সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আচমকাই বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ওপার বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমণি। জানা গিয়েছে, প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েই এই অসুস্থতা। এমন ধরনের শারীরিক সমস্যায় পড়তে পারেন আপনিও। জেনে নিন এর মোকাবিলার উপায়গুলি।
সম্প্রতি বাংলাদেশের মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপর বায়ুসেনার বিমান ভেঙে পড়ে ৩১ জন শিক্ষার্থীর মৃত্যু ও কয়েকশো আহত হওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে। এই হৃদয়বিদারক ঘটনা সহ্য করতে না পেরেই প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত হন অভিনেত্রী। সোশাল মিডিয়ায় নিজের অসুস্থতার খবর জানিয়ে পরীমণিকে লিখতে দেখা গিয়েছে, 'গতকালের দুর্ঘটনায় ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর পোড়া শরীরের ছবি/ভিডিও দেখে আমার খুব খারাপ ভাবে প্যানিক অ্যাটাক হয়! রাতে হসপিটালে অ্যাডমিশন নিতে হয়। বুকের ভেতর ধড়ফড় করে শুধু।' এমন ধরনের সমস্যা হতে পারে যে কারওই। জেনে নিন বিশদে।
কী এই প্যানিক অ্যাটাক?
প্যানিক অ্যাটাক একধরনের তীব্র মানসিক উদ্বেগ বা ভয় যার ফলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট বা মাথা ঘোরার মতো শারীরিক উপসর্গ দেখা যায়। সাধারণত কোনও ব্যক্তি তীব্র ভয় বা উদ্বেগে আক্রান্ত হলে প্যানিক অ্যাটাকের সম্ভাবনা দেখা দেয়। এর ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যক্তি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।
কী কী লক্ষণ দেখা দেয়?
প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত হলে সাধারণত ১০ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই এর লক্ষণগুলি প্রকাশ পায়। অনেক সময় তা এক ঘণ্টারও বেশি সময় পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। লক্ষণগুলি হল:
(১) হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়ে বুক ধড়ফড় করা।
(২) নিশ্বাস নিতে অসুবিধা। মনে হয় যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে।
(৩) অস্থিরতা বা জ্ঞান হারানোর মতো অনুভূতি।
(৪) হঠাৎ করে ঠান্ডা বা গরম লাগতে শুরু করে।
(৫) শরীর কাঁপতে থাকে। স্নায়ু অবশ হয়ে আসে। হাতে-পায়ে অসাড়তা দেখা দেয়।
(৬) মানসিক ভারসাম্যহীনতা।
কী করবেন?
প্যানিক অ্যাটাক হলে আপনার কাছাকাছি কেউ থাকলে তাঁকে জানান। উদ্বেগ বা ভয়ের কারণ দূর হলে রোগী অনেক সময় স্বস্তি পান। অন্যথায় অবস্থা জটিল হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার।
চিকিৎসা পদ্ধতি
'সাইকোথেরাপি' ও 'মেডিকেশন' দুই পদ্ধতিতেই চিকিৎসা করা যায়। প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত হলে প্রথমেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। প্যানিক ডিসঅর্ডারের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী থেরাপিগুলির একটি হল কগনিটিভ বিহেভিয়ারিয়াল থেরাপি (CBT)। এই পদ্ধতিতে থেরাপিস্ট রোগীকে ধীরে ধীরে অ্যাটাকের ট্রিগারগুলির মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন, যাতে রোগীর ভয় কমে। এছাড়াও অ্যান্টি ডিপ্রেসেন্টস ও বেঞ্জোডায়াজেপিনস জাতীয় ওষুধ চিকিৎসকেরা রোগীর মানসিক ও শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করে প্রয়োগ করে থাকেন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধগুলি খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। পর্যাপ্ত ঘুম, খাদ্য ও ব্যায়াম রোগীকে তাড়াতাড়ি সেরে উঠতে সাহায্য করে।
প্যানিক অ্যাটাক হলে দ্রুত একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পরিকল্পনা রোগীকে এই অবস্থা থেকে দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে। প্যানিক অ্যাটাককে শারীরিক দুর্বলতা মনে করে ভুল করবেন না। অযথা দেরি বা অবহেলা করলে পরিস্থিতি কিন্তু আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
