকেই সভাপতি (Congress president) চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড। আর মঞ্চ থেকে মুহুর্মুহু শোনা গেল ‘রাহুল গান্ধী জিন্দাবাদ’ স্লোগান। যাতে গলা মেলালেন কংগ্রেস কর্মীরাও। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রাহুল বিরোধী শিবিরের কোনও নেতাকেই এদিন কংগ্রেসের সভামঞ্চের ত্রিসীমানায় দেখা যায়নি।
[আরও পড়ুন: ‘TET নেবেন না, আত্মহত্যা করব’, নিয়োগ তৎপরতা শুরু হতেই পর্ষদ সভাপতিকে হুমকি উত্তীর্ণদের]
অতএব মঞ্চ প্রস্তুত ছিল। যদিও সেই মঞ্চ থেকে রাহুল নিজের সভাপতি হওয়া বা দলের অন্দরে তাঁর দিকে যে লাগাতার আঙুল উঠছে সেসব নিয়ে রা কাটলেন না। স্রেফ নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে মোদি জমানার অসহিষ্ণুতা, ঘৃণা, আর বিভেদের রাজনীতির তত্ত্ব কথা আওড়ালেন। দাবি করে গেলেন, মোদি জমানায় ভারত দু’ভাগে বিভক্ত। যার একটি প্রধানমন্ত্রীর বন্ধু দুই শিল্পপতির। আরেকটি সাধারণ শ্রমিক-মজদূরদের। প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতির বক্তব্য, এখন লড়াই এই দুই ভারতের মধ্যে।
এদিনের সভা থেকে রাহুল বলেন,”আজ দেশের হাল সবাই জানে। মানুষের পকেটে আগুন, হিংসার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। অসহিষ্ণুতা, ঘৃণা বাড়ছে। আরএসএস-বিজেপি (BJP) দেশে বিভাজনের বাতাবরণ তৈরি করছে, ভয়ের আবহাওয়া তৈরি করছে। আজ সাধারণ মানুষ ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত, বেকারত্ব নিয়ে চিন্তিত। এই ভয়ের পরিবেশ না মিটলে দেশ এগোবে না।” প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি এদিন মোদিকে সরাসরি তোপ দেগে বলেন,”ওরা বলে ৭০ বছরে কংগ্রেস কী করেছে? সত্যিই ৭০ বছরে কংগ্রেস দেশকে এই অবস্থায় নিয়ে যেতে পারেনি। আজ সংসদে বলতে দেয় না, সংবাদমাধ্যম আমাদের কথা দেখায় না, সব দুই শিল্পপতির হাতে।” কেন্দ্রীয় এজেন্সির অপব্যবহার নিয়েও এদিন সরব হয়েছেন রাহুল। সোজা বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী শুনে রাখুন, আমাকে ৫ বছর ধরে জেরা করলেও আমি ভয় পাই না।”
[আরও পড়ুন: ‘আমরা খেলছি, আগামিদিনে আরও ভাল খেলা হবে’, দিলীপের গলায় তৃণমূলের স্লোগান]
যদিও কংগ্রেসের এই মেগা আয়োজনকে খুব একটা পাত্তা দেয়নি বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের তোপ, এর আগে চার বার রাহুলকে দলের নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা ‘ব্যর্থ’ হয়েছে। তাই আবার কংগ্রেস সেই চেষ্টা করছে।