সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বর্ষার ভেজা দিনে গরম গরম খিচুরি-ইলিশ! কিংবা মেঘ-বিকেলে ধোঁয়া ওঠা চা, সঙ্গে রকমারি মুচমুচে রেসিপি। এসব আমাদের রসনা তৃপ্ত করে বটে। তবে, বর্ষাতেই সবচেয়ে বেশি আশঙ্কা থাকে লিভারের সংক্রমণের। এই সময়ে লিভারের উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। বর্ষায় জল ও খাদ্যদূষণের কারণে হেপাটাইটিস এ, হেপাটাইটিস ই, টাইফয়েডের মতো জলবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ে। এই রোগগুলো সরাসরি লিভারকে আক্রান্ত করে। এমনকী এই সময় বাতাসে আর্দ্রতা বেশি হওয়ায় ঘামের মধ্যে দিয়ে শরীর থেকে অতিরিক্ত তরল বেরিয়ে যায়। ফলে, আর্দ্র পরিবেশেও শরীর দ্রুত ডিহাইড্রেশনের শিকার হতে পারে। শরীরের এই জলশূন্যতা লিভারের কার্যকারিতা কমিয়ে এনে লিভারে টক্সিন জমা হতে সাহায্য করে। হজমের সমস্যাও এই বর্ষাকালে খুব বেশি রকম ভাবে লক্ষণীয়। তাই, আগাম সতর্ক না হলে সমস্যায় পড়তে পারেন। এই আর্দ্র ঋতুতে খাদ্য তালিকায় যোগ করুন পাঁচটি খাবার। এই খাবারগুলি লিভারের স্বাস্থ্য অক্ষুণ্ণ রাখতে দারুণ ভাবে সাহায্য করে।
হলুদ: হলুদের প্রধান সক্রিয় উপাদান হল কারকিউমিন। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহ-বিরোধী গুণসম্পন্ন যৌগ। কারকিউমিন লিভারের কোষগুলিকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এটি পিত্ত উৎপাদনে সাহায্য করে, যা হজমে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ নির্গমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে কারকিউমিন লিভারে চর্বি জমতে দেয় না। একইসঙ্গে তা লিভারের নতুন কোষ গঠনে সহায়ক।
সবুজ শাকসবজি: কলমি শাক, পুঁইশাক, কচু, থানকুনি, পালং শাক, বাঁধাকপি প্রভৃতি সবুজ শাকসবজি ভিটামিন (A, C, K), খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এগুলিতে উচ্চ মাত্রার নাইট্রেট এবং পলিফেনল থাকে যা লিভারের ডিটক্সিফিকেশন এনজাইমগুলোর উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। শরীর থেকে ক্ষতিকারক পদার্থ অপসারণে লিভারের প্রাকৃতিক ক্ষমতাকে উন্নত করে এই সবজিগুলি।
সাইট্রাস ফল: মোসাম্বি, কমলালেবু, কাগজিলেবু প্রভৃতি সাইট্রাস ফল ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। ভিটামিন সি লিভারকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। সাইট্রাস ফল পিত্ত উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে, যা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত ও লিভারকে বিষমুক্ত করে। এগুলিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতিকর প্রভাব কমায়।
আদা: আদার মধ্যে থাকা জিঞ্জেরল এবং শোগাওল নামক শক্তিশালী যৌগগুলি প্রদাহ-বিরোধী। একইসঙ্গে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আদা আমাদের হজমে সহায়ক এনজাইমগুলির উৎপাদনকে বাড়িয়ে দেয়। ফলে বদহজম, পেট ফোলাভাব ও গ্যাসের সমস্যা কমে। লিভার থেকে চর্বি ও বিষাক্ত পদার্থ বের করার পাশাপাশি লিভারের প্রদাহ কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পেঁপে: পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ফাইবার এবং পাপাইন নামক একটি এনজাইম থাকে। পাপাইন প্রোটিন ও ফ্যাট হজমে সহায়ক। পেঁপে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। লিভারের কোষকে সুস্থ রাখে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কাঁচা পেঁপে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা কমাতেও কার্যকরী। পেঁপেতে থাকা কিছু উপাদান যেমন ড্যানডেলিওন ও মিল্ক থিসল লিভারকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
তাই, বর্ষাকালে এই খাবারগুলো নিয়মিত খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে লিভারের চাপ কমিয়ে তার কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখুন। তবে, যেকোনও গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
