সুপর্ণা মজুমদার: এক যে ছিল ‘ডিটেকটিভ’ (Detective)। তার ছিল এক ওয়াটসন থুড়ি হুতাসন। গোয়েন্দাগিরির বড্ড শখ ছিল মহিমচন্দ্রর। কলকাতায় বসে শার্লক হোমস হওয়ার স্বপ্ন দেখত। সাধ ছিল জটিল রহস্যের সমাধান করার। কিছুতেই হচ্ছিল না। আচমকা… থাক! তারপর কী হল? সে কাহিনি না হয় এখন নাইবা বললাম। তার চেয়ে বরং একটু রবি ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) কথা বলা যাক। বলা যাক পুরনো কলকাতার কথা। যে কলকাতার মুক্ত বাতাস নিজের ছবিতে ফিরিয়ে দিয়েছেন পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্পের অনুপ্রেরণায় ‘ডিটেকটিভ’-এর চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন সৌগত বসু। অতি সুচারুভাবে রাজনৈতিক চিন্তাধারাকে ছুঁয়ে গিয়েছেন। একদিকে যেমন রয়েছে বঙ্গভঙ্গ, স্বদেশি আন্দোলন, অন্যদিকে আবার সেই বাঙালির কথাও রয়েছে যাঁরা না বিপ্লবে রয়েছেন, না শক্তির আস্ফালনে। স্বপ্নে শার্লক হোমস হয়েও শুধুমাত্র বাঙালিই ইংল্যান্ডের রানিকে দিয়ে কুমড়োর ছেঁচকি রাঁধাতে পারে। আবার মাগুর মাছের কাঁটা সূত্র ধরে রহস্যের সমাধান করতে পারে।
[আরও পড়ুন: ‘দুর্যোগ কাড়তে পারে না ভালবাসার স্বাধীনতা’, ১৫ আগস্টের প্রাক্কালে আত্মবিশ্বাসী প্রসেনজিৎ]
মহিমচন্দ্রের ভূমিকায় অনির্বাণ ভট্টাচার্যকে (Anirban Bhattacharya) নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। লকডাউনের আগে কিছুদিন শুটিং করেছিলেন অনির্বাণ। পরে আবার ফুটেজ দেখে মহিমচন্দ্রের শরীরে তাঁকে প্রবেশ করতে হয়েছিল। প্রতি চরিত্রের ক্ষেত্রে যে খোলস অভিনেতারা পরেন, তা যেন অনির্বাণের চামড়ার সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে যায়। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সংলাপের চাইতেও বলিষ্ঠ ইশা সাহার (Ishaa Saha) অভিব্যক্তি। নববধূর আকুতির পাশাপাশি দুর্বোধ্য নারী চরিত্রে প্রতীক হয়ে উঠেছেন ইশা। সাজসজ্জায় অতীতের সোনালি দিনের কথা মনে করিয়েছেন তিনি। ইশাকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন তৃণা। শ্রীতমা সহজাত। হুতাসনের চরিত্রের প্রতিটা পরিবর্তনে বলিষ্ঠ অম্বরীশ ভট্টাচার্য। মন্মথর চরিত্রের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সাহেব ভট্টাচার্য (Saheb Bhattacharya) অভিনয়ে ব্যক্ত করেছে। প্রশংসার দাবি রাখেন মাস্টারমশাই।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেক আগেই ডিজিটাল রিলিজের পক্ষে হেঁটেছে বলিউড। ‘ডিটেকটিভ’-ই প্রথম বাংলা ছবি হিসেবে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই-য়ে মুক্তি পেল। ১১৫ মিনিটের ছবি দেখতে দেখতে অতীতের কলকাতার কথা বারবার মনে পড়ে যায়। আর সেই মন কেমন করাকে যেন আরও প্রশ্রয় দেয় জয় সরকারের আবহ সঙ্গীতে রবিঠাকুরের সুর।
[আরও পড়ুন: বিলাসিতার চরমে থাকা বিজয় মালিয়ার কাহিনি এবার ওয়েব সিরিজে, মুখ্য ভূমিকায় কে?]
ব্যতিক্রমের চাহিদায় ওয়েব কনটেন্টগুলোও যেন কোথাও গিয়ে গতে বাঁধা হয়ে যাচ্ছে। রহস্য-খুন-হিংসা-যৌনতার মতো আবেগগুলোই প্রাধান্য পাচ্ছে। কালেভদ্রে একটা ‘পঞ্চায়েত’ দমকা হাওয়ার মতো তরতাজা করে যায়। আর বাঙালি মনকে সন্তুষ্ট করে ‘ডিটেকটিভ’। ফেলুদা, ব্যোমকেশ, কাকাবাবু, শবরদের ভিড়ে ‘ডিটেকটিভ’ মহিমচন্দ্র ব্যতিক্রমের ছাপ রেখে যায়। শেষে একটি প্রশ্ন অবশ্য থেকে যায়। নটে গাছটি কি মুড়ালো? না, উত্তর আমার বলা বারণ। আরে মশাই আপনিও তো বাঙালি। একটু গোয়েন্দাগিরি করুন না!
The post ‘ডিটেকটিভ’ রিভিউ: গোয়েন্দাও এমন মজার হয়, অনির্বাণকে না দেখলে বোঝা যায় না appeared first on Sangbad Pratidin.