সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বায়ু দূষণের মতো পরিবেশগত সমস্যায় আমাদের দেশ যে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে, তা বলাইবাহুল্য। বিশ্বের ৩০টি সবচাইতে দূষিত শহরের মধ্যে ২১টি রয়েছে ভারতেই। অতিরিক্ত বায়ু দূষণে এপর্যন্ত বহু মানুষই আক্রান্ত হয়েছেন ব্রঙ্কাইটিস, এম্ফিসিমা, অ্যাজমা, সিওপিডি, ফুসফুসের ক্যানসারের মতো জটিল রোগে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, মগজেও টিউমার তৈরি হতে পারে দূষণের জেরে। ভীতি জাগানো এই তথ্যটি তুলে ধরেছে আমেরিকার অকাডেমি অফ নিউরোলজি মেডিকেল জার্নাল।
গবেষণায় বলা হচ্ছে, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে তীব্র বায়ু দূষণের সংস্পর্শে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্রেন টিউমার (Brain Tumour) হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ধরনের টিউমারকে বলা হয় মেনিনজিওমা। এই টিউমারের উৎপত্তি ব্রেন ও স্পাইনাল কর্ডকে ঘিরে থাকা আবরণি কলা মেনিনজেস নামক এক ঝিল্লি। এটি খুব সাধারণ ধরনের একটি ব্রেন টিউমার। ধীর গতিতে এই টিউমার বেড়ে ওঠে। ফলে, রোগ শনাক্ত করা অনেক ক্ষেত্রেই খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবে আশার কথা, গবেষকরা জানাচ্ছেন, এই টিউমার থেকে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা প্রায় নেই বললেই চলে।
সম্প্রতি ডেনমার্কে এই গবেষণাটি চালানো হয়। ৪০ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওপর ২১ বছর ধরে এই গবেষণা চলে। উক্ত সময়সীমার মধ্যে ১৬৫৯৬ জনের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমে টিউমার ধরা পড়ে। যার মধ্যে ৪৬৪৫ জন মানুষ মেনিনজিওমাতে আক্রান্ত ছিলেন। গবেষকরা ১০ বছরের কেস স্টাডি করে দেখেন যাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে তীব্র বায়ু দূষণের সংস্পর্শে ছিলেন একমাত্র তাঁরাই মেনিনজিওমায় আক্রান্ত হয়েছেন।
এই গবেষণায় সরাসরি বায়ু দূষণকে মেনিনজিওমার জন্য দায়ি করা হলেও, কিছু সীমাবদ্ধতা থেকে গেছে। গবেষকরা শুধুমাত্র যানবাহন ও বাইরের পরিবেশে বায়ুর মান যাচাই করে পরীক্ষা চালিয়েছেন। অফিস-কাছারি কিংবা ঘরের ভিতরের পরিবেশের বায়ুর অবস্থাকে তাঁরা বিবেচনায় আনেননি।
কোপেনহেগেনের ডেনিশ ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের এক গবেষক হভিডফেল্ড জানিয়েছেন, বিভিন্ন ধরনের বায়ু দূষণ স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মস্তিষ্কের টিস্যুতে সরাসরি প্রভাব ফেলতে সক্ষম নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের মতো উপাদান। এর ফলে এটা স্পষ্ট যে বায়ু দূষণের ফলে শুধু ফুসফুস বা হার্ট নয়, ব্রেনও আক্রান্ত হতে পারে। যদিও এ বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন হভিডফেল্ড। একইসঙ্গে তিনি জানান, বায়ু দূষণের মাত্রা কমাতে পারলে ব্রেন টিউমারের ঝুঁকিও কমবে।
