shono
Advertisement
Prescription Plus

বর্ষবরণে সুরারসে ভিজতে চাইছেন? 'বিঞ্জ ড্রিংকিং' নিয়ে সতর্কবার্তা চিকিৎসকের

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, যে কোনও ধরনের মদই শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।
Published By: Buddhadeb HalderPosted: 05:55 PM Dec 31, 2025Updated: 06:23 PM Dec 31, 2025

পার্টি টাইম মানেই ফান, মিউজিক আর চিয়ার্স। কিন্তু এই উল্লাসের মাঝেই লুকিয়ে থাকে বিপদের হাতছানি। মদ্যপান শুধু গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকিই বাড়ায় না, ধীরে ধীরে শরীরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি করে এবং অনেক সময় কোনও আগাম সংকেত ছাড়াই অকালমৃত্যুর কারণ হয়ে উঠতে পারে। অল্পতে ক্ষতি নেই- বলা যায় না। সতর্ক করলেন মণিপাল হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট ডা. সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক এই বিধিবদ্ধ সতর্কবার্তা তামাক হোক বা মদ, সবেতেই স্পষ্টভাবে লেখা থাকে। তবু দেশে ও রাজ্যে মদ্যপানের প্রবণতা কমার বদলে ক্রমশ বাড়ছেই। যারা নিয়মিত মদ্যপান করেন, তাঁদের অনেকেই বছরের পর বছর ধরে একটি যুক্তি তুলে ধরেন-বৈজ্ঞানিক গবেষণা নাকি বলছে, প্রতিদিন অল্প পরিমাণ মদ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু বাস্তবে এই যুক্তি আসলে এক ধরনের আত্মতুষ্টির অজুহাত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্পষ্ট বক্তব্য-যে কোনও পরিমাণে, যে কোনও ধরনের মদই শরীরের পক্ষে ভালো নয়। মদের আসক্তির কবলে নারী-পুরুষ, কোনও বয়সই এখন আর বাধ সাধছে না।

তার উপর বছরের শেষের পার্টি। চারদিকে বাঁধভাঙা আনন্দ, নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে 'চিয়ার্স। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে চুটিয়ে পার্টি আর মদ্যপান-এটাই যেন এখন উৎসবের সংজ্ঞা। শীতও পড়েছে ভালোই, ফলে সব ভুলে সুরারসে ভিজতে চাইছে মন-প্রাণ। মনে হয়, এক-দুদিনে আর কী হবে! সত্যিই কি তা-ই? উৎসবের মুহূর্তে এই 'একটু বেশি 'ই যে ধীরে ধীরে বড় বিপদের দিকে ঠেলে দেয়, সেই বাস্তবটা আমরা কতজন ভাবি?

শীত পড়েছে, তার উপর আবার ছুটি আর উৎসবের আমেজ। উল্লাসের সঙ্গে জুড়ে যায় নানা অজুহাত-তার মধ্যে অন্যতম, মদ নাকি শরীর গরম রাখে। তাই সন্ধে নামলেই মন ছটফট করে মদ্যপান করতে। বন্ধু জুটলে তো কথাই নেই, আর না হলে একাই দু'পাত্র পান করাটা আজ প্রায় ঘরে ঘরে চেনা ছবি। অথচ শীতকালে এমনিতেই রক্তের ঘনত্ব বাড়ে, বায়ুদূষণ বেশি থাকে এবং ডিহাইড্রেশন হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এই সময় আমরা স্বাভাবিকভাবেই একটু জবুথবু থাকি, শারীরিক পরিশ্রম কম হয়। তার উপর ধূমপান ও মদ্যপান যুক্ত হলে এই মরশুমে হৃদরোগজনিত মৃত্যু-হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক-বাড়তে দেখা যায়।

এক ফোঁটাও না
কিছু বছর আগে পর্যন্ত বিদেশের নানা গবেষণায় বলা হয়েছিল, সীমিত পরিমাণে রেড ওয়াইন শরীরের পক্ষে উপকারী, কারণ এতে 'ভালো' কোলেস্টেরলের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা স্পষ্ট করে দিয়েছে-আমাদের দেশের মানুষের জেনেটিক প্রোফাইল ও আবহাওয়ার প্রেক্ষিতে ভারতীয়দের জন্য যে কোনও ধরনের মদ্যপানই ক্ষতিকর। যদিও মদ্যপান পুরুষ-মহিলা উভয়ের পক্ষেই ক্ষতি ডেকে আনে, তবে ভারতীয় মহিলাদের ক্ষেত্রে তা একেবারেই অনুচিত।

গোড়ায় গলদ-অ্যালকোহলের বিপাক প্রক্রিয়া
খাবারের মতোই আমরা যা কিছু খাই বা পান করি, তা শরীরে বিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শোষিত হয়। মদের বিপাকের জন্য যে উৎসেচকটির প্রয়োজন, তা হল অ্যালকোহল ডিহাইড্রোজেনেস। এই উৎসেচক বিষাক্ত ইথানলকে অ্যাসিটালডিহাইডে পরিণত করে। এরপর অ্যালডিহাইড ডিহাইড্রোজেনেস সেই অ্যাসিটালডিহাইডকে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর অ্যাসিটেটে রূপান্তরিত করে। এই প্রক্রিয়ায় লিভারের আরও দুটি উৎসেচক-সাইটোক্রোম পি-৪৫০ (CYP2E1) ও ক্যাটালেস-গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। কিন্তু ভারতীয়দের শরীরে অ্যালকোহল ডিহাইড্রোজেনেসের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম, এবং পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ক্ষেত্রে তা আরও কম। ফলে বিষাক্ত ইথানল যথাযথভাবে ভাঙতে না পারলে শরীরে মদের ক্ষতিকর প্রভাব কতটা গভীর হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।

ক্ষতির ক্ষেত্র
১)
হজমতন্ত্র-আলসার, গ্যাস্ট্রাইটিস
২) লিভার-ক্রনিক লিভার ডিজিজ, লিভার সিরোসিস, অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস ও অ্যালকোহলিক লিভার ডিজিজ।
৩) কিডনি-ডিহাইড্রেশনের কারণে শরীরের তরল ভারসাম্য নষ্ট হয়, যার ফলস্বরূপ অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি বা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ হতে পারে।
৪) হৃদযন্ত্র রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, হৃদস্পন্দনের গতি কমা বা বেড়ে যাওয়া কিংবা অনিয়মিত হওয়া, হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ব্যাহত হওয়া, এমনকী, হার্ট ফেলিওরও হতে পারে। পাশাপাশি খারাপ কোলেস্টেরল বেড়ে যায়।
৫) আন্তর্জাতিক এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার (IARC) অনুযায়ী মদ্যপান গ্রুপ-এ কার্সিনোজেন। অর্থাৎ অ্যালকোহল অন্তত সাত ধরনের ক্যানসারের জন্য দায়ী, যার মধ্যে রয়েছে পাকস্থলীর ক্যান্সার এবং মহিলাদের স্তন ক্যানসার।
৬) ডায়াবেটিস-গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বহু ক্ষেত্রে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের জন্য মদ্যপান দায়ী

সঙ্গদোষ
খালি পেটে মদ্যপান করলে আলসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সাধারণত মদের সঙ্গে নোনতা ভাজাভুজি খাওয়া হয়, যা রক্তচাপ বাড়ায়, ডিহাইড্রেশন ঘটায়, গ্যাস্ট্রাইটিসের সম্ভাবনা বাড়ায় এবং খারাপ কোলেস্টেরল বাড়িয়ে তোলে। আবার অনেকেই এমনিতে ধূমপান না করলেও মদ্যপানের সময় সিগারেট ধরান। এই দুইয়ের যুগলবন্দি শরীরের ক্ষতি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

কতটা-মাপকাঠি কোথায়
কতটা মদ শরীর সহ্য করতে পারবে, তা মূলত লিভারের অবস্থার উপর নির্ভর করে। দু'ঘণ্টার মধ্যে ৩০-৪৫ মিলিলিটার মদ তিনবারের বেশি পান করলে তাকে 'বিঞ্জ ড্রিংকিং' বলা হয়, যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। সপ্তাহে যদি কেউ ৩০-৪৫ মিলিলিটার মদ ১০-১৫ বারের বেশি পান করেন, তা হলে তাঁর অ্যালকোহলিক লিভার ডিজিজ হওয়ার ঝুঁকি ২০-৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। আরও আশ্চর্যের বিষয়, তথাকথিত 'হালকা' বা 'সীমিত' মদ্যপান-সপ্তাহে দেড় লিটার ওয়াইন, সাড়ে তিন লিটার বিয়ার বা প্রায় সাড়ে চারশো মিলিলিটার অন্যান্য মদ--অর্ধেকেরও বেশি অ্যালকোহলজনিত ক্যানসারের জন্য দায়ী।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • শীতকালে এমনিতেই রক্তের ঘনত্ব বাড়ে, বায়ুদূষণ বেশি থাকে এবং ডিহাইড্রেশন হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
  • এই মরশুমে হৃদরোগজনিত মৃত্যু-হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক-বাড়তে দেখা যায়।
  • কতটা মদ শরীর সহ্য করতে পারবে, তা মূলত লিভারের অবস্থার উপর নির্ভর করে।
Advertisement