উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ডায়াবেটিস আজকাল একটি সাধারণ রোগে এসে দাঁড়িয়েছে। ঘরে ঘরে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু এই দুই রোগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কিডনির সমস্যাও। আসলে এই তিন সমস্যা একে অপরের সঙ্গে গভীর ভাবে যুক্ত। যেকোনও একটির অবনতি বাকি দুটিকেও খারাপ করে তোলে। এই 'বিপজ্জনক ত্রিভুজ’-এর হাত থেকে কীভাবে রেহাই পাবেন, তা জানাতেই পরামর্শ দিলেন বিশিষ্ট নেফ্রোলজিস্ট ড. তারক চৌধুরী (DM Nephrology )।
কোন পথে বাড়ছে ঝুঁকি?
দেহের ভেতরের এই তিনটি অবস্থা পরস্পরকে এমনভাবে প্রভাবিত করে যে রোগের গতিপথ দ্রুত বিপজ্জনক দিকে এগোতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ: উচ্চ রক্তচাপ রক্তনালীর দেওয়ালে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিন ধরে এই চাপ চলতে থাকলে কিডনির সূক্ষ্ম রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন নেফ্রন সঠিকভাবে রক্ত পরিশোধন করতে পারে না। এভাবেই তৈরি হয় ক্রনিক কিডনি ডিজিজ।
ডায়াবেটিস: কিডনি অকেজো হওয়ার আরেক কারণ রক্তে উচ্চ শর্করার উপস্থিতি। রক্তে গ্লুকোজের আধিক্য কিডনিকে অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করায়। দীর্ঘ দন ধরে এমনটা চলতে থাকলে কিডনির ফিল্টারিং অংশ মোটা ও শক্ত হয়ে যায়। ফলে রক্তের প্রোটিন প্রস্রাবে চলে আসে। এটি ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথির প্রথম লক্ষণ।
কিডনি রোগ: সমস্যা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে যখন
কিডনির কাজ কমে গিয়ে দেহে সোডিয়াম ও জল জমে রক্তচাপ আরও বেড়ে যায়। আবার রক্তচাপ বাড়লে কিডনি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়—এভাবেই তৈরি হয় এক ভয়ংকর ‘ভিশাস সার্কেল’।
কীভাবে রুখবেন এই বিপজ্জনক ত্রিভুজকে?
১) রক্তচাপ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। টার্গেট সাধারণত ১৩০/৮০ mmHg-এর নিচে থাকা বাঞ্ছনীয়। ACE inhibitors বা ARB ওষুধ অনেক ক্ষেত্রে কিডনিকে বিশেষ সুরক্ষা দেয়।
২) ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত A1C পরীক্ষা করুন।
দীর্ঘমেয়াদি সুগার কন্ট্রোল ৭% এর নিচে রাখার পরামর্শ।
৩) নুন খাওয়া কমান। নুন কমালে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং কিডনির ওপর চাপ কমে।
৪) বছরে একবার কিডনি পরীক্ষা করুন।
৫) শরীরচর্চা এবং পর্যাপ্ত জলপান করুন।
সতর্কতা
ড. তারক চৌধুরীর মতে, কিডনি নীরবে নষ্ট হয়। লক্ষণ দেখা গেলে অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। তাই যারা হাই ব্লাড প্রেশার বা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাঁদের অবশ্যই বছরে অন্তত একবার কিডনি পরীক্ষা করা উচিত। প্রতিরোধই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় শক্তি। সময়মতো পরীক্ষা, সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রার সামান্য পরিবর্তনেই কিডনিকে দীর্ঘদিন সুস্থ রাখা সম্ভব।
