অর্ণব আইচ: স্কুলের সামনে পার্কিং ও হর্ন বাজানো ঘিরে গোলমাল। বেআইনি পার্কিং ও স্কুলের সামনে হর্ন বাজানোর প্রতিবাদ করায় মাশুল দিতে হল স্কুলেরই এক শিক্ষিকার ছেলেকে। তাঁর মুখে ধারালো ছুরির কোপ মারল স্কুলেরই এক ছাত্রের বাড়ির লোক। আহত তরুণের থুতনি ও মুখের অন্য জায়গায় মোট ১১টি সেলাই করতে হয়েছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত জিশান আলমকে গ্রেপ্তার করেছে পার্ক স্ট্রিট থানার পুলিশ (Park Street Police Station)। ধরা পরার সময় সে ভুল ঠিকানা দিয়ে পরিচয় গোপন করার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সকালে এই ঘটনাটি ঘটে। মল্লিকবাজারের কাছে পার্ক লেনে একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা প্রত্যেকদিন গাড়ি করেই স্কুলে যান। তিনি বেনিয়াপুকুর রোডের একটি বহুতল আবাসনের বাসিন্দা। মূলত তাঁর ছেলেই তাঁকে নিয়ে আসেন স্কুলে। স্কুলের সামনে রাস্তাটি অপরিসর। এদিন সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ শাহজ আবেদিন তাঁর মাকে গাড়িতে করে পৌঁছে দেন স্কুলে। গাড়িটি স্কুলের কাছে দাঁড় করাতে গিয়ে দেখেন, রাস্তার উপর দাঁড় করানো রয়েছে একটি স্কুটি। ওই তরুণ গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বেআইনিভাবে পার্কিং করে রাখা স্কুটি সরাতে বলেন।
[আরও পড়ুন: রাজ্যপালের ডাকে দার্জিলিংয়ের রাজভবনে মমতা, ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ অসমের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও]
জানা গিয়েছে, ওই স্কুটি করে পরিবারের এক শিশুকে স্কুলে ছাড়তে আসে জিশান আলম। কেউ স্কুটিটি না সরানোয় ওই তরুণ হর্ন বাজান। কিছুক্ষণ পর জিশান সেখানে এসে গাড়িটি সরাতে বলে পালটা স্কুটির হর্ন বাজাতে থাকে বলে অভিযোগ। জানায়, সে এখনই স্কুটি সরাবে না। শাহজ এই বেআইনি পার্কিংয়ের প্রতিবাদ জানান। স্কুলের সামনে হর্ন বাজানো ও বেআইনি পার্কিং ঘিরে বচসা চরমে ওঠে। শাহজ গাড়ি থেকে নেমে এলে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়। স্কুল শুরু হওয়ার সময় তাঁর মা ভিতরে চলে যান। ছেলেও গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে আসেন।
অভিযোগ, এরপর স্কুটি করে তাঁর গাড়ির পিছু নেয় অভিযুক্ত জিশান। পার্ক স্ট্রিট ও রফি আহমেদ কিদওয়াই রোডের সংযোগস্থলে তাঁর গাড়িটি স্কুটি দিয়ে আটকায় সে। গাড়ি থেকে তরুণ নেমে এলে সে প্রথমে ফের বচসা শুরু করে। এর পর তারই জেরে স্কুটির পিছনের অংশ থেকে সে বের করে একটি ধারালো ছুরি। রাস্তার উপরই তাঁকে কোপাতে থাকে সে। তাঁর মুখ থেকে বের হতে থাকে রক্ত। বেগতিক বুঝে পালিয়ে যায় সে। শাহজ ফোন করে ঘটনাটি তাঁর মাকে জানান। ওই অবস্থায় কোনওমতে তিনি পৌঁছন মিন্টো পার্কের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই তাঁর মুখে সেলাই করা হয়। পরিবারের লোকেরা জানান, ওই তরুণ ভাল করে কথা বলতে পারছেন না। শুধু তরল খাবার খেতে পারছেন। খবর পেয়ে মা হাসপাতালে চলে আসেন।
[আরও পড়ুন: দার্জিলিংয়ের রাজভবনে রাজ্যপালের ‘অতিথি’ অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, কিন্তু কেন?]
চিকিৎসার পর শিক্ষিকা তাঁর ছেলেকে নিয়ে পার্ক স্ট্রিট থানায় (Park Street Police Station) যান। পুলিশ তদন্ত শুরু করে সিসিটিভির মাধ্যমে স্কুটির নম্বরটি জোগাড় করে। সেই সূত্র ধরেই তল্লাশি চালিয়ে জিশানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ধরা পড়ার পর সে প্রথমে ভুল পরিচয় দিয়ে বিভ্রান্ত করতে থাকে। যদিও পরে তার আসল পরিচয় মেলে। তার বাড়ি তালতলা এলাকায়। তার কাছ থেকে ধারালো অস্ত্রটি উদ্ধার হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এলাকায় আগে কোনও অভিযোগ রয়েছে কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।