ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: আমজনতার ‘বোধ-অন’ করতে বোধনের দিন ময়দানে নামানো হয়েছে রাজ্যের প্রায় এক কোটি ‘দুর্গা’কে! বাড়ি বাড়ি ঘুরে করোনা রোগী খুঁজে বের করে এঁরা সচেতনতার পাঠ দিচ্ছেন। মাস্ক, হাত ধোয়া ও স্যানিটাইজার ব্যবহারের গুরুত্ব বোঝাচ্ছেন। অস্ত্র বলতে স্বাস্থ্যদপ্তরের দেওয়া প্রশিক্ষণ, লিফলেট ও ট্যাব। ট্যাবেই বন্দি হচ্ছে গ্রামের রোগীর হাল হকিকত!
রাজ্যজুড়ে যখন দশভুজার আরাধনা চলছিল সেই সময়ে অলক্ষে করোনা (Coronavirus) বধের জন্য তৈরি হয়েছে রাজ্যের প্রায় ১০ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠী। যার সদস্যসংখ্যা নয় নয় করে এক কোটি তো বটেই। এই এক কোটি গাঁয়ের বধূ নিজের পরিবার অর্থাৎ প্রায় পাঁচ কোটি মানুষকে সচেতন তো করছেনই, সেই সঙ্গে গ্রামেও গড়ে তুলছেন করোনারোধক আন্দোলন! আশাকর্মীদের সঙ্গে করোনা রোধে এই সদস্যরাও এবার যুক্তে হলেন। ফলে করোনারোধে প্রমীলাবাহিনী আরও জোরদার হল। নবান্নে চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের সঙ্গে আলোচনার সময় এমন পরিকল্পনার কথা প্রথম বলেছিলেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন চিকিৎসক ডা. অভিজিৎ চৌধুরি। কয়েকদিন পর বিভিন্ন দপ্তরের সচিবদের সঙ্গে আলোচনার সময় ফের বিষয়টি উত্থাপন হয়। ততদিনে অবশ্য অভিজিৎবাবু নিজেই যোগাযোগ করেছেন পঞ্চায়েত ও স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে। করোনা নিয়ন্ত্রণে রাজ্য প্রশাসন ঠিক কী চাইছে তা স্পষ্ট করে বলেছেন। আবার প্রশাসনিকভাবেও পঞ্চায়েত দপ্তরের প্রধান সচিব এম ভি রাও এবং স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের সঙ্গে নবান্নে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। তৈরি হয়েছে করোনা বধের রূপরেখা।
[আরও পড়ুন: রেল আবাসনে রমরমিয়ে চলছে বেআইনি ‘ড্রাইভিং স্কুল’, দুর্ঘটনায় ক্ষুব্ধ আবাসিকরা]
কেমন সেই রূপরেখা? নবান্ন সূত্রে খবর, ষষ্ঠীর সন্ধেয় গোষ্ঠীর সদস্যদের ওয়েবিনারে মিটিং হয়েছে। বোধনের দিনই রাজ্যর মানুষের বোধ-অন করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে দুর্গাদের। প্রায় পাঁচ কোটি নাগরিক স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত। এঁদের মধ্যে করোনা সম্পর্কে সচেতনতা প্রচারকে গণআন্দোলনের পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাইছে রাজ্য প্রশাসন। ডা. অভিজিৎ চোধুরির পর্যবেক্ষণ, “সামগ্রিকভাবে গ্রামের মানুষের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত না করতে পারলে দীর্ঘস্থায়ী করোনা উদ্যোগের সাফল্যে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সেইজন্য বিজ্ঞানী ও প্রশাসনের নীতি নির্ধারকরা ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন। উদ্দেশ্য একটাই, গ্রামের মধ্যে যে সামাজিক শক্তি রয়েছে তাকে এই কাজে যুক্ত করা। রাজ্যে স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা বিশাল। এই মহিলারা ইঙ্গিত দিয়েছেন করোনা লড়াইয়ে তাঁরাও অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারেন। তাই স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে কাজে লাগানো হচ্ছে।”
ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে স্মার্টফোনে ভিডিও কনফারেন্স করেছেন অভিজিৎবাবু। বুঝিয়েছেন বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁরা শুধু খোঁজ নেবেন উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গের পজিটিভের সংখ্যা। এমন কেউ থাকলে পঞ্চায়েত বা স্বাস্থ্যদপ্তরের দেওয়া ট্যাবে নাম-ঠিকানা টাইপ করে তা নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জানিয়ে দেবেন। বাকি কাজ করবে সেই হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা যেমন করোনা আক্রান্তের খোঁজ নেবেন, তেমনই মাস্ক, স্যানিটাইজার, হাত ধোয়া বা ভিড় না করার প্রয়োজনীয়তা বোঝাবেন। লিফলেট বিলি করবেন। অভিজিৎবাবুর কথায়, “আন্দোলনের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু। ফল দ্বিমুখী। বাড়িতে থাকা উপসর্গহীন রোগীর খোঁজ মিলবে, সার্বিক চিত্র পাবে স্বাস্থ্যদপ্তর।”