সুপর্ণা মজুমদার: শুধুই কি কমেডিয়ান? না, তা নয়। শিল্পীর কোনও 'টাইপ' হয় না। তাঁর চাই মঞ্চ। সেটা কাঠের হোক বা সিনেমার ফ্লোর। পারফর্ম করাই ধর্ম। আর তাই-ই কর্ম। যা করে গিয়েছেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৫৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল 'যমালয়ে জীবন্ত মানুষ'। সেই সিনেমার কথা মাথায় রেখে কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত 'যমালয়ে জীবন্ত ভানু' না দেখতে যাওয়াই ভালো। কৃষ্ণেন্দুর সিনেমা অবশ্যই ভানুর কিরণে আলোকিত। তবে তা এক ভিন্ন গল্প। এই গল্প 'ভানু' শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিংবদন্তি ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসল নাম সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায়। একথা অনেকেরই জানা। সেই নামই 'যমালয়ে জীবন্ত ভানু' সিনেমায় ব্যবহার করেছেন কৃষ্ণেন্দু। তবে ভিন্ন চরিত্রের জন্য। অম্বরীশ ভট্টাচার্য অভিনীত চরিত্রের নাম সাম্যময় এবং ঘটনাচক্রে তারও পদবী বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজ্ঞানী সাম্যময় এমন এক যন্ত্র (জাতিস্মর) আবিষ্কার করেছে যার মাধ্যমে অতীতে যাওয়া সম্ভব। সেই আবিষ্কারের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ অনুষ্ঠানের দিনই ঘটে দুর্ঘটনা।
গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয় সাম্যময়। যথা সময়ে শার্ট-প্যান্ট পরা যমদূত এসে তাকে 'দৈব এস্কেলেটর'-এ করে যমালয়ে নিয়ে যায়। সেখানেই তার দেখা হয় 'জীবন্ত ভানু'র সঙ্গে। এখনও স্বর্গের অপ্সরাদের 'হাং হাং গুড় গুড়' নাচ শিখিয়ে উঠতে পারেননি ভানু। তবে ইন্দ্রকে বুঝিয়ে নিজের বয়স পঞ্চাশ বছরে আটকে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। স্বর্গে বাঙালির দেখা পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে যান ভানু। কিন্তু সাম্যময়? তার কি সত্যিই এই সময় পরলোকে যাওয়ার ছিল? না কি এর নেপথ্যে রয়েছে কোনও ষড়যন্ত্র? প্রশ্নের উত্তর সিনেমা হলে গেলেই পেয়ে যাবেন। সেই সঙ্গে পাবেন পুরনো স্মৃতির নস্ট্যালজিয়া।
ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য ছিলেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। এই চরিত্রে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন তিনি। অম্বরীশ সাম্যময় হিসেবে তাঁকে যোগ্য সঙ্গতই দিয়েছেন। বলতে গেলে এই দুজনই সিনেমার মুখ্য চরিত্র। বাকি চরিত্ররা স্বল্প সময়ের জন্য এলেও স্ক্রিন ভরিয়ে দিয়েছেন। চিত্রগুপ্ত হিসেবে শুভাশিস মুখোপাধ্যায়কে দেখে 'হীরক রাজার দেশে'র গবেষকের কথা মনে পড়েছে। ইন্দ্রের চরিত্রে সাহেব চট্টোপাধ্যায়কে বেশ মানিয়েছে। পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (বিধাতা), সন্দীপ ভট্টাচার্য (যম), দর্শনা বণিক (সুচিত্রা সেন), বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায় (রুমা গুহঠাকুরতা), দেবলীনা দত্তরাও (নীলিমা দেবী) বেশ ভালো। হ্যাঁ, কিছু জায়গায় মনে হয়েছে ছবির স্পেশাল এফেক্ট আরেকটু ভালো হতে পারত। সেট ডিজাইনও একটু ভালো হতে পারত বলে মনে হল। এক্ষেত্রে এটাও মানতে হবে যে বাংলা সিনেমার বাজেট অল্প। তবে দর্শক হিসেবে প্রত্যাশা তো থাকেই। সবশেষে বলা যায়, হাস্যরসে সমৃদ্ধ এক সিনেমা উপহার দিয়েছে 'যমালয়ে জীবন্ত ভানু'। আর হ্যাঁ, সপরিবারে গিয়েই দেখতে পারবেন।
সিনেমা - যমালয়ে জীবন্ত ভানু
অভিনয়ে - শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সন্দীপ ভট্টাচার্য, দর্শনা বণিক, বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায়, দেবলীনা দত্ত
পরিচালনা - কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়