সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সাড়ে চার বছর বাদে ডার্বি জিতল ইস্টবেঙ্গল। জেতার ছিল। ইতিহাসের কোনও লড়াই-ই চিরদিন একপেশে হতে পারে না। আর কলকাতা ডার্বি মানে তো চিরদিনের সমানে-সমানে লড়াই। দু’দলের জার্সিতে কারা খেলছে, সেটা কোনওকালেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, এবারেও না। কিন্তু সবকিছু মেনে নিয়েও শনিবারের ডার্বিতে মোহনবাগানের হারকে অঘটনই বলতে হবে। আর এই অঘটনের জন্য অনেকাংশে দায়ী সম্ভবত সবুজ-মেরুন কোচ জুয়ান ফেরান্দোর আত্মতুষ্টি। তিনি হয়তো মোহনবাগানের তারকাখচিত দলকে ডার্বির গুরুত্বটাই বোঝাতে পারেননি।
ডার্বিতে হার-জিত থাকে। কিন্তু মোহনবাগানের বিশ্বকাপার-সহ তারকাখচিত দল যেভাবে ‘বাতিল’ ফুটবলারদের নিয়ে গড়া ইস্টবেঙ্গলের কাছে একপ্রকার অসহায় আত্মসমর্পণ করল, সেটা বেশ দৃষ্টিকটু। ম্যাচের একেবারে প্রথম মিনিট থেকেই বোঝা গিয়েছিল দুই দলের লড়াই করার তাগিদে একটা পার্থক্য আছে। ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা একেবারে শুরু থেকেই সপ্রভিত, চনমনে ছিলেন। প্রতিটি বলের জন্য দৌড়াচ্ছিলেন। প্রতিটি ‘সেকেন্ড বল’, ৫০-৫০ বলই যেন লাল-হলুদ ফুটবলারদের পা ছুঁয়ে যাচ্ছিল। বোঝাই যাচ্ছিল কোচ কার্লোস কুয়াদ্রাত ফুটবলারদের ভালমতোই পেপ-টক দিয়েছেন। আর সেই পেপ-টকে লাল-হলুদ ফুটবলাররা একেবারে তেতে উঠেছেন। সেটাই সম্ভবত কার্লোস কুয়াদ্রাতদের মতো কোচের ‘মহানতা’। অতি সাধারণ মাপের ফুটবলারদের থেকেও ভাল খেলাটা বের করে আনতে তাঁরা জানেন।
[আরও পড়ুন: জাতীয় দলের জার্সিতে কতটা উন্নতি করলেন মুকেশ? ওয়ার্ক এথিক্স কেমন? জানালেন টিম ইন্ডিয়ার বোলিং কোচ]
অন্যদিকে মোহনবাগান যেন শুরু থেকেই গা-ছাড়া। প্রথম কয়েক মিনিটে অনিরুদ্ধ থাপা, ব্রেন্ডন হ্যামিলরা এমন ফুটবল খেললেন, দেখে মনে হল যেন ম্যাচ জিতে বসে আছেন, স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। এই আত্মতুষ্টিই ভোগাল সবুজ-মেরুন ফুটবলারদের। শুরু থেকেই নিষ্প্রভ, আক্রমণে লোক বাড়ানোর ন্যূনতম চেষ্টাও দেখা গেল না। মাঝমাঠে কার্যত অসহায় দেখাল গ্লেন, অনিরুদ্ধদের। আর সেই গা-ছাড়া মনোভাবটাকেই কাজে লাগিয়ে গেলেন লাল-হলুদ ফুটবলাররা। গোটা ম্যাচে মাঝমাঠের দখল রইল লাল-হলুদের পায়েই। হয়তো গোল একটাই হল। নন্দকুমারের দুর্দান্ত ওই গোলটি বাদ দিলেও ইস্টবেঙ্গল একাধিক সম্ভাবনাময় আক্রমণ করেছিল, যা গোল এনে দিতে পারত। দুর্ভাগ্যবশত, দলে বিশ্বকাপার থেকে শুরু করে দেশের সেরা সেরা ফরওয়ার্ড থাকা সত্ত্বেও সবুজ-মেরুন গোটা ম্যাচে সেভাবে পরিষ্কার সুযোগই তৈরি করতে পারেনি।
[আরও পড়ুন: এশিয়া কাপের জন্য ঘোষিত বাংলাদেশ স্কোয়াড, দলে নেই তারকা ক্রিকেটার]
এখন প্রশ্ন হল, হুগো বুমোস, দিমিত্রি পেত্রাতোস, আর্মান্দো সাদিকু, জ্যাসন কামিন্সরা কি তাহলে রাতারাতি খারাপ ফুটবলার হয়ে গেলেন? সাহাল আবদুল সামাদ, আশিক কুরুনিয়ন, লিস্টন কোলাসোরা তো কদিন আগেই জাতীয় দলের জার্সিতে কাঁপিয়ে খেলে এলেন, তাহলে সবুজ-মেরুন জার্সিতে এত হতশ্রী পারফরম্যান্স কেন? উত্তর একটাই, কোচ জুয়ান ফেরান্দো সম্ভবত সব তারকাদের একত্রিত করে ‘ভাল দল’ গড়ে তুলতে পারেননি এখনও। মোহনবাগান শনিবাসরীয় যুবভারতীতে ‘দল’ হিসাবে খেলেনি। দলের মধ্যে কোনও ছন্দ ছিল না। সাদিকু, মনবীররা ম্যাচের অধিকাংশ সময় বুঝতেই পারলেন না, তাঁদের কাজটা ঠিক কী। যার ফলশ্রুতি খাতায়-কলমে দেশের সেরা দল নিয়েও ইস্টবেঙ্গলের কাছে পদানত হতে হল সবুজ-মেরুনকে। এর দায় কোচ ফেরান্দোকেই নিতে হবে। তাছাড়া গোটা ম্যাচে একদিকে কুয়াদ্রাতের শরীরী ভাষায় যে উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছিল, সেটা ফেরান্দোর মধ্যে দেখা যায়নি। কোথাও না কোথাও সেই ‘নেগেটিভ এনার্জি’ ঢুকে গেল ফুটবলারদের মধ্যেও। সামনেই এএফসি কাপের ম্যাচ। সেই ম্যাচের আগে যদি জুয়ান ফেরান্দো নিজের তারকাদের ‘দল’ হিসাবে গড়ে তুলতে না পারেন, তাহলে তাঁর কপালে দুর্ভোগ রয়েছে।