সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝেন না অনেকেই। অন্যান্য অসুখের ক্ষেত্রে আমরা যতটা সচেতন, দাঁতের ক্ষেত্রে ততটাও নই। কারণ, দাঁতে ব্যথা হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যথার ওষুধ কিনে খেতে দেখা যায়। তাতে হয়তো সাময়িক ভাবে ব্যথা কমে। কিন্তু রোগ কমে না। বরং দাঁতের রোগ সঙ্গে করে ডেকে নিয়ে আসে আরও একাধিক রোগ। ভারতের মোট জংসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ দাঁতের সমস্যায় ভোগেন। এমনটাই জানা গিয়েছে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায়।
ন্যাশনাল ওরাল হেলথ সার্ভে ও অন্যান্য গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, ১৫ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের ৬২ শতাংশ দাঁতের রোগে আক্রান্ত। ৩৫-৪৪ বছরের মধ্যে দাঁতের রোগে ভুগছেন ৭৯.২ শতাংশ মানুষ। এছাড়া ৬৫-৭৪ বছরের মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষের দাঁতের রোগ রয়েছে। দাঁতের রোগকে আমরা খুব একটা পাত্তা দিই না। কিন্তু জানেন কি দাঁতের সমস্যা থেকে বাড়তে পারে স্ট্রোকের ঝুঁকি? গুরুতর মাড়ির রোগের কারণে মুখগহ্বরে যে প্রদাহ ও ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়, তা রক্তপ্রবাহে মিশে যায়। এই প্রদাহ হৃদপিণ্ড ও রক্তনালীকে সংকুচিত করে এবং ধমনী ব্লক করে দিতে পারে, যা ইস্কেমিক স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। তাই, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সঠিক দাঁতের পরিচর্যা জরুরি। ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল এবং ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সম্প্রতি একটি গবেষণা চালান। ২০২৫ সালে 'নিউরোলোজি'-তে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। জানা যাচ্ছে, যে সমস্ত প্রাপ্তবয়স্কদের একই সঙ্গে মাড়ির রোগ ও দাঁতের ক্ষয় রয়েছে, তাঁদের ইসকেমিক স্ট্রোকের ঝুঁকি সাধারণের তুলনায় ৮৬ শতাংশ বেশি।
দাঁতের রোগ থেকে বাঁচতে কী করবেন?
১. প্রতিদিন কমপক্ষে দু'বার ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন। ব্রাশ করার সময় দাঁত ও মাড়িকে আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন, জোরে জোরে ঘষবেন না।
২. ব্রাশটি দাঁতের ওপর ৪৫ ডিগ্রি কোণে ধরে বৃত্তাকার গতিতে এবং ওপর-নিচে পরিষ্কার করুন। আড়াআড়িভাবে বা সোজাসুজি ঘষা এড়িয়ে চলুন। জিহ্বা এবং তালুও পরিষ্কার করুন, এতে মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে।
৩. প্রতিদিন একবার বিশেষ করে রাতে ব্রাশের আগে ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করুন। ফ্লসিং দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাবার এবং প্লাক অপসারণ করে।
৪. চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, অতিরিক্ত প্লাক বা মাড়ির সমস্যা থাকলে ফ্লোরাইডযুক্ত বা অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন। তবে এটি ফ্লসিং বা ব্রাশ করার বিকল্প নয়।
৫. চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় কমান। খাবার খাওয়ার পর জল দিয়ে ভালোভাবে কুলকুচি করুন। দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী খাবার খাদ্যতালিকায় রাখুন।
৬. দাঁতের সমস্যা না থাকলেও, কমপক্ষে প্রতি ৬ মাস অন্তর একজন ডেন্টিস্টের কাছে রুটিন চেক-আপ এবং স্কেলিং করান।
৭. ধূমপান এবং তামাক সেবন মাড়ির রোগ ও মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এগুলো সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলুন।
৮. পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করলে মুখ আর্দ্র থাকে এবং স্বাভাবিক ভাবে লালা প্রবাহ বজায় থাকে, যা দাঁতের ক্ষয়কারী অ্যাসিডকে দূর করতে সাহায্য করে।
