অভিরূপ দাস: করোনা আক্রান্ত ক্যানসার রোগী ৪০ দিন ভর্তি ছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে (Calcutta Medical College)। করোনামুক্ত হয়েছেন শুনে হাসপাতাল থেকে তাঁকে বাড়িতে আনতে গিয়েছিলেন পরিবারের লোকেরা। কিন্তু রোগী নেই। অনেক পরে খবর এল রোগীর দেহ মর্গে! এই ঘটনায় হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে মৃতের পরিবার। বেলগাছিয়া এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ পাল। ৫৪ বছরের প্রদীপবাবু মুখের ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। তাঁর কেমোথেরাপি চলছিল রাজারহাটের টাটা মেডিক্যাল সেন্টারে। আচমকাই তার করোনা (COVID-19) ধরা পড়ে। এরপর ৩০ মে তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লকে ভরতি করানো হয়। শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হওয়ায় গত ৬ জুলাই সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লক থেকে গ্রিন বিল্ডিংয়ে ট্রান্সফার করা হয়।
এরপরের ঘটনাই অদ্ভুত। প্রদীপবাবুর স্ত্রীর কথায়, “৭ জুলাই হাসপাতাল থেকে ফোন আসে। বলা হয়, আমার স্বামী করোনামুক্ত। আমরাও ওঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়ার জন্য বলতে থাকি।’ হাসপাতালের তরফ থেকে বলা হয়, শুক্রবার ছুটি দেওয়া হবে। এরপর শুক্রবার হাসপাতালে এসে রোগী খুঁজতে গিয়ে নাকাল হন পরিবারের লোকেরা। কোত্থাও নেই প্রদীপ পাল। বারবার তার মোবাইলে ফোন করা হলে তার ফোন বেজে যেতে থাকে। প্রদীপবাবুর স্ত্রীর দাবি, “অনেক জিজ্ঞাসা করলে ওয়ার্ড থেকে চিকিৎসকেরা জানান উনি এখন ঘুমাচ্ছেন।” অনেক খোঁজ খবরের পর দেখা যায় মর্গে পরে রয়েছে প্রদীপবাবুর প্রাণহীন দেহ। চাপে পড়ে চিকিৎসকরা বলেন ভুল খবর গিয়েছে বাড়ির লোকের কাছে। আদতে মারা গিয়েছেন তিনি। যদিও তা করোনায় নয়। স্বাভাবিকভাবেই। ভুল করে সেই দেহ করোনায় মৃতদের দেহর সঙ্গে মিশে মর্গে চলে গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: রাজ্যের একাধিক সরকারি হাসপাতালে ঘুরেও মিলল না চিকিৎসা, মৃত্যু করোনা আক্রান্ত তরুণের]
এরপর মৃতদেহ চাইতে গেলেও শুরু হয় বিপত্তি। হাসপাতালের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেহ দেওয়া যাবে না। কারণ জানতে চাইলে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, মর্গে ওই দেহ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন করোনা আক্রান্তর মৃতদেহ রয়েছে ওই দেহ আর দেওয়া সম্ভব নয়। ওর থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। প্রদীপবাবুর পরিবারের অভিযোগ, করোনামুক্ত হওয়ার পর অযথা ছাড়তে দেরি করেছে হাসপাতাল। চিকিৎসার গাফিলতির কারণেই মারা গিয়েছেন রোগী। মৃত রোগীর সম্পর্কে ভুল খবর দেওয়ার জন্য কাঠগড়ায় ওয়ার্ড বয়রা। মেডিক্যাল কলেজে ভরতি অনেক রোগীর পরিবারই জানিয়েছেন, প্রায়শই এক রোগীর খবর অন্য রোগীর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছেন ওয়ার্ড বয়রা। এমনকী মৃতদেহ বদলের ঘটনাও ঘটছে। এই ঘটনায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সমন্বয়ের অভাব ফের প্রকাশ্যে চলে এল।
[আরও পড়ুন: দিনে লক্ষাধিক নমুনা পরীক্ষা করতে সুইডেন থেকে ৮টি বিশেষ যন্ত্র আনছে রাজ্য]
The post হাসপাতাল বলল করোনামুক্ত, পরিবার গিয়ে দেখল রোগীর দেহ মর্গে, চরম গাফিলতি মেডিক্যালে appeared first on Sangbad Pratidin.