সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: “তোমার ঝুলিতে কী আছে, বলো না গো!” হাসতে হাসতে বলেছিল ছোট্ট মিনি। জবাবে রহমত কাবুলিওয়া বলেছিল, “হাতি আছে, হাতি!” বাংলা সিনেমার দর্শকের কাছে এ দৃশ্য বড্ড চেনা। বহু বছরের পুরনো হলেও তাতে যে অসম বয়সের বন্ধুত্ব রয়েছে, ঝোলা কাঁধের ‘কাবুলিয়ালা’ রয়েছে, তা আজ যেন বেশি করে মন পড়ছে। কারণ পাহাড়ে ঘেরা আফগানিস্তানে (Afghanistan Crisis) তালিবানি সন্ত্রাসের বীভৎস চেহারা। যা দেখে সারা বিশ্ব শিউরে উঠছে। অথচ এই আফগানিস্তানের কাবুলিওয়ালাদের নিয়ে কত সুন্দর গল্পই না লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার প্রেক্ষাপটে তপন সিনহা তৈরি করেছিলেন বাংলা সিনেমা। আর হেমেন গুপ্ত তৈরি করেছিলেন হিন্দি সিনেমা। পরবর্তীকালে আবার অনুরাগ বসুও সিরিজে দেখিয়েছিলেন ‘কাবুলিওয়ালা’র (Kabuliwala) গল্প।
একাধিক হিন্দি সিনেমাতেও আফগানিস্তানের রুক্ষ মাটির কাহিনি উঠে এসেছিল। ১৯৯২ সালে মুক্তি পেয়েছিল অমিতাভ বচ্চন (Amitabh Bachchan) ও শ্রীদেবী (Sridevi) অভিনীত ছবি ‘খুদা গওয়া’ (Khuda Gawah)। এই ছবিতে দেখানো হয়েছিল আফগানিস্তানের জাতীয় খেলা ‘বাজকাশি’ (ঘোড়ায় চড়া খেলোয়াড়রা মৃত পশুর দেহ দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেন)। আর তা খেলতে গিয়েই নায়ক-নায়িকার দেখা হয়। যোদ্ধার দেশ ছিল আফগানিস্তান, যেখানে আত্মসম্মান ও ভালবাসার মূল্য প্রাণের চেয়েও বেশি, ছবিতে সেকথাই ফুটিয়ে তুলেছিলেন পরিচালক মুকুল এস আনন্দ।
২০০৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল মণীষা কৈরালা অভিনীত ‘এসকেপ ফ্রম তালিবান’ (Escape from Taliban) ছবি। কলকাতার লেখক সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের জীবন নিয়ে লেখা ‘কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ’ (Kabuliwalar Bangali Bou) থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই ছবি তৈরি করেছিলেন উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় (Ujjal chatterjee)। ছবির গল্পে উঠে এসেছিল এক বাঙালি মেয়ের আফগানিস্তান পাড়ি দেওয়ার গল্প। এক কাবুলিওয়ালার সঙ্গে সংসার করার আখ্যান। সেই মহিলার উপরে হয়েছিল অকথ্য অত্যাচার। তার প্রতিবাদও করেন সেই মহিলা। কিন্তু তিনি তো একা। তালিবান শাসনের বিরুদ্ধে একা লড়াই করবেন কী করে! তার মূল্য চোকাতে হয়েছিল সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তালিবানের গুলিতেই মৃত্যু হয় তাঁর।
[আরও পড়ুন: ‘এতদিন সুরক্ষার কারণেই চুপ ছিলাম’, জন্মভূমি Afghanistan নিয়ে মুখ খুললেন অভিনেত্রী Celina]
২০০৬ সালে মুক্তি পাওয়া কবীর খান পরিচালিত ‘কাবুল এক্সপ্রেস’ (Kabul Express) ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন জন আব্রহাম (John Abraham) ও আরশাদ ওয়ারসি (Arshad Warsi)। সাংবদিকের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন দু’জনে। দুই দশক আগেও আফগান মুলুকের দখল নিয়েছিল তালিবানরা (Taliban Terror)। সেই সময়ও সাধারণ মানুষ তীব্র অত্যাচারের মুখোমুখি হয়েছিল। সন্ত্রাসদীর্ণ সেই চেহারা ফুটে উঠেছিল কবীরের ছবিতে।
২০২০ সাল থেকে নেটফ্লিক্সে (Netflix) দেখা যাচ্ছে সঞ্জয় দত্ত অভিনীত ‘তোরবাজ’ (Torbaaz)। বারুদের গন্ধে কীভাবে আফগানিস্তানের শৈশব শেষ হয়ে যাচ্ছে, সেই কাহিনি এ ছবিতে দেখানো হয়েছে। ছবিতে ক্রিকেটে খেলানোর মাধ্যমে শিশুদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল সঞ্জয়ের চরিত্র।
কান্দাহারে ভারতীয় বিমান হাইজ্যাকের ঘটনা মনে আছে তো? সেই ঘটনা নিয়ে ২০১০ সালে তৈরি হয়েছিল মালয়ালম ছবি ‘কান্দাহার’ (Kandahar)। ছবিতে মোহনলালের পাশাপাশি অভিনয় করেছিলেন অমিতাভ বচ্চনও।
আন্তর্জাতিক সিনেমার পরিচালকদেরও আকর্ষণ করেছিল আফগানিস্তানের কাহিনি। তৈরি হয়েছিল ‘লোন সারভাইভার’-এর (Lone Survivor) মতো সিনেমা। মার্ক ওয়াহালবার্গ অভিনীত সিনেমায় তালিবান নেতা আহমেদ শাহকে গ্রেপ্তার করার মার্কিন চেষ্টা দেখানো হয়েছিল। সেই মিশনের নাম ছিল অপারেশন রেড উইং (Operation Red Wings)।
‘দ্য কাইট রানার’ (The Kite Runner)। ২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে দুই বন্ধুর কাহিনি দেখানো হয়েছিল। আর তাতেই আফগানিস্তান-সোভিয়েত যুদ্ধের ফলাফল, উদ্বাস্তু সমস্যার বিষয়গুলি ফুটে উঠেছিল।
২০১৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল ক্রিস হেমসওয়ার্থ অভিনীত ছবি ‘১২ স্ট্রং’ (12 Strong)। ৯/১১-এর হামলার পর যখন মার্কিন সৈন্যরা আফগানভূমে গিয়েছিলেন, সেই সময়ের কাহিনি দেখানো হয়েছে এই ছবিতে।
২০২০ সালের অস্কারে (Oscar 2020) সেকা তথ্যচিত্রমূলক ছবির পুরস্কার পেয়েছিল ‘লার্নিং টু স্কেটবোর্ড ইন আ ওয়ারজোন (ইফ ইউ আর আ গার্ল)’ (Learning to Skateboard in a Warzone)। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের শিশুকন্যাদের স্কেটবোর্ডে শেখার মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর যে লড়াই, তা ফুটে উঠেছিল এই ছবিতে।