সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ৭৩তম স্বাধীনতা দিবসে দেশের প্রতিরক্ষায় বডসড় ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ দেশবাসীর সুরক্ষাবৃদ্ধি এবং সন্ত্রাসদমনে সেনার ৩ বাহিনীকে নিয়ে নতুন পদ – চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ তৈরির কথা বলেছেন তিনি৷ জল, স্থল ও বায়ুসেনা বাহিনীর প্রধান এবং বাছাই করা আধিকারিকদের নিয়ে তৈরি হবে একটি টিম, যার শীর্ষে থাকা পদাধিকারীরাই চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বা সিডিএস৷ প্রধানমন্ত্রী বলছেন, নয়া পদটি তৈরি হলে ভারতীয় সেনার কর্মপন্থা আরও মসৃণ হবে৷ আসুন জেনে নিই ‘চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ’ পদটির বিষয়ে খুঁটিনাটি তথ্য৷
কী এই ‘চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ’ (সিডিএস)?
সহজ কথায়, ‘চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ’ হবেন সরকারের প্রতিরক্ষা ও সামরিক বিষয়ের প্রধান উপদেষ্টা৷ এই পদের অধিকারি সরকার ও সেনার মধ্যে ‘সিঙ্গল পয়েন্ট অফ কন্ট্যাক্ট’ হিসেবে কাজ করবেন৷ ফোর স্টার জেনারেল পদ মর্যাদার হলেও তিন বাহিনীর প্রধানের উপরে থাকবেন তিনি৷ শুধু তাই নয়, ভারতীয় সেনার তিন বাহিনী- স্থল, বায়ু ও নৌসেনার মধ্যে সমন্বয় বজায় রেখে অস্ত্র কেনা থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ ও কৌশলগত মোতায়েনের উপর নজর রাখবেন ‘চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ’ বা সিডিএস৷ বিশেষ করে, আণবিক শক্তিধর দেশ হওয়ায়, পারমাণবিক অস্ত্র তথা হামলা সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হবেন সিডিএস৷
সিডিএস পদ তৈরির ভাবনা কি নতুন?
প্রধানমন্ত্রী মোদি, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ পদ তৈরির কথা ঘোষণা করলেও, এই প্রস্তাব কিন্তু প্রায় দু’দশক পুরনো৷ কারগিল যুদ্ধের পর সেনাবাহিনীর গঠনে আমূল পরিবর্তন আনতে কে সুব্রহ্মণম কমিটি গঠন করে সরকার৷ সেই কমিটি সিডিএস পদ তৈরি প্রস্তাব দেয়৷ তবে রাজনৈতিক ডামাডোলে ওই প্রস্তাব হিমঘরে চলে যায়৷ এই পদ তৈরির প্রস্তাব জানিয়ে ২০১৬ সালে একটি রিপোর্টও পেশ করে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি বি শেখাটকর কমিটি৷ যদিও সেই প্রস্তাবও কার্যকরী হয়নি৷
বর্তমান কীভাবে সেনার তিন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করা হয়?
আপাতত, সেনার তিন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়টি রয়ছে ‘চিফ অফ স্টাফস কমিটি’র হাতে৷ এতে রয়েছেন স্থলসেনা, বাযুসেনা ও নৌসেনার তিন প্রধান৷ এদের মধ্য সব থেকে প্রবীণ সদস্যকে কমিটির চেয়ারম্যান বানানো হয়৷ তিনিই বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেন৷ আপাতত সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখ অবসর নিচ্ছেন তিনি৷ তারপর ওই পদে বসবেন স্থলসেনা প্রধান বিপিন রাওয়াত৷ তার কার্যকাল মাত্র ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকবে৷ এত স্বল্প মেয়াদ পড়ে থাকার দরুন পরিকাঠামোগত বা নয়া অস্ত্র ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয় না৷ ফলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সিডিএস নিয়োগ হলে এই প্রক্রিয়া মসৃণ হবে৷
কীভাবে ভারতীয় সেনাকে আরও ঘাতক করে তুলবেন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ?
আমেরিকা, ব্রিটেন-সহ বিশ্বের তাবড় দেশগুলিতে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ’ পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর প্রধান৷ ব্রিটিশ সেনার তিন বাহিনীর সমস্ত অভিযান ও কৌশলগত ফৌজ মোতায়েনের বিষয়টি ন্যস্ত থাকে সিডিএস-এর হাতে৷ এর ফলে লাল ফিতের জটে অযথা সময় নষ্ট হয় না৷ কান্দাহার বিমান অপহরণ মামলায় সেনা ও সরকারের আমলাতন্ত্রের জটে পড়ে কার্যত হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হয়েছিল কমান্ডোদের৷ সিডিএস পদ তৈরি হলে এহেন জটিল সিদ্ধান্ত নেবেন তিনিই৷ ফলে বাঁচবে সময়৷ সরাসরি তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করার ফলে যৌথভাবে অভিযানের পথ আর মসৃণ হবে৷
কবে তৈরি হবে এই পদ?
প্রতিরক্ষামন্ত্রক সূত্রে খবর, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে৷ এতে কয়েক মাস সময় লাগবে৷ সেনার তিন শাখার প্রধানদের মতোই ফোর স্টার পদমর্যাদার একজন জেনারেলকে সিডিএস পড়ে নিয়োগ করা হবে৷ তিন বাহিনীর প্রধানদের উপর তাঁর কতৃত্ব থাকবে৷ তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ৷
[আরও পড়ুন: মার্কিন বাহিনীর ধাঁচে ভারতেও ‘চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ’, প্রতিরক্ষায় ঐতিহাসিক ঘোষণা]
The post ‘চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ’ পাচ্ছে ভারতীয় সেনা, জেনে নিন খুঁটিনাটি তথ্য appeared first on Sangbad Pratidin.