অভিরূপ দাস: সকালে অ্যালোপ্যাথি, বিকেলে হোমিওপ্যাথি, আবার রাতে আয়ুর্বেদ। একই রোগের তিন রকমের চিকিৎসা করা হয়েছে হাওড়ার (Howrah) নার্সিংহোমে! এহেন মিক্সোপ্যাথি দেখে রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের কর্তাদের চক্ষু জোড়া চড়কগাছে ওঠার উপক্রম হয়েছিল। ঘটনার জেরে হাওড়ার বালি এলাকার লাইফ কেয়ার নার্সিংহোমকে আপাতত অ্যাডমিশন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন (WB Health Commission)।
হাওড়ার রামেশ্বর বিশ্বাস অভিযোগ জানানোর পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। রামেশ্বরবাবুর অভিযোগ, ২০২০ সালের ১৯ আগস্ট তাঁর শাশুড়ি বেবি ঘোষকে (৭৪) লাইফ কেয়ার নার্সিংহোমে ভরতি করা হয়েছিল। বার্ধক্যজনিত সমস্যা ছিল বেবি ঘোষের। ছিল সেপটিক শকের উপসর্গ। ডা. সত্রাজিৎ সামন্তর অধীনে ভরতি হয়েছিলেন বৃদ্ধা। ৩০ আগস্ট তাঁর মৃত্যু হয়। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। গোল বাঁধে বেবি ঘোষের ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে। যাতে চিকিৎসক হিসেবে ডা. অভিজিৎ শর্মার নাম লেখা হয়। যিনি আদতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। “শাশুড়ির তো অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা চলছিল। ডেথ সার্টিফিকেটে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের সই কেন?” প্রশ্ন তোলেন রামেশ্বর।
[আরও পড়ুন: এবার বিচার চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ খোদ কলকাতা হাই কোর্ট]
এরপরই বেবি ঘোষের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজ পত্র ঘাঁটতে গিয়ে দেখা যায় বেশ কিছু প্রেসক্রিপশনে লেখা ডা. ইকবাল। যিনি কিনা আবার আয়ুর্বেদের ডাক্তার। সমস্ত কিছু দেখে শুনে রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন রামেশ্বর। অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসক বাদ দিয়ে অন্য দুই চিকিৎসকের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, একই নার্সিংহোমে একই ব্যক্তির তিন ধরনের চিকিৎসা চলা স্বাভাবিক নয়।
অভিযোগ, ওই সময় অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসকদের মতোই অন্য দুই শাখার চিকিৎসকরাও মেডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করছিলেন। যা কখনও সম্ভব নয়। আপাতত হাওড়ার ওই নার্সিংহোমকে রোগী ভরতি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে। হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য। সেই তদন্ত রিপোর্ট এলেই তা খতিয়ে দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন।