shono
Advertisement

পর্দার ইহুদি গণহত্যাকে ছাপিয়ে গেল ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’, কাঁদতে কাঁদতে প্রেক্ষাগৃহ ছাড়লেন দর্শকরা

পর্দায় ফুটে উঠল কাশ্মীরি পণ্ডিতের যন্ত্রণার কাহিনি।
Posted: 09:47 PM Mar 13, 2022Updated: 10:06 PM Mar 13, 2022

দীপঙ্কর মণ্ডল: ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ দর্শকের চোখের উপর থেকে ঠুলি সরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড় করায়। দেশের বৃহত্তম গণহত্যার বিচার চায় এই সিনেমা। কাশ্মীরের সংখ্যালঘু হিন্দুদের তাড়িয়ে দেওয়ার ৩১ বছর পরেও কেন তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারেন না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

Advertisement

গোটা দুনিয়ায় স্কুলস্তর থেকেই শিশুরা জেনে যায় হিটলারের ইহুদি গণহত্যার কুকীর্তি। ভারতীয় পড়ুয়াদের পাঠক্রমেও আছে সেই নাৎসি অত্যাচার। কিন্তু কোনও এক রহস্যজনক কারণে দেশবাসী জানতেই পারে না নিরীহ কাশ্মিরী পণ্ডিতদের উপর নির্যাতনের কথা। গণধর্ষণ, গণহত্যা এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে তাদের বাড়ি ছাড়া করার করুন কাহিনি বন্দি থাকে সরকারি ফাইলে। মাস যায় বছর যায়। স্বজন হারানো কাশ্মীরি পণ্ডিতদের পরিবার বাড়িছাড়া থাকে তিন দশক। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা এমন সাতশো পরিবারের সঙ্গে কথা বলার নির্যাসে তৈরি হয় ১৭০ মিনিটের সিনেমা। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’। হলোকস্টের চেয়েও যা মর্মান্তিক।

রবিবার নিউটাউনের একটি মাল্টিপ্লেক্সে জড়ো হয়েছিল কলকাতার কাশ্মীরি সমাজ। ১৯৯০ সালে যাঁরা কাশ্মীর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। আত্মীয় পরিজনদের রক্তে রাঙা পোশাকে জম্মুর উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন তাঁরা। কাশ্মীরের মুছে ফেলা সেই রক্তাক্ত ইতিহাস যখন পর্দায় দেখানো হচ্ছিল, স্থির থাকতে পারছিলেন না কৃষ্ণা কাচরু, সুমন রায়না, প্রীতি থুসোরা। কাশ্মীরিদের পাশাপাশি দর্শকাসনে বহু বাঙালি। বেরনোর সময় কাঁদছেন না, মেলেনি এমন একজনও। শোকের সঙ্গে দেখা গেল ক্রোধ। কেন স্বাধীন দেশের সরকার গনহত্যার বিচার করল না? কেন কেউ শাস্তি পেল না? কেন ৩১ বছর পরেও ‘নিজ ভূমে পরবাসী’ হয়ে থাকতে হচ্ছে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের? এমন প্রশ্নে মুখর হয়েছে দর্শকমণ্ডলী।

[আরও পড়ুন: উধাও ঝাঁকড়া চুল, নতুন রূপে রাজ-শুভশ্রীর ছেলেকে চেনাই দায়!]

১১ মার্চ ভারত-সহ বিভিন্ন দেশে ৭০০-র কাছাকাছি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে কাশ্মীর ফাইলস। পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীর নিষ্ঠায় এটি কোনও সিনেমা নয়, বলা যায় একটি ঐতিহাসিক তথ্যচিত্র। স্বাধীন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যার এক জীবন্ত দলিল। পুষ্করনাথের চরিত্রে অনুপম খের। তিনি নিজেই একজন কাশ্মীরি পন্ডিত। তাঁর বাবার চরিত্রটি পর্দায় অসামান্য নৈপুণ্যে রূপায়িত করেছেন অনুপম। কলেজ পড়ুয়া কৃষ্ণ হয়েছেন দর্শন কুমার। আইএএস অফিসার ব্রহ্ম চরিত্রে মিঠুন চক্রবর্তী। রাধিকা চরিত্রে অন্যতম প্রযোজক পল্লবী জোশী। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের তৎকালীন ডিজিপির রোলে আছেন পুনীত ইশার।

কুখ্যাত জঙ্গী জিহাদী বিট্টার চরিত্রে চিন্ময় মন্ডলেকার। এঁরা তো বটেই ছোট ছোট চরিত্রে যারা আছেন প্রত্যেকেই যথাযথ। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিবেক অগ্নিহোত্রী আগেই জানিয়েছেন, চার বছর ধরে গবেষণার ফসল তাঁর এই ছবি। সংলাপের প্রতিটি শব্দ তিনি নিয়েছেন অত্যাচারিত কাশ্মীরি পণ্ডিতদের মুখ থেকে। ২০১৯-এর আগস্টে প্রথম পোস্টার প্রকাশ থেকে মুক্তির আগের দিন পর্যন্ত একাধিক মামলা হয়েছে ‘কাশ্মীর ফাইলস’র বিরুদ্ধে। ধোপে টেকেনি অভিযোগ। কলকাতা-সহ দেশের প্রতিটি শহরে রমরম করে চলছে কাশ্মীরি হিন্দু পণ্ডিতদের করুণ আখ্যান। হরিয়ানা সরকার ইতিমধ্যে এই সিনেমায় কর মকুব করেছে। আরও কিছু রাজ্য এগোচ্ছে সে পথে। ছবি মুক্তির তৃতীয় দিনেই বোঝা যায় অন্তত হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করবে এই সিনেমা।

কাশ্মীরী পুলিশের ফাইল থেকে যতটুকু জানা যায়, শিক্ষাবিদ সর্বানন্দ কাউল প্রেমী যেখানে তিলক পরতেন কপালের ঠিক সেই অংশে পেরেক ঠুকে হত্যা করা হয়েছিল। জেহাদিদের বন্দুকের মুখে খুন হওয়া স্বামী বিকে গাঞ্জোর রক্তে ভাত মেখে খেতে হয়েছিল স্ত্রীকে। সরলা ভাট’কে গনধর্ষনের পর উলঙ্গ দেহ পড়েছিল রাস্তায়। মাট্টানের রবীন্দর পন্ডিতকে খুন করে তাঁর দেহের উপর নেচেছিল জেহাদীরা। সোপিয়ানে ব্রিজলাল ও ছোটি’র দেহ জীপে বেঁধে প্রকাশ্য রাস্তায় টানা হয়েছিল। বন্দীপুরার স্কুলশিক্ষিকা গিরজা টিক্কা মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত গণধর্ষিতা হয়েছিলেন। এমন লাখ লাখ ঘটনার অংশবিশেষ উঠে এসেছে ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-এ। বিদ্যুত ও টেলিফোন লাইন কেটে মসজিদের মাইক থেকে নির্দেশ এসেছিল হয় ধর্মান্তরিত হও বা কাশ্মীর ছাড়ো নচেৎ মৃত্যুবরণ করো। যাওয়ার আগে নারীদের রেখে যাও। ওদের আমরা ভোগ করব। কুৎসিততম এসব ঘটনা তাঁর ছবি থেকে বাদ দেননি বিবেক। জঙ্গিদের বন্দুকের নল থেকে বাদ ছিল না শিশুরাও। দর্শকাসনে বসে তাই কাশ্মীরের অত্যাচারিত অঞ্জু টিক্কুর মনে পড়ে তাঁর ভাইয়ের কথা। চোখের সামনে যাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।

কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী বিট্টা কারাটে ২৫ জনেরও বেশি পণ্ডিতকে খুনের পর গর্বের সঙ্গে সেকথা বলে বেড়াত। এই নিষ্ঠুর খলনায়কের চরিত্রে প্রায় অচেনা চিন্ময়ের অভিনয় দেখে শিউরে উঠতে হয়। মহিলাদের বিবস্ত্র করা, একটিপে শিশু হত্যা, পণ্ডিতদের কপালে তিলকের উপর গুলি চালানোর পর এক চোখ বন্ধ করার বিশেষ ম্যানারিজমে শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়। জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট গণহত্যার কিছু দায় স্বীকার করেছে। বছর তিনেক আগে সংবিধান থেকে অবলুপ্ত হয়েছে ৩৭০ ধারা। কিন্তু হিন্দু পণ্ডিতরা এখনও ফিরতে পারেননি কাশ্মীর উপত্যকায়। জম্মুর এক কামরা ঘরে দিন কাটাচ্ছে বহু পরিবার। তাঁদের বাড়িঘর ও ভূসম্পত্তি গ্রাস হয়ে আছে। কাশ্মীরি সমাজের সদস্য সুনীল কৌরের প্রশ্ন, “সরকার কেন চুপ করে আছে। কেন আমরা বিচার পাব না?”

[আরও পড়ুন: ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ ছবির প্রশংসায় প্রধানমন্ত্রী মোদি, দেখা করলেন কলাকুশলীদের সঙ্গে]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement