কুমারেশ হালদার: না, কিছুতেই রোখা গেল না যশোহর রোডে শতাব্দী প্রাচীন গাছগুলির ‘মৃত্যুদণ্ডে’র নির্দেশে৷ উচ্চ আদালতের রায়ে কাটা পড়ছে প্রায় ৪০০টি গাছ৷ মানবাধিকার ও পরিবেশ কর্মীদের লাগাতার ১৮ মাসের চেষ্টা ব্যর্থ করে রেল ওভার ব্রিজ নির্মাণের জন্য শর্তসাপেক্ষে শতাব্দী প্রাচীন ৩৫৬টি গাছ কাটার নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট৷ একটি গাছের বদলে পাঁচটি গাছ লাগানোর নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত৷ তবে, সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার পথ খোলা রেখেই আগামী তিন সপ্তাহ গাছ কাটার উপর স্থগিতাদেশ বহাল রাখার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট৷
আজ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাসে ছিল যশোহর রোড মামলার শুনানি৷ মামলার শুনানিতে রেল ওভার ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ৩৫৬টি গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে আবেদন জানান রাজ্যের আইনজীবী৷ দাবি করেন, রাস্তা সংস্কারের কাজ থমকে থাকায় ব্যাহত হচ্ছে সীমান্ত বাণিজ্য৷ যশোহর রোডে দিনে দিনে বাড়ছে যানজট৷ এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে ওভার ব্রিজ নির্মাণের অত্যন্ত প্রয়োজন বলেও আদলতে জানান রাজ্যের আইনজীবী নীলোৎপল চট্টোপাধ্যায়৷ রাজ্যের আইনজীবীর সওয়ালের বিরোধিতা করেন মামলাকারীদের আইনজীবী৷ যশোহর রোডে প্রাচীন গাছগুলির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করেন মানবাধিকার সংগঠনের আইনজীবীরা৷ এই গাছগুলিকে সংরক্ষণ করে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণার দাবিও জানানো হয়৷
[মহিলা সম্পর্কিত আক্রোশেই হাওড়ায় খুন বন্ধন ব্যাংকের কর্মী!]
দুই পক্ষের আইনজীবীদের সওয়াল জবাব শোনার পর কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসুর ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেন, জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ ও পরিবেশ রক্ষা দুই গুরুত্বপূর্ণ৷ বারাসত থেকে বনগাঁ পেট্রাপোল সীমান্ত পর্যন্ত ৬১কিলোমিটার পথের পাঁচটি ওভার ব্রিজ নির্মাণের জন্য ৩৫৬টি গাছ কাটার অনুমতি দেয় আদালত৷ সেই সঙ্গে বেশ কিছু শর্তও চাপিয়ে দেওয়া হয়৷ একটি গাছ কাটলে পাঁচটি গাছ লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়৷ এছাড়াও মামলাকারীদের পরবর্তী আইনি লড়াইয়ের পথ প্রশস্ত করে আগামী তিন সপ্তাহ পর্যন্ত গাছ কাটার উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়৷ যদি, মামলাকারীরা হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন, তাহলে গাছ কাটার উপর স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে বলেও রায়ে ইঙ্গিত দেয় কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসুর ডিভিশন বেঞ্চ৷
গাছ কাটার রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আদৌ যাবেন পরিবেশ কর্মীরা? মামলাকারী সংগঠনের অন্যতম সদস্য মানবাধিকার কর্মী দেবাশিস রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘হাই কোর্টের অর্ডার কপি আসার পর গোটা বিষয়টি পরিষ্কার হবে৷ এই রায়ের ভিত্তিতে পরবর্তী কৌশল নির্ধারণ করতে আমরা (এপিডিআর) বৈঠকে বসছি৷ সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি৷ তবে, গাছের মৃত্যু রুখতে আমরা আমাদের সর্বস্ব দিয়ে লড়াই চালিয়ে গিয়েছি৷ আগামিদিনেও গাছের স্বার্থে লড়াই চলবে৷’’
[মহার্ঘ ভাতা সরকারি কর্মীদের আইনি অধিকার, স্বীকৃতি হাই কোর্টের]
এদিনের এই রায় প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী বাপ্পা ভুঁইয়া সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘হাই কোর্টের রায়ে আমরা আশাহত৷ তবে, আমরা লড়াইয়ের মঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছি না৷ আদালতকে আমরা বুঝিয়েছিলাম৷ কিন্তু ব্যর্থ৷ তবে, দীর্ঘ ১৮ মাসের লড়াই এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না৷’’ যশোহর রোড সম্প্রসারণের জেরে রাস্তার দু’ধারের ৪০৩৬টি গাছ কাটার আশঙ্কা প্রকাশ করে ২০১৭ সালের মার্চে দায়ের হয় দু’টি জনস্বার্থ মামলা৷ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে স্থগিত হয়ে যায় যশোহর রোডের গাছ কাটার প্রক্রিয়া৷ গাছ কাটা হলে পরিবেশের উপর প্রভাব পড়তে পারে বলেও মামলাকারীদের তরফে আদালতে জানানো হয়৷ যশোহর রোডে প্রাচীন গাছগুলি কাটা হলে বিকল্প ব্যবস্থা জানিয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দিতে রাজ্যকে নির্দেশ দেয় আদালত৷ প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করে মামলাকারীদের তরফে কোর্ট অফিসার নিয়োগ করা হয়৷ আদালতের নির্দেশে বিকল্প গাছ লাগানোর বিষয়ে একটি রিপোর্টও পেশ করে রাজ্য৷ রাজ্যের দেওয়া বিকল্প প্রস্তাব খতিয়ে দেখতে বিশেষ কমিশন গঠন করে আদালত৷ গাছগুলির পরিদর্শনে গিয়ে রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেন দু’ই কোর্ট অফিসার৷পরে দীর্ঘ মামলার যবনিকা টেনে গাছের মৃত্যুদণ্ডের পক্ষেই রায় দেয় উচ্চ আদালত৷
The post হাই কোর্টের রায়ে কাটাই পড়ছে যশোহর রোডের শতাব্দী প্রাচীন ৩৫৬টি গাছ appeared first on Sangbad Pratidin.