বেশি বয়সে মা হতে গিয়ে শুরুতেই নানা জটিলতা অনেককেই নিরাশ করে। হাল ছেড়ে দেন। বয়স যাই হোক, মা হতে কোনও ঝক্কি নেই, যদি করেন উসাইট ফ্রিজিং। এই নয়া পদ্ধতির আগাগোড়া জানাচ্ছেন ক্রেডেল ফার্টিলিটি সেন্টারের গাইনোকলজিস্ট ও আইভিএফ বিশেষজ্ঞ ডা. হানি কুরেশি।
ডায়ানা হেডেন। প্রাক্তন মিস ইন্ডিয়া। যিনি ৪৪ বছর বয়সে যমজ সন্তানের মা হন। শুনতে অবাক লাগলেও প্রযুক্তির সুবাদে এই বয়সেও সুস্থ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন হেডেন। কোনওরকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও পড়তে হয়নি। কীভাবে সম্ভব হল? ৩৯ বছর বয়সেই সন্তানের মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন তিনি। পরিস্থিতির চাপে সেই মুহূর্তে মাতৃত্বধারণ না করলেও ডিম্বাণু ফ্রিজ করে রাখেন। সেই ডিম্বাণু দ্বারাই পরবর্তীকালে সুস্থ সন্তানের জন্ম দেন।
বর্তমানে অগ্রগতির তালে তাল মেলাতে গিয়ে কর্মব্যস্ততা কেরিয়ারের ঝক্কি ও সময়ের অভাবে অধিকাংশ মহিলাই আপস করে নেন তাঁদের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে। তখন সব সামলে মাতৃত্বধারণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত সময় পেরিয়ে যায়। ফলস্বরূপ সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে নানা জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। এই সব পরিস্থিতিতে বর্তমানে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আছে উপায়। সেদিকেই এগিয়েছে চিকিৎসা। উসাইট ফ্রিজিং বা অল্প বয়সে ডিম্বাণু ফ্রিজ করে রেখে এখন বেশি বয়সে মা হওয়া কোনও চিন্তার ব্যাপার নয়।
পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে সন্তানধারণের ক্ষেত্রে সফলতার হার প্রায় ৪০-৪৫ শতাংশ। যে মহিলা উসাইট ফ্রিজ করতে চাইছেন, প্রথমে তাঁর বিশেষ কিছু রক্ত পরীক্ষা করা হয়। তারপর রিপোর্ট ঠিক থাকলে গোনাডোট্রফি ইনজেকশন দিয়ে রোগীকে স্টিমুলেট করে ডিম্বাণু বের করে আনা হয়। এক্ষেত্রে ডিম্বাণু কালেক্ট করতে একটা ছোট ওটি করার প্রয়োজন পড়ে। যাকে বলা হয় ওভাম পিকআপ। এর পর সেই ডিম্বাণুগুলিকে ফ্রিজ করে রাখা হয়। এটি ডে-কেয়ার প্রসিডিওর। অর্থাৎ একদিনেই সমস্তটা করা হয়, রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয় না।
এক্ষেত্রে উসাইট-১৯৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ভিট্রিফিকেশন নামক
জটিল পদ্ধতিতে ডিম্বাণু ফ্রিজ করে রাখা হয়। যাতে তা নষ্ট না হয় তাই বিশেষ ধরনের কেমিক্যাল মিশিয়ে রাখা হয়।
যখন মা হতে চাইবে একজন তখন 'ইক্সি' পদ্ধতি দ্বারা ফ্রিজ করা ডিম্বাণুর সঙ্গে শুক্রাণুর মিলন ঘটিয়ে ভালো এমব্রায়ো তৈরি করা হয়। এবং পুনরায় সেই এমব্রায়োটিকে ভিট্রিফিকেশন পদ্ধতিতে ফ্রিজ করে রাখা হয়। তারপর সেই ভ্রূণটিকে তরল অবস্থায় এনে মহিলার সময়মতো গর্ভাশয়ে তা ট্রান্সফার করে তাকে গর্ভবতী করা হয়।
শুরুর কথা
অনেক আগেই এই ফ্রিজিং পদ্ধতি চালু হয়েছে। আইভিএফ-এ সর্বপ্রথম ১৯৫৩ সালে শুরু হয় স্পার্ম ফ্রিজিং। তারপর ১৯৭৮ সালে এমব্রায়ো (শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন ঘটিয়ে ভ্রূণ তৈরি) ফ্রিজিং পদ্ধতি শুরু হয়। তারপর ধীরে ধীরে ১৯৮৬-তে উসাইট বা ডিম্বাণু ফ্রিজিং পদ্ধতি চালু হল। যদিও প্রথমদিকে এইভাবে সন্তানধারণ অনেক ক্ষেত্রেই সফল হত না। ২০০৫ সাল থেকে এই পদ্ধতিতে সন্তানধারণে সফলতার হার বাড়তে থাকে। এখন এ শহরেও মহিলাদের মধ্যে ডিম্বাণু ফ্রিজ করে রেখে সুবিধামতো গর্ভধারণের প্রচলন বাড়ছে।
খরচ কত?
এই পদ্ধতির খরচ আগে অনেকটা বেশি হলেও চিকিৎসা পদ্ধতি যত আধুনিক হচ্ছে, ততই সাধারণ মানুষের নাগালে আসছে খরচ। তবে এক্ষেত্রে প্রতিটি ক্লিনিকের খরচ আলাদা আলাদা হয়ে থাকে।
নিরাপদ ভ্রূণ
উসাইট ফ্রিজ় করে রেখে তারপর মা হলে সে ক্ষেত্রে মায়ের কোনও রকম সমস্যা হয় না, তেমনই সুস্থ সন্তান প্রসবও সম্ভব। এক্ষেত্রে সন্তানের কোনও রকম জটিলতা দেখা যায় না। তাই নির্দ্বিধায় সিদ্ধান্ত নিন।
পরামর্শ - 7586045898
