অর্ক দে, বর্ধমান: মহিষাসুরমর্দিনীর আরাধনার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত বাংলা। বর্ধমানের কাঞ্চন নগরের ব্রাহ্মণ বাড়িতেও শুরু পুজো (Durga Puja 2021) প্রস্তুতি। তবেএখানে মহিষাসুরমর্দিনী হিসেবে নয়, সারা বছর ‘শুভ মা’ রূপে দেবী দুর্গা পূজিতা হন। প্রতি বছর দেবী প্রতিমা নিরঞ্জনও হয় না। এক যুগ অন্তর দেবীর মূর্তি গড়াই রীতি এখানে।
প্রায় ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে হয়ে আসা পুজো শুরু হয়েছিল পোদ্দার পাড়ার হরিপদ পালের বাড়িতে। হরিপদ পালের কোনও উত্তরাধিকারী না থাকায় এই পুজোর দায়িত্ব দিয়ে দেন তাঁরই পরিচিত ভবতারণ বিদ্যাভূষণকে। তারপর ১৩৪৫ সাল থেকে এই পুজো হয়ে আসছে তাঁতিপাড়ায়। পুজোর চারদিন ছাড়াও এখানে বারোমাস দেবী পূজিতা হন। ১২ বছর অন্তর মূর্তি বিসর্জন হয়। এছাড়াও পুজোর উপাচারেও রয়েছে বিশেষত্ব।
মঙ্গলময়ী শুভ মা এখানে একচালায় সপরিবারে পূজিতা হন। আগে বলি প্রথার প্রচলন ছিল। ব্রাহ্মণ বাড়িতে আসার পর বলি প্রথা বন্ধ হয়ে যায়। ষষ্ঠীর দিন থেকেই বিশেষভাবে পুজোর আয়োজন করা হয়। ষষ্ঠীর কল্পনা দিয়ে পুজো শুরু হয়। এরপর পুজোর চারদিন তিনবেলা করে ভোগের আয়োজন করা হয়। এই পুজোর বিশেষত্ব অষ্টমীতে ১৫ রত্নদ্বীপ দিয়ে মায়ের বিশেষ আরতি করা হয়। এছাড়াও ১০৮টি প্রদীপ জ্বালিয়ে পুজো দেওয়া হয়।
[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: মায়ের পুজোয় মেয়েরাই ব্রাত্য! এ কেমন প্রথা ঘাটালের রাজবাড়ির]
বর্তমানে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যা রেণুকা দেবী বলেন, “আমার শ্বশুরমশাই পুজোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন। হরিপদ পাল সম্পর্কে তাঁর মামা হতেন। মামার কোনও বংশধর না থাকায় তাঁকে এই পুজোর ভার দিয়ে যান। পোদ্দার পাড়াতে পালেদের বাড়ি থেকে পুজো বর্তমানে এই বাড়িতে স্থানান্তর হয়। তাঁর কাছেই শুনেছি দেবী একবার স্বপ্নাদেশ দিয়ে নিজেই জানিয়েছিলেন তিনি সারা বছর শুভ মা রূপে পুজো নিতে চান। সেই কারণেই এখানে দেবী বিসর্জন হয় না। ১২ বছর অন্তর প্রতিমা বদল করা হয়। তবে তার মাঝে মূর্তির কোনও ক্ষতি হলে শাস্ত্রমতে নতুন মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ৩ বছর আগেই নতুন মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, পাল বাড়িতে পুজোর সময় মোষ বলি ও চ্যাং মাছ বলির নিয়ম ছিল। এখন সেসব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে এখনও দেবী থান রয়েছে। তবে পুজো হয় না। এখানে পুজোর চারদিন এলাকার মানুষকে নিয়ে মহাধূমধামে পুজো হয়। পাড়ায় মায়ের ভোগ বিতরণ করা হয়। নির্দিষ্ট সেবাইত রয়েছে। তাঁরাই সমস্ত দায়িত্ব পালন করেন।