সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দিমিত্রি পেত্রাতোসের বাঁ পায়ের ওই গোলার জবাব ছিল না ইস্টবেঙ্গলের কাছে। লাল-হলুদ গোলকিপার প্রভসুখান গিল শরীর ছুঁড়ে দিয়েও বলের নাগাল পাননি। পেত্রাতোসের মুহূর্তের একটা ঝলকানিতে ইস্টবেঙ্গল হারিয়ে গেল ম্যাচ থেকে। গোটা ডুরান্ড কাপে যে ইস্টবেঙ্গল ছুটছিল, তারাই এসে থেমে গেল ফাইনালে।
কিন্তু এই দৌড় থেমে যাওয়ার জন্য কি ইস্টবেঙ্গল নিজেরাই দায়ী নয়! পেত্রাতোস গোল করেন ৭০ মিনিটে। তার মিনিট দশেক আগে লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে যান অনিরুদ্ধ থাপা। দশ জনে নেমে যায় মোহনবাগান। ফলে নিউমেরিক্যাল অ্যাডভান্টেজ ছিল ইস্টবঙ্গলের সঙ্গে। এগারোর বিরুদ্ধে দশের অসম লড়াই। পেত্রাতোস শট নেওয়ার মতো জায়গায় পৌঁছলেন কীভাবে? মাঝমাঠের কাছ থেকে বল নিয়ে দৌড়তে দৌড়তে কামান দাগলেন অস্ট্রেলিয়ান তারকা। কিন্তু তাঁকে এতটা ছেড়ে দেওয়া হল কেন? কেন আগে ইস্টবেঙ্গলের কেউ ট্যাকল করলেন না? পেত্রাতোস যখন বাঁ পায়ে শট নেবেন, তখনও তাঁকে বাধা দেওয়ার কেউ নেই। ফুটবলে স্পেস আর টাইম একই। সময় দিয়ে দেওয়া আর জায়গা ছেড়ে দেওয়া একই ব্যাপার। এই গোড়ায় গলদ কীভাবে করলেন ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা? কেন পেত্রাতোসকে ছেড়ে দেওয়া হল? কার্লেস কুয়াদ্রাত নিশ্চয় এই প্রশ্ন করবেন তাঁর ছাত্রদের।
[আরও পড়ুন: আরও একটা ট্রফি জয়ের স্বপ্নভঙ্গ ইস্টবেঙ্গলের, ‘দশে মিলে’ই ভারতসেরা মোহনবাগান]
প্রায় চল্লিশ মিনিটের কাছাকাছি সময়ে দশ জনে খেলে মোহনবাগান। এই চল্লিশ মিনিটে আরও ক্ষুরধার হওয়া উচিত ছিল ইস্টবেঙ্গলের। গোলের সুযোগ আরও বেশি তৈরি করা উচিত ছিল। কিন্তু সেটা দেখা গেল না লাল-হলুদের খেলায়। বরং বড্ড বেশি নিজেদের মধ্যে পাস খেলতে গিয়ে মোহনবাগানকে গুছিয়ে ফেলার সুযোগ দেওয়া হল। ওই সময়ে ইস্টবেঙ্গল আরও ডাইরেক্ট ফুটবল খেলতে পারত।
মোহনবাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দোকে অসম্ভব ইতিবাচক দেখাল। দশ জনে নেমে যাওয়ার পরে আক্রমণাত্মক রণনীতি থেকে সরে আসেননি তিনি। বিশ্বাস হারাননি পেত্রাতোসের উপর থেকে। অজি তারকার দক্ষতা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন ফেরান্দো। সেই কারণে পেত্রাতোস সেভাবে গোড়ার দিকে নজর কাড়তে না পারলেও মাঠে রেখে দেন সবুজ-মেরুনের স্প্যানিশ কোচ। পেত্রাতোস কোচের আস্থার মূল্য দিলেন।
গোলের জন্য ইস্টবেঙ্গল দু’ প্রান্ত থেকে বল ভাসালেও তাতে গোল হল না। কারণ যে সেন্টারগুলো ভাসানো হয়েছিল, সেগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঠিকঠাক ছিল না। কখনও হেক্টর, কখনও আনোয়ার সেই সব সেন্টারগুলো ক্লিয়ার করেন।
নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে যে তাগিদ লক্ষ্য করা গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গলের খেলায়, এদিন সেই তাগিদটা দেখা যায়নি। নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড শেষের দিকে মিনিট দুয়েকের জন্য দশ জনে নেমে যায়। আর সেই সুযোগে ইস্টবেঙ্গল সমতা ফিরিয়েছিল। এদিন প্রায় চল্লিশ মিনিট সময়ে পেলেও সমতা ফেরাতে পারেনি লাল-হলুদ। মরিয়া হয়ে নিজেদের রক্ষণ আগলালেন মোহনবাগানের ডিফেন্ডাররা। বিশাল কাইথ অসম্ভব ভাল কিছু বল বাঁচালেন।
কুয়াদ্রাতের ম্যাচ রিডিং খুবই ভাল। কিন্তু সিভেরিওকে তুলে নিয়ে ক্লেটনকে নামানোয় কিছুটা হলেও সুবিধা পেয়ে যায় মোহনবাগান। কারণ স্প্যানিশ সিভেরিও পেনাল্টি বক্সে সবুজ-মেরুন ব্রিগেডকে কিছুটা হলেও চাপে ফেলছিলেন। সিভেরিও উঠে যাওয়ার পরে ক্লেটন সেই চাপটা রাখতে পারেননি মোহনবাগানের বক্সে। সবুজ-মেরুন রক্ষণের ফুটবলাররা মাঝখানের অঞ্চলে পায়ের জঙ্গল তুলে দেন।
বোরহা হেরেরার মতো একজন দুর্দান্ত মানের মিডফিল্ডারকে তুলে নেওয়াও ইস্টবেঙ্গকে ব্যাকফুটে ফেলে দেয়। কুয়াদ্রাত মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন গোল শোধের জন্য। অতিরিক্ত পাস খেলে মোহনবাগানের রক্ষণে পৌঁছতে গিয়ে ইস্টবেঙ্গল বরং সুবিধাই করে দেয় মোহনবাগানের। দুর্দান্ত লড়াকু মানসকিতার পরিচয় দিয়ে ডুরান্ড কাপ জিতে নেয় সবুজ-মেরুন।
[আরও পড়ুন: উপনির্বাচনের আগে ধূপগুড়ি মহকুমা ঘোষণার আশ্বাস, অভিষেককে নিয়ে কমিশনে নালিশ BJP-র]