সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন থেকে শুরু করে তিন তালাক আইন। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম এক বছরে একাধিক বিতর্কিত অথচ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। চেষ্টা হয়েছে আর্থিক সংস্কারেরও। বর্ষপূর্তিতে ফিরে দেখা যাক সরকারের ৫ বড় সিদ্ধান্ত।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন: দ্বিতীয় মোদি সরকারের প্রথম এক বছরের সবচেয়ে চর্চিত এবং বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। এনআরসি আতঙ্কের মধ্যেই ১১ ডিসেম্বর সংসদে পাশ হয়ে যায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল [Citizenship (Amendment) Act, 2019]। পরে তা রাষ্ট্রপতির সইয়ের পর আইনে পরিণত হয়। এই আইন অনুযায়ী ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার যে সমস্ত শরণার্থীরা ভারতে এসেছেন তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন এবং পারসি। এই ছ’টি ধর্ম এর আওতায় আসবে। মুসলিম ধর্ম এর আওতায় আসবে না। বিল পাশ হতেই, একে অসাংবিধানিক ও ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টিকারী বলে তোপ দাগে বিরোধীরা। দেশজুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ। যার জেরে এখনও উত্তপ্ত গোটা দেশ।
৩৭০ ধারা বাতিল: দ্বিতীয় মোদি সরকারের অন্যতম বড় সংস্কারমূলক সিদ্ধান্ত সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করা। গত বছর ৫ আগস্ট নতুন আইন এনে জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া ৩৭০ ধারা (Article 370 of the Constitution of India) ও সংবিধানের ৩৫-এ অনুচ্ছেদ বাতিল করে কেন্দ্র। পাশ হয় জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল। যা স্বাধীন ভারত ও কাশ্মীরের ইতিহাস এক ঝটকায় বদলে দিয়েছে। এর জেরে, দীর্ঘদিন ধরে কার্যত অবরূদ্ধ থাকে কাশ্মীর। সে রাজ্যের প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতামন্ত্রীদেরও গৃহবন্দি রাখা হয়।
তিন তালাক অপরাধ: ৩০ জুলাই রাজ্যসভায় পাশ হয়ে যায় তিন তালাক বিল(The Muslim Women Protection of Rights on Marriage Bill)। এরপর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর বিলটি আইনে পরিণত হয়। নতুন বিল অনুযায়ী, ১ আগস্ট ২০১৯ অনুযায়ী তাৎক্ষণিক তিন তালাক শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষিত হয়। দ্বিতীয় মোদি সরকারের অন্যতম বড় সিদ্ধান্ত।
করোনা মোকাবিলা ও লকডাউন: বছরের গোড়াতেই বিশ্বজুড়ে ত্রাস হিসেবে উঠে আসে করোনা ভাইরাস। অন্যান্য দেশগুলির মতো ভারতেও নিজের মারণ থাবা বসিয়েছে COVID-19। ক্ষমতায় আসার পর ৬ বছরের মধ্যে এত বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়নি প্রধানমন্ত্রীকে। মোদি সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তির দিন পর্যন্ত দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৭৩ হাজারেরও বেশি। তবে সরকারের দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সঠিক সময়ে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। উল্লেখ্য, এখনও পর্যন্ত চার দফায় দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে লকডাউন চলছে ভারতে। তাতেও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। যদিও সরকারের দাবি, মারক ভাইরাসের প্রতিরোধে উপযুক্ত পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করেছে ভারত। এদিকে এর জেরে অর্থনীতি স্তব্ধ। অকথ্য যন্ত্রণার শিকার হতে হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকদের।
আত্মনির্ভর ভারত: করোনার জেরে গোটা বিশ্ব যখন কম্পমান, আর্থিক ধাক্কা সামলাতে তথাকথিত উন্নত দেশগুলিও যখন নাজেহাল, তখনও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করোনাকে ভারতের কাছে ‘সুযোগ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই সুযোগে দেশবাসীর উদ্দেশে ‘আত্মনির্ভর’ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই লক্ষ্যে ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। যা কিনা ভারতের মোট জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশ। যদিও নিন্দুকেরা বলেন, পুরো প্যাকেজটাই ঋণসর্বস্ব। এখানে সরকারকে রাজকোষ থেকে সে অর্থে টাকা দিতেই হয়নি। বেশিরভাগটাই যাচ্ছে ব্যাংকগুলি থেকে।
The post সংস্কারই মূলমন্ত্র! বর্ষপূর্তিতে ফিরে দেখা দ্বিতীয় মোদি সরকারের ৫ বড় সিদ্ধান্ত appeared first on Sangbad Pratidin.