দীপালি সেন: উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সেমেস্টার পদ্ধতিতে একটি বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হলেও বছর নষ্ট হবে না। পরবর্তী সেমেস্টারেই ওই বিষয়ের সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা দিয়ে মিলবে উত্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ। তবে, তা বিজোড় তথা প্রথম ও তৃতীয় সেমেস্টারের জন্যই প্রযোজ্য। সেমেস্টারভিত্তিক পাস-ফেল প্রথা চালুর হাত ধরেই আসছে এই সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার ব্যবস্থা। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ জানিয়েছে, একটি সেমেস্টারে পাশ করতে গেলে পড়ুয়াকে ৫টি বিষয়ের প্রতিটিতেই ৩০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। এক সেমেস্টারের পাশ করলেই পরবর্তী সেমেস্টারে উন্নীত হতে পারবেন সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থী। আবার কোনও একটি বিষয়ে নির্ধারিত পাশ নম্বরের থেকে পাঁচ শতাংশ কম নম্বর পেলেও পাশ করার বিশেষ সুযোগ থাকছে।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণি থেকে চালু হচ্ছে সেমেস্টার পদ্ধতি। ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে দ্বাদশ তথা উচ্চ মাধ্যমিকে। বৃহস্পতিবার সেমিস্টার পদ্ধতির খুঁটিনাটি নিয়ে বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সংসদ। সেখানেই বলা হয়েছে, প্রতিটি সেমিস্টারে পাশ-ফেল থাকছে। পাস করতে গেলে প্রতি সেমেস্টারে পাঁচটি বিষয়ে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ নম্বর পাওয়া বাধ্যতামূলক। আলাদাভাবে প্র্যাকটিক্যাল/প্রজেক্টেও পেতে হবে ৩০ শতাংশ নম্বর। বাধ্যতামূলক প্রতিটি ভাষা বিষয়েও পাস করা। কোনও পরীক্ষার্থী এক বা একাধিক বিষয়ে নির্ধারিত পাশ নম্বর না পেলে থাকছে সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার ব্যবস্থা। দুই শ্রেণির ক্ষেত্রে সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার নিয়ম পৃথক। একাদশ শ্রেণির প্রথম সেমেস্টারে কোনও বিষয়ে অসফল হলে, দ্বিতীয় সেমেস্টারে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পরীক্ষার দিনেই দ্বিতীয় অর্ধে সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার সুযোগ পাবে পরীক্ষার্থী। দ্বিতীয় সেমেস্টারের সব বিষয়ের পাশাপাশি সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে বছর নষ্ট হবে না পরীক্ষার্থীর। তবে, যদি দ্বিতীয় সেমেস্টারের কোনও বিষয়ে পরীক্ষার্থী পাশ না করতে পারে বা প্রথম সেমিস্টারের কোনও ব্যাকলগ থেকে যায়, তাহলে আর সুযোগ মিলবে না। সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীকে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে আবার নতুন করে একাদশের প্রথম ও দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা দিতে হবে। সংসদ সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যের স্পষ্ট বক্তব্য, “দ্বাদশ শ্রেণির তৃতীয় (প্রথম) সেমেস্টারে ভর্তি হতে গেলে পরীক্ষার্থীর একাদশ শ্রেণিতে কোনও বিষয়ে ব্যাকলগ থাকা চলবে না।”
[আরও পড়ুন: শুরু পালটা মার! ইরানে মিসাইল হামলা ইজরায়েলের, নিশানায় পরমাণু কেন্দ্র?]
উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে প্রথম সেমেস্টারে কোনও বিষয়ে অসফল হলে দ্বিতীয় (চতুর্থ) সেমেস্টারে ওই বিষয়ে সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ মিলবে। উত্তীর্ণ না হতে পারলে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম সেমিস্টারে ওই বিষয়ের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবে পরীক্ষার্থী। আবার দ্বিতীয় সেমেস্টারে কোনও বিষয়ে পাস না করতে পারলে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে উচ্চমাধ্যমিকের দ্বিতীয় সেমিস্টারে ওই বিষয়ের পরীক্ষাটি দিতে হবে পরীক্ষার্থীকে। না পারলে আবার পরের বছর। এভাবেই ধারাবাহিকভাবে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকবে। তবে, রেজিস্ট্রেশনের বছর-সহ মোট সাত বছরের মধ্যে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে সংখ্যার কোনও বাঁধা নেই। অর্থাৎ কোনও পরীক্ষার্থী যদি বিজোড় সেমিস্টারে দুই, তিন বা সর্বাধিক ছয়টি বিষয়েও অনুত্তীর্ণ হন বা পরীক্ষাতে অংশগ্রহণ না করতে পারেন, তাহলে জোড় সেমিস্টারে ওই বিষয়গুলির সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকবে। তবে, মার্কশিটে তার প্রতিফলন থাকবে।
সংসদ জানিয়েছে, আবশ্যিক বিষয়গুলির মধ্যে কোনও একটিতে নির্ধারিত পাস নম্বরের পাঁচ শতাংশ কম নম্বর পেয়েছে, এমন পরীক্ষার্থী অন্য আবশ্যিক বিষয়ে বেশি নম্বর পেয়ে থাকলে সেখান থেকে নম্বর যোগ করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ঘাটতি পূরণ করা হবে। ফলে, সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা না দিয়েই ওই বিষয়ে পাস করে যাবে পরীক্ষার্থী। বাংলা, ইংরেজির মতো আবশ্যিক বিষয়গুলির ক্ষেত্রেও এই সুবিধা প্রযোজ্য। আবার অপশনাল ইলেকটিভ বিষয়ে পাস। কিন্তু, পাঁচটি আবশ্যিক বিষয়ের মধ্যে কোনও একটিতে অসফল। সেক্ষেত্রে অপশনাল ইলেকটিভ বিষয়টিকে আবশ্যিক ও আবশ্যিক বিষয়টিকে অপশনাল ইলেকটিভ করে দেওয়া হবে। এই সুযোগের আওতায় থাকবে না আবশ্যিক ভাষা বিষয়গুলি।
[আরও পড়ুন: প্রথম দফায় ভোট এক লোকসভায় অর্ধেক এলাকায়, বাকি দ্বিতীয় দফায়, নজিরবিহীন ভোট মণিপুরে]
দুই শ্রেণির প্রথম (বিজোড়) সেমিস্টারের পরীক্ষা হবে সেপ্টেম্বর মাসে। একাদশের দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা হবে পরের বছর মার্চে। উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় তথা চতুর্থ সেমিস্টারের পরীক্ষা হবে এপ্রিল মাসে। বিজোড় সেমিস্টারগুলির পরীক্ষা হবে বিভিন্ন ধরনের এমসিকিউ-এর উপর। যার উত্তর পরীক্ষার্থীদের ওএমআর শিটে চিহ্নিত করতে হবে। এর জন্য ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট সময় বরাদ্দ করা হয়েছে। জোড় সেমিস্টারগুলির পরীক্ষা হবে সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী ও বর্ণনামূলক প্রশ্নে। ২ ঘণ্টা ধরে হবে এই পরীক্ষাগুলি। একাদশের প্রশ্নপত্র তৈরি, উত্তরপত্র সরবরাহ-সহ পরীক্ষা পরিচালনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব স্কুলগুলির। আর আগের মতোই সাপ্লিমেন্টারি সহ দ্বাদশ তথা উচ্চমাধ্যমিকের দু’টি সেমিস্টারের পরীক্ষা সম্পূর্ণভাবে পরিচালনা করবে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। যেহেতু উচ্চমাধ্যমিকে দু’টি পরীক্ষা হচ্ছে, তাই বছরে দু’বার ফলপ্রকাশ হবে বলে জানিয়েছেন সংসদ সভাপতি। তবে, প্রথমটি অর্থাৎ ওএমআরভিত্তিক পরীক্ষাটির ফলাফল শুধুমাত্র অনলাইনে প্রকাশ করা হবে। এবং দ্বিতীয় সেমিস্টারের পর দু’টি সেমিস্টার মিলিয়ে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হবে।