ব্রেন স্ট্রোক কোনও বয়স মানে না। আজকাল অতিরিক্ত মানসিক চাপে অনেকেই অল্প বয়সে স্ট্রোকের স্বীকার। কখন সাবধান হবেন? কীভাবে ফিরে পাবেন স্বাভাবিক জীবন জেনে নিন। বললেন ইন্টারভেনশন্যাল নিউরোলজিস্ট ডা. মনোজ মাহাতা।
স্ট্রোক হল এমন এক সমস্যা যেখানে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ বা বাধাপ্রাপ্ত হয়। এতে মস্তিষ্কের কোষ অক্সিজেন ও পুষ্টি না পেয়ে দ্রুত মারা যেতে শুরু করে, যার ফলে নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।
স্ট্রোক কোনও সাধারণ ব্যাপার নয়
ভারতে প্রতিবছর প্রায় ১৮ লাখ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। ইন্ডিয়ান স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে স্ট্রোকজনিত মৃত্যুর হার সারা বিশ্বের গড় হারের থেকেও বেশি। ফলে, সচেতনতা এবং সময়মতো চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি।
স্ট্রোকের ধরন
স্ট্রোক সাধারণত ৩ ধরনের হয়।
ইসকেমিক স্ট্রোক: মস্তিতে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীতে জমাট বাঁধার ফলে হয়। এটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায় (প্রায় ৮৭%)।
হেমোরেজিক স্ট্রোক: কোনও রক্তনালী ফেটে রক্তপাত হলে হয়। এটি তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়, তবে মারাত্মক।
TIA বা মিনি স্ট্রোক: অস্থায়ী রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে সাময়িক লক্ষণ তৈরি করে, কিন্তু বড় স্ট্রোকের আগাম সংকেত হতে পারে।
কারণ ও ঝুঁকি
স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়ায় এমন কিছু সাধারণ কারণ: উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান, হৃদরোগ, উচ্চ কোলেস্টেরল, স্থূলতা ও অনিয়মিত জীবনযাপন, বয়স ও পারিবারিক ইতিহাস।
লক্ষণ (BEFAST স্মরণে রাখুন)
B (Balance): হঠাৎ ভারসাম্য হারানো।
E (Eyes): এক বা উভয় চোখে দৃষ্টির সমস্যা।
F (Face): মুখের একপাশ ঝুলে যাও।
A (Arms): এক বা উভয় হাত দুর্বল হয়ে পড়া।
S (Speech): কথা জড়িয়ে যাওয়া।
T (Time): দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে।
চিকিৎসা ও আধুনিক পদ্ধতি
ইসকেমিক স্ট্রোক: ক্লট ভাঙার ওষুধ (TPA), মেকানিক্যাল প্রমবেক্টমি।
হেমোরেজিক স্ট্রোক: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, সার্জারি বা কয়েলিং।
স্ট্রোক চিকিৎসার ক্ষেত্র দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে কিছু সাম্প্রতিক অগ্রগতি হল-
স্টেম সেল থেরাপি: এক্ষেত্রে স্ট্রোকের পরে মস্তিষ্কের ক্লট ঠিক করতে স্টেম সেলের ব্যবহার কীভাবে কার্যকর হতে পারে তা অন্বেষণ করা হচ্ছে। এখনও পরীক্ষামূলক হলেও, এই পদ্ধতিটি দীর্ঘমেয়াদী ফল দিতে পারে বলেই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন গবেষকরা।
মস্তিষ্ক-কম্পিউটার ইন্টারফেস: স্ট্রোক থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের ক্ষতিগ্রস্থ নিউরাল পথগুলিকে বাইপাস করে পক্ষাঘাতগ্রস্ত অঙ্গগুলির নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করতে এই ডিভাইসগুলি তৈরি করা হচ্ছে।
ফিরে পাওয়া স্বাভাবিক জীবন
স্ট্রোকের ফলে শরীরের একপাশে পক্ষাঘাত, কথা বা দৃষ্টির সমস্যা, মানসিক অবসাদ হতে পারে। তবে সময়মতো চিকিৎসা ও নিয়মিত পুনর্বাসনে অনেকেই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।
প্রতিরোধ
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, ওষুধ নিয়মমতো খাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান বন্ধ, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে পরবর্তী স্ট্রোক প্রতিরোধ সম্ভব।
পরামর্শ-8046961837
