দীপঙ্কর মণ্ডল: বহুতল আবাসনের নিচে খোলা জায়গায় মাধ্যমিকের উত্তরপত্র জমা নেওয়ায় আবাসিকদের হেনস্তার মুখে পড়তে হল হেড এক্সামিনারকে। এমনই অভিযোগ কসবার এক অভিজাত আবাসনের বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে। ওইভাবে খাতা সংগ্রহ করার কারণে আবাসনে বহিরাগতের আনাগোনা হচ্ছে, তাতে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা। এই যুক্তি দেখিয়ে খাতা জমা নেওয়া ওই শিক্ষিকাকে তীব্র মানসিক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ। পরে কসবা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বুধবার নিজের আবাসনের নিচে বসে উত্তরপত্র জমা নিচ্ছিলেন কলকাতার এক শিক্ষিকা। তিনি মাধ্যমিকের এক হেড এক্সামিনার। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নির্দেশমতো, মূল্যায়ণ হয়ে যাওয়া খাতা তিনি অন্যান্য শিক্ষকদের কাছে থেকে সংগ্রহ করছিলেন। কসবা ওই আবাসনের নিচে খোলা জায়গায় করোনা আবহে সামাজিক দূরত্ব মেনেই চলছিল খাতা জমা নেওয়ার কাজ। এমন সময়ে এক চিকিৎসক-সহ আবাসনের কয়েকজন বাসি তা দেখতে পেয়ে তুমুল হইচই শুরু করেন। তাঁদের দাবি, বাইরে থেকে লোকজন আসায় COVID-19 সংক্রমণ ছড়াতে পারে। তাই ওই আবাসন চত্বরে খাতা জমা নেওয়ার কাজ করা যাবে না। অভিযোগ, মানসিকভাবে তীব্র নির্যাতন করা হয় শিক্ষিকাকে। এমনকি পুলিশেও খবর দেওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে কসবা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।
[আরও পড়ুন:‘কেন্দ্রের আর্থিক প্যাকেজ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান দুঃখজনক’, টুইট রাজ্যপালের]
পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে দেয়। তবে পুলিশ চলে যাওয়ার পর ফের ওই শিক্ষিকাকে আর খাতা জমা নেওয়ার কাজ করতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। কলকাতায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সদর দপ্তরে এই অভিযোগ গিয়েছে। শিক্ষিকা জানিয়েছেন, “আমার ফ্ল্যাটে কোনও পরীক্ষককে ডাকা হয়নি। তিনজন করে এসে আমার হাতে খাতা জমা দিয়ে চলে গিয়েছেন। আবাসনের বাসিন্দা সুকোমল বিশ্বাস নামে এক চিকিৎসক প্রথমে চেঁচামেচি করেন। তারপর আরও কয়েকজন এসে আমাকে হেনস্তা করে। আমি পুলিশকে মৌখিক জানিয়েছি।”
লকডাউনের মধ্যেই চলছে মাধ্যমিকের খাতা জমা দেওয়ানেওয়ার কাজ। বৃহস্পতিবার উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদও একই নির্দেশিকা জারি করেছে। তবে সংসদ জানিয়েছে, উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষকদের খাতা জমা দিতে হবে না। নির্দিষ্ট ছাত্রছাত্রী কত নম্বর পেয়েছে, তা জানিয়ে দিলেই চলবে।
[আরও পড়ুন: লকডাউন উঠলেই কি চলবে মেট্রো? পরিষেবা শুরু করতে তৎপর কর্তৃপক্ষ]
উলটোদিকে, মাধ্যমিকের খাতা নিয়ে আতান্তরে পড়েছেন পরীক্ষকরা। বেশি সমস্যায় দূরের জেলার শিক্ষকরা। অনেকেই যে স্কুলে পড়ান, সেখান থেকে বহু দূরে থাকেন। এখন সবাই গৃহবন্দি। খাতা দেখা হয়ে গেলেও, তা জমা দেওয়ায় বিপত্তি দেখা দিচ্ছে। কয়েকজন পরীক্ষক জানিয়েছেন, দু-তিনটে জেলা পেরিয়ে তাঁরা প্রধান পরীক্ষকের কাছে খাতা জমা দিতে পারছেন না। এর মূল কারণ লকডাউন। গাড়ি ভাড়া পড়বে আকাশছোঁয়া। বেশ কিছু ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৫হাজার টাকা পর্যন্ত প্রয়োজন। প্রশ্ন উঠেছে, সেই টাকা কে দেবে? মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ পরীক্ষকদের এই বাড়তি টাকা দেওয়ার দায়িত্ব নেয়নি। কর্তারা জানিয়েছেন, নিজেদের উদ্যোগেই পরীক্ষকদের কাজ করতে হবে। সিপিআইয়ের শিক্ষক সংগঠনের নেতা স্বপন মণ্ডলের বক্তব্য, ”লকডাউনের মধ্যে এই তুঘলকী সিদ্ধান্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত। অন্তত ৩১ মে’র পর খাতা জমা দেওয়ার কাজ শুরু করা যেত।”
The post আবাসন চত্বরে মাধ্যমিকের খাতা জমা নেওয়ায় আপত্তি, হেনস্তার মুখে হেড এক্সামিনার appeared first on Sangbad Pratidin.