গৌতম ব্রহ্ম: শুধু ফুসফুস বা অন্ত্র নয়। কোভিডের (Covid-19) ছোবল হৃদয়েও। চোরা ছোবল! আঁচ পাওয়ার মতো অবকাশও দিচ্ছে না! তথ্য বলছে, কোভিডের গ্রাস থেকে বেরিয়ে আসার পরও প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন এই হামলার শিকার হচ্ছেন! এবং আঘাত এতটাই অতর্কিত যে, চিকিৎসার সুযোগ মিলছে না। আর এর মূলে সেই হ্যাপি হাইপক্সিয়া, করোনাকালে যে শব্দবন্ধটি ত্রাস হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের অন্তত এমনই অভিজ্ঞতা। সম্প্রতি ‘জামা কার্ডিওলজি’ জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষা রিপোর্টেও কোভিডের হৃদয়যোগ স্পষ্ট। সমীক্ষা রিপোর্টের প্রধান ভ্যালেন্তিনা পান্তম্যান জানিয়েছেন, কোভিড নেগেটিভ হওয়ার পরও অনেক রোগীর বুকে ব্যথা হচ্ছে। হার্ট রেট ওঠানামা করছে। ৭৮ শতাংশ রোীগরই এমন হচ্ছে। তার মানে বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই হার্টে হামলা চালায় নোভেল করোনা। যা সেরে যাওয়ার পরও কয়েকমাস স্থায়ী হতে পারে।
চিকিৎসকদের বক্তব্য, করোনা আক্রান্তের কোভিড রক্তে যে অক্সিজেনের মাত্রায় টান পড়ে, তা এখন মোটামুটি সবার জানা। শ্বাসকষ্ট হলে ব্যাপারটা ধরা পড়ে। চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু লক্ষণ যদি প্রকাশ না পায়? তখনই তৈরি হয় সমস্যা। চিকিৎসা পরিভাষায়, ‘হ্যাপি হাইপক্সিয়া’। সে ক্ষেত্রে হার্টের পেশিগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। সক্রিয়তা কমে। যাকে বলা হয় ‘হাইপক্সিক মায়োকার্ডিয়াল ইনজুরি’। হৃদয়বৈকল্যের কারণ এটাই।
চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ, ভাইরাস সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে হামলা চালায়। টার্গেট-তালিকায় হার্টও বাদ নেই। এই ভাইরাল মায়োকার্ডাইটিস তৈরি করে। সে হার্টকেও দুর্বল করে দিতে পারে। সাইটোকাইন স্টর্মের ফলে হার্টের কাজে ব্যাঘাত ঘটে। ধমনির মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা অনেকটা বেড়ে যায়। রোগীকে হাইপার কোয়াগুলেবল স্টেজে পৌঁছে দেয়। যাতে হার্টের ধমনি ব্লক হয়ে ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন’ হয়ে পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে।
[আরও পড়ুন: লকডাউনে খুদেদের শরীরে জমছে মেদ, ওবেসিটির কবলে পড়ছে না তো? সাবধান!]
কার্ডিওথোরাসিক সার্জন ডা. কুণাল সরকারের এমনই পর্যবেক্ষণ। তাঁর মতে, ফুসফুসের মতো হার্টেও প্রদাহ সৃষ্টি করছে নোভেল করোনা। ভাইরাল মায়োকার্ডাইটিস, মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন হচ্ছে। ঠিকঠাক ওষুধ খেলে সপ্তাহ দুয়েকে সেরে যাওয়ার কথা। ব্রিটেন, ফ্রান্সের মতো দেশেও কোভিড রোগীর হার্টের সমস্যা হয়েছে। “আসলে কোভিড লোহিত রক্তকণিকার উপর হামলা চালিয়ে রক্তনালিতে ক্লট তৈরি করছে। ক্লট যেখানে যাচ্ছে, সেখানেই বিপত্তি। ফুসফুসে চলে গেলে পালমোনারি এম্বোলিজম, হার্টে গেলে মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন।”- বলছেন কুণালবাবু। হৃদরোগবিশেষজ্ঞ ডা. ধীমান কাহালি জানিয়েছেন, প্রতি পাঁচ জন কোভিড রোগীর একজনের হার্টের সমস্যা দেখা যাচ্ছে। অনেকে হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অর্থাৎ শ্বাসকষ্ট, জ্বরের মতোই হৃদরোগও কোভিডের অন্যতম উপসর্গ হিসাবে দেখা দিচ্ছে। আরও বিপদের কথা, কোভিডমুক্ত হওয়ার পর শ্বাসকষ্ট কমলেও হার্টের সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। যা থেকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট পর্যন্ত হচ্ছে। ধীমানবাবু জানিয়েছেন, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আসা বহু রোগীর কোভিড টেস্টের ফলাফল পজিটিভ হচ্ছে। এবং অদ্ভুতভাবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, ‘অবস্ট্রাকশন’ তেমন নেই। এটাই চিন্তার।
[আরও পড়ুন: কোভিড পজিটিভ হয়ে কোয়ারেন্টাইনে? বাড়িতে এই কাজগুলি অবশ্যই নিয়মিত করুন]
The post প্রতি ৫ জনের মধ্যে একজন করোনাজয়ীই আক্রান্ত হচ্ছেন হৃদরোগে! উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরা appeared first on Sangbad Pratidin.