অভিরূপ দাস: আর মুখের কথায় বিশ্বাস নয়। বেসরকারি হাসপাতালগুলির কাছে লিখিত হলফনামা চাইল পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। যেখানে লেখা থাকবে, “চিকিৎসার সম্পূর্ণ অথবা যে অংশটুকুর লেনদেন ক্যাশের মাধ্যমে হবে। সেক্ষেত্রে অ্যাডভাইসরির সমস্ত শর্ত মেনে চলব। সেখানে অ্যাডভাইসরির সমস্ত সুবিধা দেওয়া হবে রোগীকে।” কিন্তু কেন এমন সিদ্ধান্ত?
বেসরকারি হাসপাতালের বিল নিয়ে অভিযোগ নতুন নয়। কেউ বেডের ভাড়া বেশি নিয়েছে। কেউ ওষুধে এক টাকাও ছাড়া দেয়নি। বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে এমন ভুরি ভুরি অভিযোগ জমা পড়ছিল রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনে। কমিশনের অন্দরের খবর, মৌখিক দেওয়া কথা অমান্য করলেও, লিখিত হলফনামা অমান্য করা সহজ হবে না। তা গর্হিত অপরাধও বটে। লিখিত হলফনামা না মানলে আইনি গেরোয় পরতে হতে পারে বেসরকারি হাসপাতালকে।
[আরও পড়ুন: করোনা আবহে কবে থেকে খুলবে স্কুল? ইঙ্গিত দিলেন শিক্ষামন্ত্রী]
সম্প্রতি যে রোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে কমিশনের এহেন সিদ্ধান্ত তিনি অন্বেষা দত্তর মা দেবযানী দত্ত। বাইপাসের ধারের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি হয়েছিলেন অসমের শিলচরের বাসিন্দা দেবযানী দত্ত। হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা বাবদ বিল হয় ১৪ লক্ষ টাকা। স্বাস্থ্যবিমার থেকে মাত্র ৩ লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। বাকি ১১ লক্ষ টাকা নগদ দেন অন্বেষা দত্ত। স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, “বিল খতিয়ে দেখেছি। প্রচুর অসঙ্গতি। আমাদের কোনও অ্যাডভাইসরি মানা হয়নি।” অ্যাডভাইসরি যেখানে মানছে না, সেখানে স্বাস্থ্য কমিশনের নির্দেশ কি মানবে সমস্ত বেসরকারি হাসপাতাল? উঠছে প্রশ্ন।
কমিশনের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে পূর্ব ভারতের হাসপাতাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রূপক বড়ুয়া জানিয়েছেন, “আমরা এখনও কোনও নোটিস হাতে পাইনি। পাওয়ার পর সমস্ত বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসব। তারপর আমরা নিজেদের সিদ্ধান্ত জানাব।” সোমবার কমিশন চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যবিমার মাধ্যমে যে টাকা প্রদান করা হয় তা নিয়ে কিছু বলার নেই। সেটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আর বিমা সংস্থার অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু রোগীর পরিবারকে সরাসরি কিছু টাকা দিতে হয়। সেখানে অ্যাডভাইসরি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে।
[আরও পড়ুন: বাগুইআটিতে বিবাহ অনুষ্ঠানের মাঝেই ভয়াবহ বিস্ফোরণ, মৃত অন্তত এক]
উল্লেখ্য, আমজনতাকে আর্থিক নিরাপত্তা দিতে ২০২০ সালে অ্যাডভাইসরি জারি করেছিল রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। যেখানে বলা হয়েছিল, ওষুধে অন্তত ১০ শতাংশ এবং চিকিৎসার অন্যান্য সরঞ্জামে ২০ শতাংশ ছাড় দিতে হবে। আরও বলা হয়েছিল, করোনা রোগীকে দেখার জন্য সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা ভিজিট নিতে পারবেন চিকিৎসকরা। কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে অনেক আশঙ্কাজনক রোগীর ক্ষেত্রে এই ভিজিট বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা করা যাবে।