সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জীবনাবসান হল ইতিহাসবিদ রণজিৎ গুহের (Ranajit Guha)। আগামী মে মাসেই তাঁর ১০০ বছর পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই মাইলফলক ছোঁয়ার ঠিক আগেই প্রয়াণ হল কিংবদন্তি মানুষটির। নিম্নবর্গের ইতিহাস সাধনার সম্রাট মনে করা হত তাঁকে। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা উডসের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। মৃত্যুর সময়ে পাশে ছিলেন বিদেশিনী স্ত্রী মেখঠিল্ড।
১৯২৩ সালের ২৩ মে পূর্ববঙ্গের (অধুনা বাংলাদেশ) বরিশালের সিদ্ধকাটিতে জন্ম রণজিৎ গুহর। কলকাতায় এসে জড়িয়ে পড়া বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে। ছিলেন সিপিআইয়ের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। পাশাপাশি প্রেসিডেন্সি কলেজে ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনাও চলতে থাকে। ১৯৪৭ সালে বিদেশে পাড়ি দেন বিশ্ব ছাত্র সম্মেলনে যোগ দিতে। প্রথমে প্যারিস ও পরে সাইবেরিয়া থেকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে চিনে যান। ১৯৫৬ সালে দেশে ফেরার পর দল ছেড়ে দেন মতপার্থক্যের কারণে। ১৯৫৯ সালে শুরু হয় তাঁর স্থায়ী প্রবাসজীবন। সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে রিডার পদে যোগ দেন তিনি।
[আরও পড়ুন: ‘দ্য কেরালা স্টোরি ছবির মুক্তি আটকানো হোক!’, কেরল সরকারকে অনুরোধ কংগ্রেসের]
সারা জীবন অধ্যাপনাই করেছেন। সেই সঙ্গে করে গিয়েছেন নিরন্তর জ্ঞানচর্চা ও ইতিহাস সাধনা। তাঁর লেখা ‘এলিমেন্টারি অ্যাসপেক্টস অফ পিজান্ট ইনসার্জেন্সি ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া’র মতো আকরগ্রন্থ লিখে তিনি প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর আরেক বই ‘আ রুল অফ প্রপার্টি’ও (যা তাঁর গবেষণাপত্র) বিপুল ভাবে সমাদৃত। এই লেখার উৎস ছিল তাঁরই লেখা ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সূত্রপাতে’রই সম্প্রসারণ। লিখেছেন আরও বহু গ্রন্থ।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, তিনি ‘বিশ শতকের সবচেয়ে সৃজনশীল ভারতীয় ঐতিহাসিক।’গায়ত্রী স্পিভাক চক্রবর্তী, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, দীপেশ চক্রবর্তী, জ্ঞানেন্দ্র পান্ডের মতো জ্ঞানচর্চায় বিশ্বখ্যাত বাঙালিরা ছিলেন তাঁরই অনুগামী। এমন এক মানুষের প্রয়াণে তাই বাংলা তথা সারা বিশ্বের সাংস্কৃতিক চর্চার জগতে শোকের ছায়া।
[আরও পড়ুন: ‘আমাদের নিজের মতো থাকতে দিন’, ব্রেকআপ গুঞ্জনে মুখ খুললেন ঋতাভরীর প্রেমিক তথাগত]
তাঁর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, ”প্রবাদপ্রতিম ঐতিহাসিক রণজিৎ গুহর মৃত্যুতে আমি আমার গভীরতম শোক প্রকাশ করছি। অস্ট্রিয়ায় তাঁর বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন, মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৯ বছর। রণজিৎ গুহ ভারতের কৃষক আন্দোলন নিয়ে সূদূরপ্রসারী কাজ করেছেন। তিনি নিম্নবর্গীয় ইতিহাস চর্চার ধারা গড়ে তোলেন এবং বেশ কিছু সমমনোভাবাপন্ন তরুণ ঐতিহাসিককে নিয়ে একটি শক্তিশালী ঐতিহাসিক গোষ্ঠী গড়ে তোলেন। এই নিম্নবর্গীয় ইতিহাস চর্চার প্রভাব পড়ে সারা পৃথিবীতে। ঐতিহাসিক গুহ পৃথিবীর নানা জায়গায় পড়িয়েছেন, নানা জায়গায় তাঁর ছাত্র ও অনুরাগীরা আছে। ঐতিহাসিক গুহর প্রয়াণে জ্ঞানচর্চার পৃথিবীতে অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি রণজিৎ গুহর স্ত্রী মেখঠিল্ড গুহ সহ তাঁর সকল আত্মীয় পরিজন, ছাত্রছাত্রী ও অনুরাগীদের সকলকে আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।”