স্টাফ রিপোর্টার: কলকাতা ট্রাম (Tram) বা ট্রামওয়েজের জমি বা সম্পত্তি বিক্রির উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta High Court)। আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জমি বা সম্পত্তি বিক্রি করা যাবে না বলে নির্দেশ দিল হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ।
সরকারি কাজ বা সাধারণ মানুষের কাজে লাগবে না এটা নিশ্চিত হয়েই সরকারি জমি বিক্রি করা উচিত বলেই আদালতের পর্যবেক্ষণ। এই জন্যে ট্রাম রক্ষায় নতুন কমিটি গড়তেও রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। কমিটিতে থাকবেন একজন সরকারি আধিকারিক, বিশেষজ্ঞ, মামলাকারীর প্রতিনিধি। আদালতের আরও পর্যবেক্ষণ, হেরিটেজ রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। রাজ্যের একাধিক হেরিটেজ রাজ্য সম্পূর্ণ নিজের অর্থে অথবা আংশিক কেন্দ্রীয় সাহায্যে রক্ষা করে।
[আরও পড়ুন: ব্লেড-রড দিয়ে যুবতীকে নৃশংস নির্যাতন! চিৎকার করতেই টিভির আওয়াজ বাড়াল আত্মীয়রা]
কলকাতার ট্রাম সংরক্ষণের দাবিতে হাই কোর্টে মামলা করেন সুলগ্না মুখোপাধ্যায়। মামলাকারী জানান, ‘‘১৮৭৩ সালে প্রথম ট্রাম চালু হয়। ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কলকাতার একটা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, দূষণমুক্ত বাহন। অথচ কর্তৃপক্ষ ট্রাম চালাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হেরিটেজ হিসাবে এর সংরক্ষণ করা উচিত।’’ তাঁর দাবি, আগে ট্রাম প্রায় ১১৬ কিমি দীর্ঘ পথে চলত, এখন সেটা কমে প্রায় ৩৩ কিমিতে এসে দাঁড়িয়েছে। আগে ২০টি রুটে ট্রাম চলত, এখন মাত্র ৩টি রুটে চলে। শহরে অবস্থিত ৬টি ট্রাম ডিপোর মধ্যে মাত্র ২টি কার্যকর রয়েছে। বেলগাছিয়া ও টালিগঞ্জের ডিপো বেসরকারি সংস্থার কাছে বিক্রি করা হয়ে গিয়েছে। সেখানে নির্মাণকার্যও শুরু হয়ে গিয়েছে।
এর প্রেক্ষিতে আদালত জানতে চায়, ‘‘ট্রামওয়েজের জমি যখন বেসরকারি সংস্থার কাছে বিক্রি করা হয়েছিল তখন কেউ প্রতিবাদ করেননি কেন? দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর তরফ থেকে হেরিটেজ তকমা পাওয়ায় রাজ্যের মানুষ গর্বিত। ট্রামও যদি মসৃণভাবে, আধুনিকতার সঙ্গে চলে তাহলেও মানুষ গর্ববোধ করবেন।’’ রাজ্য জানায়, ‘‘রাজ্যও ট্রাম সংরক্ষণ করতে চায়। তবে কীভাবে করা যায় সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।’’ ব্যক্তিগত মত হিসাবে এজি সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ট্রামগুলি আয়রন ও স্টিল বডির করা গেলে ভাল হয়।’’
[আরও পড়ুন: নেহরু নন, যোগের জনপ্রিয়তার মূলে মোদিই! দলের উলটো সুর শশী থারুরের]
এরপরই প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘টয় ট্রেন যে ভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে (দার্জিলিং-হিমালয়ান রেলওয়ে), সেই ভাবে কলকাতার ট্রাম সংরক্ষণ করা যায়। ট্যুরিজমকে প্রাধান্য দিলে কলকাতার হেরিটেজও বাঁচানো যাবে, সরকারের রোজগারও হবে।’’ বিচারপতির মতে, ‘‘সেক্ষেত্রে এখন ৮টি বাতানুকূল ট্রাম আছে, সেটা বাড়িয়ে ২০ করা যেতে পারে। ভাড়া বাড়ানো যেতে পারে। বিশেষ পরিষেবা চালু করা যেতে পারে। ট্রাম পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের। এসব পদক্ষেপ করলে আরও পর্যটক আসবে।’’