বিক্রম রায়, কোচবিহার: স্কুলের গণ্ডি পেরতে না পেরতেই কেরিয়ার গোছানোর কাজ শুরু করে দেয় কৈশোর শেষ হওয়া ছেলেমেয়েরা। বাড়ি বা তার আশপাশের পরিবেশে যে ধরনের পেশার (Profession) মানুষজনকে বেশি দেখে, নিজের পেশা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়ে তাদের উপর। সেদিক থেকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আমলা, পুলিশ, গবেষক – এ ধরনের পেশার কথা শোনা যায়। আর উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশের পর তো সফল ছাত্রছাত্রীদের এই প্রশ্নের মুখে পড়তেই হয়। সেক্ষেত্রে পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজেদের পছন্দ অগ্রাধিকার পায় অবশ্যই। তবে এবছর উচ্চমাধ্যমিকে (Higher Secondary 2022) রাজ্যে প্রথম হওয়া ছাত্রী ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে যা বললেন, তা সত্যিই ব্যতিক্রমী। কোচবিহারের ছাত্রী অদিশার পরবর্তী লক্ষ্য নিয়ে প্রশ্ন করতেই স্বতস্ফূর্তভাবে তিনি জানালেন, সৎ পথে রোজগার করে পথশিশুদের জন্য কিছু করতে চান। এই বয়সে এমন জনসেবায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার কথা বিশেষ শোনা যায় না।
অদিশা দেবশর্মা কোচবিহারের (Cooch Behar) দিনহাটা শনিদেবী জৈন হাই স্কুলের ছাত্রী। এবারের উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম হয়েছেন তিনি। পেয়েছেন ৪৯৮ নম্বর, শতকরা হিসেবে ৯৯.৬ শতাংশ। এহেন চমকপ্রদ ফলাফলের পর প্রত্যাশিত ছিল যে অদিশা ডাক্তারি কিংবা গবেষণার দিকে ঝুঁকবেন। কিন্তু সহজ-সরল মেয়েটি শোনালেন অন্য কথা। প্রথাগত পেশার প্রতি কোনও টানই নেই তাঁর। বরং অন্তর থেকে কিছু করতে চান। পথশিশুদের (Street Children) নিত্যদিনের সমস্যা, সংগ্রাম অদিশাকে ভাবিয়েছে, কাঁদিয়েছে। আর তাই যখন তাঁর কাছে নিজের মতো কোনও কাজ করার সুযোগ মিলেছে, তখন পথশিশুদের পাশে দাঁড়ানোর কথাই তিনি প্রথমে ভেবেছেন।
[আরও পড়ুন: কুতুব মিনারে হিন্দু ও জৈন মন্দির পুনরুদ্ধারের মামল খারিজ করল দিল্লি আদালত]
উচ্চমাধ্য়মিকে চোখধাঁধানো ফলাফলের পর তাই অদিশার উচ্চাকাঙ্ক্ষা তেমন নেই। ভবিষ্যতে কী হতে চান প্রথমা? তিনি জানালেন, ”সৎ পথে রোজগার করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। আর পথশিশুদের জন্য কাজ করতে চাই। ওদের যখন দেখি, খুব খারাপ লাগে। তাই আমি ওদের জন্য কিছু করতে চাই।” নিজের মনের কথা এভাবে প্রকাশ করেই অদিশা বুঝিয়ে দিলেন, তিনি শিখেছেন নিজের মতো করে ভাবতে, নিজের মতো করে তৈরি হতে। এভাবেই তো প্রকৃত মানুষ তৈরি হয়। পড়াশোনা, অনেক ঘাম ঝরিয়ে নম্বর হয়তো অনেকেই পান, কিন্তু ভাবনা? তা তো একান্তই আপন। কোনও বাহ্য়িক প্রভাব কিংবা অন্য কোনও চালিকা শক্তিতে তার বিশেষ পরিবর্তন হয় না।