shono
Advertisement
Dhrubor Aschorjo Jibon Review

প্রথাভাঙা ছবি 'ধ্রুবর আশ্চর্য জীবন', পড়ুন রিভিউ

কেন এই ছবি দেখতে গিয়ে দর্শকরা নিরাশ হবেন না? রিভিউয়ে জেনে নিন।
Published By: Sandipta BhanjaPosted: 12:05 PM Feb 28, 2025Updated: 03:01 PM Feb 28, 2025

শম্পালী মৌলিক: অন্তিম পর্যায়ে মেয়েটা একটা ম্যাজিক ট্রিক দেখায়। প্রায় ঘাড় ধরে ছেলেটাকে বলে, 'তুমি এসেছ, কারণ আমি চেয়েছি তুমি এসো'- সুররিয়‍্যাল মুহূর্ত। শুধু এই সিকোয়েন্সটার জন্যই ছবিটা দু'বার দেখা যায়। এক ছবিতে ভালোবাসা, থ্রিল, সায়েন্স ফিকশনের জাদু বুনে দিয়েছেন পরিচালক অভিজিৎ চৌধুরি। এক পলকের দূরত্বে সত্যি-মিথ্যে পালটে যায়। মেয়েটা বলে, 'আমি অনেক জটিল ম্যাথমেটিক্যাল ইকুয়েশন বুঝেছি। কিন্তু ভালোবাসা বিষয়টা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। সেটা তোমার সাথে আরেকবার এক্সপিরিয়েন্স করতে চাই।' কী করে সম্ভব? সময় কোথায়! কাজ, দায়িত্ব, কর্তব্য- তার কী হবে? ছেলেটা (ঋষভ) বলে, 'তুমি আমার সঙ্গে চলো।' মেয়েটা (ঋত্বিকা) নিশ্চিত, 'আমাদের আর অন্য কোথাও যাওয়ার নেই। শুধু ধ্রুব আর রিমির কাছে যেতে পারি।' অর্থাৎ নিজেদের কাছে ফেরা ছাড়া উপায়ন্তর নেই। সমান্তরাল পৃথিবীর এ এক আশ্চর্য গল্প।

Advertisement

যেমনটা জীবনে হয়, অসংখ্য সম্ভাবনার মধ্য দিয়ে যাই আমরা। অগুন্তিবার হেরে যাই। প্রতিটা পরাজয়ের পরেও এমন কেউ থাকে জীবনে যে অদ্ভুতভাবে স্থির। ধ্রুবকে রিমি বলে 'প্রতিবার কীভাবে যেন তুমি চলে আসো'। যার সঙ্গে সকলেই কম-বেশি মিল খুঁজে পাবেন ছবি দেখতে গিয়ে। ধ্রুবর জীবনের চারটে অধ্যায়, চারটে সম্ভাবনা নিয়ে এই ছবির গল্প দানা বেঁধেছে। অনেক ফেস্টিভ্যালে সমাদৃত ছবি। নিঃসন্দেহে এক্সপেরিমেন্টাল। নবজাগরণের চার কিংবদন্তি শিল্পীর সঙ্গে আজকের ডিজিটাল- সোসাইটির মেলবন্ধনের প্রয়াস ছবিজুড়ে। গল্প বলার আঙ্গিকে যামিনী রায়ের ব্রাশ স্ট্রোক, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দর্শন, বিকাশ ভট্টাচার্যর রিয়‍্যালিজম এবং বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের দৃষ্টিকোণ রূপক হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। বাস্তবতা, নৈতিকতা, চেতনার এক চ্যালেঞ্জিং জার্নি এই ছবি। তত্ত্বকথার দিকে না গিয়েও বলা যায়, এই ছবি যতখানি ক্রাইম ড্রামা, ততখানি অফুরান ভালোবাসার। ছবিটা বলে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের চয়েসের মধ্যে বাঁচতে হয়। কখনও চয়েস করার ক্ষমতা নিজের হাতে, কখনও অন্যের হাতে। আমার-আপনার কিংবা ছবির ধ্রুবর জীবনেও তাই। প্রেমিকা রিমি ধ্রুবকে মনে করিয়ে দেয়, শ্রোডিংগারের বিড়াল এক্সপেরিমেন্টের কথা। বাক্সের মধ্যে বেড়ালটা একই সঙ্গে জীবিত এবং মৃত। আসলে দুটো সমান্তরাল বিস্ময়। ঠিক যেমন ভালোবেসে আমরা মরি, একই সঙ্গে তীব্রভাবে বাঁচি। ছবির এই পর্বের শিরোনাম 'দ্য ইনার আই'। যখন মেয়েটি আশ্চর্য ক্ষমতাবলে ভবিষ্যৎ দেখতে পায়, এমনকী, অতীতও! এআই, ভিস্যুয়াল এফেক্টস ইত্যাদির আস্ফালন সত্ত্বেও এই চতুর্থ অধ্যায়ে মনে থেকে যাবে ঋত্বিকা পালের ইথেরিয়াল প্রেজেন্স।

অভিজিৎ চৌধুরির এই ছবি শুরু হয় 'আমি যামিনী' অধ্যায় দিয়ে। যেখানে প্রেমিকা রিমির পরিবারের অর্থ সংকটে ধ্রুব জটিলতার মুখোমুখি হয়। নৈতিকতার টানাপোড়েনে বিদ্ধ সে। রিমি চায় না ধ্রুব অপরাধ করে। একটা পেন্টিং বিক্রিকে কেন্দ্র করে গল্প মোড় নেয়। দ্বিতীয় অধ্যায় 'প্রতিমা বিসর্জন'। যেখানে কপি ছবি আঁকা ধ্রুব আর তার বন্ধু নন্দীর (কোরক সামন্ত) জুটি দেখি আমরা। দারুণ লাগে তাদের বোঝাপড়া। এদের মাঝে এসে পড়ে কিউরেটর ফিরোজা (আনন্দরূপা চক্রবর্তী)। তার সঙ্গে একটা ভিডিও শুট নিয়ে গল্প এগোয় থ্রিলারের ছন্দে। পার্টি-সংগঠনের দ্বন্দ্বের পাশাপাশি হাত ধরে থাকে ভালোবাসা। একটু প্রেডিক্টেবল, তবুও বাকিটা ছবিতে দেখাই ভালো। তৃতীয় অধ্যায় 'পুতুল খেলা'। এখানে ধ্রুবর পুলিশ-জীবন, অনাথ আশ্রম ও শিশু বিক্রির চক্রের অন্ধকার দিক উঠে এসেছে। স্বপ্নদৃশ্যের নির্মাণ চমৎকার। বাকিটা সারপ্রাইজ থাক। শেষ অধ্যায় নিবেদিত বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের প্রতি। যেটা আগেই উল্লেখ করলাম, ছবির সেরা অভিজ্ঞতা। যখন ছেলেটার জীবনের সমস্ত সম্ভাবনা, হিসেব-নিকেশের অঙ্ক প্রেমিকার সামনে এসে যায়। রিমি অন্ধ কিন্তু সব চেয়ে বেশি দেখতে পায় ধ্রুবকে। পুরোটা হলে গিয়ে এক্সপিরিয়েন্স করতে হয়। মাল্টিভার্স, প্যারালাল রিয়ালিটি নিয়ে বাংলা সিনেমায় এরকম কাজ হয়েছে বলে তো মনে পড়ে না।

গত ডিসেম্বরে 'কিফ'-এ বেঙ্গলি প্যানোরামা বিভাগে সেরা ছবি নির্বাচিত হওয়া এই ফিল্মটির জোরের জায়গা ভাবনা এবং নির্মাণশৈলী। এবার আসা যাক অভিনয় প্রসঙ্গে। কেন্দ্রচরিত্রে ঋষভ বসু আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। তাঁকে বেশ সুন্দর দেখিয়েছে। শুধু অভিনয়ের নিরিখে আরও প্রত্যাশা ছিল। বন্ধুর চরিত্রে কোরক সামন্ত দুর্দান্ত। অভিনয়ের মাত্রা কমানো-বাড়ানো তাঁর আয়ত্তে বোঝা যায়। ফিরোজার চরিত্রে আনন্দরূপা চক্রবর্তী ইন্টারেস্টিং, কিন্তু অভিনয় আরও সাবলীল হতে পারত। রিমির বাবার চরিত্রে বাদশা মৈত্র আগাগোড়া বিশ্বাসযোগ্য। স্বল্প পরিসরে দেবেশ চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ মুখোপাধ্যায়, দীপক হালদার, যুধাজিৎ সরকার, সেঁজুতি মুখোপাধ্যায় বেশ মসৃণ। সব শেষে বলব রিমির কথা। এই চরিত্রে ঋত্বিকা পাল স্রেফ তাঁর অভিব্যক্তির জোরে প্রাণ ঢেলে দিয়েছেন। প্রত্যেক সিনে তিনি অব্যর্থ। আশা করা যায় ভবিষ্যতে তিনি আরও সুযোগ পাবেন। অর্ণব লাহার ক্যামেরা বেশ ভালো এবং সমান্তরাল পৃথিবীর কাহিনির চিত্ররূপে ভিএফএক্স-এর কাজ বেশ উন্নত। তিমির বিশ্বাস এবং প্রলয় সরকারের গান শুনতে ভালোই লাগে। আজ ছবির মুক্তি। পরিচালক অভিজিৎ চৌধুরির সিনেমায় প্রথাভাঙার সাহস এবং সম্ভাবনা আছে। দর্শক হলে গেলে নিরাশ হবেন না। এই ছবির 'ম্যান অফ দ্য ম্যাচ' পরিচালক অভিজিৎ চৌধুরি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ধ্রুবর জীবনের চারটে অধ্যায়, চারটে সম্ভাবনা নিয়ে এই ছবির গল্প দানা বেঁধেছে।
  • অনেক ফেস্টিভ্যালে সমাদৃত ছবি। নিঃসন্দেহে এক্সপেরিমেন্টাল।
  • এই ছবির 'ম্যান অফ দ্য ম্যাচ' পরিচালক অভিজিৎ চৌধুরি।
Advertisement