চারুবাক: বানতলা। এই শব্দেই ফিরে আসে নয়ের দশকের নারকীয় স্মৃতি। একদল দুষ্কৃতীর হাতে সরকারের দুই মহিলা স্বাস্থ্য আধিকারিক ও একজন ইউনিসেফের আধিকারিকের ধর্ষণের খবর প্রকাশ্যে আসে। এক নির্যাতিতার যৌনাঙ্গে নাকি টর্চ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ভয়াবহ সেই ঘটনাই পরিচালক কিংশুক দের ‘দ্য রেড ফাইলস’ (The Red Files) সিনেমার উপজীব্য।
তরুণ পরিচালক তাঁর চিত্রনাট্যে বানতলার ঘটনা নিয়ে বিচারের নামে প্রহসনের ইতিবৃত্ত তুলে ধরেছেন। বাম আমলের কঙ্কালসার চেহারা দেখিয়েছেন তিনি। জনৈক বিক্রমজিতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অতীতের দলিল-দস্তাবেজ ঘেঁটেই চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন পরিচালক। তাঁর সেই পরিশ্রমের চিহ্ন গোটা সিনেমায় রয়েছে। তবে আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। ফলে সিনেমাটি মূলত ঘটনার ধারাবিবরণীর মতো মনে হয়েছে। দর্শকের মন ছোঁয়ার মতো কোনো মুহূর্ত গড়ে ওঠেনি। তার জন্য প্রয়োজন ছিল আরও গতি, মেদহীন সম্পাদনা।
[আরও পড়ুন: বর্ধমানের চারশো বছরের পুরনো রাজবাড়িতে কাজল, কী এর ইতিহাস?]
বানতলার সেই ঘটনার নেপথ্যে তৎকালীন শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীর পরোক্ষ মদতের অভিযোগ ছিল। অনভিপ্রেত ঘটনাকে ক্ষমতার জোরে ইতিহাসের আস্তকুঁড়ে ফেলে রাখার চেষ্টাও নাকি ছিল। ‘দ্য রেড ফাইলস’ সেই রাজনৈতিক দলের ‘চেষ্টা’র প্রতিই আঙ্গুল তুলেছে। একই সঙ্গে বিচার বিভাগের জটিল ধাঁধার দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা রয়েছে ছবিতে। প্রয়োজন ছিল সিনেমার ভাষায় ছবিটিকে সাজানো, সেটাই হয়নি।
কী প্রয়োজন ছিল পুলিশের তরুণ কর্মী অর্কর সঙ্গে মনস্তত্ত্বের গবেষণায় আগ্রহী তরুণী তানিকশার রোম্যান্টিক অ্যাঙ্গেলটি ব্যাবহার করার? তার পর আবার তাদের একটি নাচ-গানের দৃশ্যও রয়েছে। এর চাইতে তদন্তকারী পুলিশ অফিসার প্রীতি রাওয়ের কাজের দিকে আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। রাজনৈতিক কোনও ঘটনা নিয়ে ‘থ্রিলার’ বানাতে হলে সিনেমা তৈরির ব্যাকরণ একটু রপ্ত করে আসা দরকার। কিংশুক দে সেই হোমওয়ার্কটাই যেন করেননি। ফলে তাঁর উদ্দেশ্য যতই মহৎ হোক না কেন, দর্শকের মনে এই ছবি তেমন রেখাপাত করবে কি?
অথচ ছবির অভিনয় শিল্পীরা কেউই কিন্তু তাঁদের চেষ্টায় ত্রুটি রাখেননি। প্রীতির চরিত্রে মুমতাজ সরকার বেশ দাপট নিয়েই অভিনয় করেছেন। পক্ষ-বিপক্ষের দুই উকিলের চরিত্রে কিঞ্জল নন্দ ও বিদীপ্তা চক্রবর্তী আদালত কক্ষের বাদানুবাদে ভালই সামলেছেন। চোখে পড়ে সাংবাদিক ইমরানের চরিত্রে সৌম্যেন্দু ভট্টাচার্য, হুমায়ন চরিত্রে দীপক হালদার, মিঠুনের ভূমিকায় দেবপ্রসাদ হালদার। কাহিনীর মধ্যে বানানো রোম্যান্টিক অ্যাঙ্গেলে থাকা দুটি নতুন মুখ অভিরুপ এবং তানিকশা এখনও ক্যামেরা সচেতনতা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। আরও অনুশীলন প্রয়োজন! সৌম্য-ঋতের সুরে এবং কথায় দুটি গান আলাদা ভাবে শুনলে মন্দ লাগবে না।
সিনেমা – দ্য রেড ফাইলস
অভিনয়ে – মুমতাজ সরকার, কিঞ্জল নন্দ, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, সৌম্যেন্দু ভট্টাচার্য, দীপক হালদার, দেবপ্রসাদ হালদার, অভিরুপ এবং তানিকশা
পরিচালনা – কিংশুক দে