সুলয়া সিংহ: তখন বাংলায় OTT প্ল্যাটফর্মের প্রায় জন্মলগ্ন। স্মার্টফোনের স্ক্রিনজুড়ে গ্ল্যামারাস প্রিয়াঙ্কা সরকার ও রাইমা সেনের (Raima Sen) উপস্থিতি মন ভরিয়েছিল দর্শকদের। কিন্তু ২০২১ সালে সেই রহস্য-রোমাঞ্চ ও রোম্যান্সে ভরা ওয়েব সিরিজটি দেখতে যে এতখানি বিরক্তি বোধ হবে, সত্যিই আশা কর যায়নি!
হ্যাঁ, হ্যালোর তৃতীয় সিজন দেখে প্রথমে একথাটিই বলতে বাধ্য হচ্ছি। এই মরশুমে মোট ছ’টা পর্ব। যেখানে আরও কিছু চরিত্রের সংযোজন ঘটেছে। যে ফাঁদে পা দিয়ে নিজের স্ত্রীর থেকে দূরত্ব বেড়ে গিয়েছিল অনন্যর (জয় সেনগুপ্ত), ফের একাকীত্ব কাটাতে সেই নারীসঙ্গতেই ভরসা রেখেছে সে। নতুন করে পামেলার প্রতি আকৃষ্ট অনন্য। গল্পে ঢুকে পড়েছে রাইমা সেন ওরফে নন্দিতার কলেজ জীবনের প্রেমিকও। সেই ভূমিকায় ধরা দিলেন সাহেব ভট্টাচার্য। প্রাক্তন প্রেমিকও অদ্ভুতভাবে হয়ে উঠেছেন রহস্যময়। গোটা সিজনে একের পর এক রহস্যের জাল বোনার চেষ্টা করেছেন পরিচালক সৌমিক চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু কোথাও গিয়ে সেই রহস্যের জট সাসপেন্স তৈরি করার তুলনায় বেশি বিরক্তই করেছে। কারণ স্মার্ট-আত্মনির্ভর নন্দিতা কোনওভাবেই প্রিয়াঙ্কা অর্থাৎ নীনার আসল চেহারাটা ধরতে পারল না। এমনকী তার স্পর্শেও আলাদা কোনও অনুভূতি হয় না তার। কিংবা যে ব্যক্তি বারবার নন্দিতাকে কিছু বলার চেষ্টা করল, সেও অতিরিক্ত নাটকীয়ভাবে তার নাগালই পেল না।
[আরও পড়ুন: মুক্তিযুদ্ধের অজানা কাহিনি কতটা তুলে ধরতে পারল ‘রূপসা নদীর বাঁকে’? পড়ুন রিভিউ]
আরও কয়েকটি বিষয় বেশ খাপছাড়া। যেমন হঠাৎ করে নন্দিতার স্কুলে চাকরি পেয়ে যাওয়া। আবার একেবারে অপ্রত্যাশিতভাবে দুর্গাপুজো শুরু হয়ে যাওয়া। অপ্রত্যাশিত এই জন্যই, কারণ এই দুর্গাপুজোই ছিল ওয়েব সিরিজটির অন্যতম আকর্ষণ। প্রথম সিজনে যা সুন্দরভাবেই ফুটে উঠেছিল। কিন্তু এই মরশুমে বড্ড নিঃশব্দে কলকাতায় দুর্গাপুজো এল। তৃতীয়ত, পক্ষাঘাতগ্রস্ত প্রিয়াঙ্কা কীভাবে এত বিপুল অর্থের মালকিন, তাও ঠিক স্পষ্ট নয়।
সিরিজ শেষে একাধিক প্রশ্ন তৈরি হয়। কিন্তু তার উত্তর পাওয়ার ইচ্ছা দর্শকদের কতটা থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ ‘এদিকের প্ল্যান’, ‘ওদিকের প্ল্যান’, প্রিয়াঙ্কার (Priyanka Sarkar) জীবনের অসংখ্য গোপন কথা মিলিয়ে একেবারে জগা-খিচুরি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এককথায়, অতি ‘রহস্যে’ গাজন নষ্টের জোগাড়। যে ভালবাসার জন্য নীনার এত ‘নাটক’, একগুচ্ছ রহস্যের গেড়োয় সেই ফ্ল্যাভারটাই উধাও। কোনও একটি দিকের রহস্য উন্মোচিত হলে হয়তো সিজনটি আরও বেশি ইন্টারেন্টিং হয়ে উঠতে পারত। তবে স্বস্তি একটাই, রহস্যভেদ হবে শীঘ্রই। ২৯ জানুয়ারিই হ্যালো (Hello 3) সিরিজের চতুর্থ তথা অন্তিম সিজন মুক্তি পাবে। পরিচালক যে গল্পকে অকারণ আর দীর্ঘায়িত করার সিদ্ধান্ত নেননি, এটা ভেবেই ভাল লাগছে।